উদ্যোক্তা হতে হলে যে বইগুলো পড়া উচিৎ
- রবিউল কমল
নিজের স্বপ্ন নিয়ে যাঁরা মাঠে নামেন তাঁরাই উদ্যোক্তা। নিশ্চিত জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে তাঁরা এগিয়ে যান অনিশ্চয়তার দিকে। স্বপ্নই তাঁদের পথ দেখায়। তবে হঠাৎ করে কেউ উদ্যোক্তা হন না। এর পেছনে থাকে কঠোর অধ্যবসায়, সময়ের সঠিক ব্যবহার ও একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের অভিপ্রায়।স্টিভ জবস, বিল গেটস বা জেফ বেজোস এঁরাই আজকের দিনের উদ্যোক্তাদের কাছে অনুসরণীয়। পৃথিবী বদলে দেওয়া প্রযুক্তি তৈরি করেছেন তাঁরা। মানুষের জীবনকে তাঁরা এমনভাবে বদলে দিয়েছেন যে তাঁদের সময়ে যেটা কেউ ভাবতেই পারেননি।
সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বাকিদের থেকে কিছুটা এগিয়ে তো থাকতেই হবে। আর সেজন্য দরকার প্রচুর পড়াশোনা। চারপাশ থেকে শেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তারা শেখেন বই পড়ে। এমনকি বিল গেটস শত ব্যস্ততার মাঝে এখনো নিয়মিত বই পড়েন। উদ্যোক্তার পড়া উচিত এমন ১০টি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে বাণিজ্য সাময়িকী বিজনেস ইনসাইডার।
১. দ্য ফাউন্টেন হেড : আয়ান রান্ড
বিলিওনিয়ার মার্ক কিউবান বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ‘এই বই সব উদ্যোক্তার জন্যই পড়া উচিত’। ব্রুকলিন ব্রিজ ভেঞ্চার্সের পার্টনার চার্লি ও’ডেনেলেরও প্রিয় বই এটা। তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের কেন স্বপ্ন এবং সাহস থাকতে হয় সেটা অন্য কোনো বইয়ে এত সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে কি না আমি জানি না। কে আপনাকে সাহায্য করবে সেটা না ভেবে কে আপনাকে বাধা দেবে সেটাই উদ্যোক্তাদের মনে রাখতে হবে।’
২. দ্য এফেক্টিভ এক্সিকিউটিভস : পিটার ড্রাকার
অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস তাঁর সিনিয়র ম্যানেজারদের এই বইসহ আরো দুটি বই পড়ার পরামর্শ দেন। অফিস ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছেন লেখক পিটার ড্রাকার। এ ছাড়া নির্বাহীদের সময় ব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।
৩. দ্য ইনোভেটরস ডিলেমা : ক্ল্যাটন ক্রিস্টেনসন
জেফ বেজোসের পছন্দের আরেকটি বই। এটিও তিনি কর্মীদের পড়ার পরামর্শ দেন। উদ্যোক্তাদের খুবই পছন্দের বই এটি। সামাজিক উদ্যোক্তা স্টিভ ব্ল্যাংক বইটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠান কেন ডাইনোসরের মতো আচরণ করে সেটার একটা যুক্তিসংগত কারণ ও উত্তর দিয়েছেন ক্ল্যাটন। উদ্যোক্তাদের অবশ্যই বইটি পড়া উচিত। তাহলে বাজারে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় সেটা তাঁরা বুঝতে পারবেন।’
৪. বিজনেস অ্যাডভেঞ্চার্স : জন ব্রুকস
বিল গেটসের খুবই পছন্দের বই। ১৯৯১ সালে ওয়ারেন বাফেট এই বই তাঁকে পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বইটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘সব ব্যবসাতেই উদ্যোক্তাদের কিছু শক্তি ও দুর্বলতা থাকে। তাদের সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয়। কিন্তু বিজনেস অ্যাডভেঞ্চার্স বইটি সব পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের কাজে লাগবে।’
৫. বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন : ওয়াল্টার ইসাকসন
গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ও বিলিওনিয়ার এলোন মুস্কের পছন্দের বই এটি। বইটি সম্পর্কে মুস্ক বলেন, ‘বইটা পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন ফ্রাঙ্কলিন কেন উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন। বাড়ি থেকে পালিয়েও গিয়েছিলেন তিনি।’
ওয়াল্টার ইসাকসনের লেখা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের জীবনী ‘আইনস্টাইন : হিজ লাইফ অ্যান্ড দ্য ইউনিভার্স’ও পড়ার পরামর্শ দেন মুস্ক।
৬. থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ : ন্যাপোলিওন হিল
ফ্যাশন হাউস ফুবুর সহপ্রতিষ্ঠাতা ডায়মন্ড জন বইটি সম্পর্কে বলেন, ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ – আমার জীবন বদলে দিয়েছে। এই বই আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে নিজের লক্ষ্য ঠিক করতে হয়। আমাদের বেশির ভাগ মানুষেরই লক্ষ্য ঠিক থাকে না বলে আমরা সাফল্য পাই না।’
৭. কনশাস ক্যাপিটালিজম : জন ম্যাকি ও রাজ সিসোদিয়া
দ্য কনটেইনার স্টোরের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কিপ টিনডেলের মতে উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য এটা অবশ্যই পাঠ্য বই। কিপ টিনডেল বলেন, ‘সবাই মুনাফা চায়, কেউ লোকসান চায় না। বিজনেস স্কুলগুলো এ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছে, ছাত্রদের পড়িয়েছি কিন্তু এই বই সবচেয়ে ভালোভাবে মুনাফা তুলে আনার বিষয়টি বর্ণনা করেছে।’
৮. অ্যাজ আ মেন থিংকেথ : জেমস অ্যালেন
হেজ ফান্ডের এক্সিকিউটিভ কোচ টনি রবিনস বলেন, ‘আমি অ্যাজ আ ম্যান থিংকেথ বইটি ১২ বারেরও বেশি পড়েছি। বইটির ভাষা সাবলীল এবং খুব নির্দিষ্টভাবে বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে এতে।’
৯. থিংস হিডেন সিন্স দ্য ফাউন্ডেশন অব দ্য ওয়ার্ল্ড : রেনে গিরার্ড
ফ্রেঞ্চ দার্শনিক রেনে গিরার্ডের এই বইটি খুব পছন্দের পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্রাবস্থায় বইটি প্রথম পড়েছিলেন পিটার থিয়েল। তাঁর মতে, ‘এই বই থেকে দুটি জিনিস শেখার আছে। প্রথমত প্রতিদ্বন্দ্বীদের কথা ভাবতে গিয়ে অনেক সময় উদ্যোক্তারা নিজেদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যান। দ্বিতীয়ত প্রতিযোগিতা সবসময় আপনার যোগ্যতার পরিমাপক নয়।’
১০. সিউরলি ইউ আর জোকিং মিস্টার ফেনিম্যান : রিচার্ড পি. ফেনিম্যান
গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সার্গেই ব্রিন বলেছেন, ‘রিচার্ড ফেনিম্যানের এই আত্মজীবনী আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে। এই কারণেই প্রযুক্তি এবং সৃষ্টিশীল কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়েছি আমি।’ কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিক্স নিয়ে কাজ করার জন্য ১৯৬৫ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রিচার্ড পি. ফেনিম্যান।
ব্রিনের ভাষ্যমতে, ‘নিজের কাজের ক্ষেত্রে তো তিনি সফল ছিলেনই। এ ছাড়া তিনি ছিলেন উদার মনের মানুষ। বইতে তিনি লিখেছেন, তিনি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো একজন বিজ্ঞানী ও শিল্পী হতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়টা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে। আমার মনে হয় এ ধরনের স্বপ্নই আপনার জীবনকে পরিপূর্ণ করে।’
5 Comments on this Post
Abu Rayhan
বই গুলো কোথায় পাত্তয়া যাইতে পারে বলতে পারেন?
দি প্রমিনেন্ট ডেস্ক
আপনি ঢাকার বিভিন্ন লাইব্রেরীতে খোঁজ নিতে পারেন।
Ahmed Imran Halimi
স্টার্টআপ নিয়ে অনেক বই পড়া আছে, এখানে নতুন আরও কয়েকটা নাম পেলাম। জানার শেষ নাই।
শাওন
১. থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ : ন্যাপোলিওন হিল
২. . সিউরলি ইউ আর জোকিং মিস্টার ফেনিম্যান : রিচার্ড পি. ফেনিম্যান
এই দুটো বই আছে?
সেল: ০১৯১১ ৬১৭১৯৬
Shafikul Islam
Love From http://sianik.com/