নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম এবং একমাত্র পিইটি রেজিন উত্পাদন প্লান্ট চালু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (বিপিসিএল)। এই প্লান্টে রেজিন উত্পাদনে ব্যবহার করা হবে রিসাইকেল করা প্লাস্টিক বোতল। গত ২৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্লান্টটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিপিসিএলের এই প্লান্টটিই দেশের প্রথম ফুড গ্রেড এবং ফাইবার গ্রেড পিইটি রেজিন উত্পাদন কারখানা যেখানে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকৃত পিইটি বোতল থেকে রেজিন উত্পাদন করা হবে। ফেলে দেওয়া পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য এভাবে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বিপিসিএলের প্রশংসা করেন গওহর রিজভী। এর ফলে এসব বর্জ্য আর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে না। তবে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী এসব বর্জ্য এমনভাবে সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ করা উচিত যাতে করে পরবর্তীতে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় এবং পরিবেশের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে জানান তিনি।
গওহর রিজভী আরও জানান, পিইটি ফ্লেকস রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার ১০ শতাংশ ইনসেনটিভ প্রদান করতো, এর কারণ হলো পিইটি ফ্লেকসের স্থানীয় কোনো ক্রেতা ছিল না। কিন্তু এখন এক্ষেত্রে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। তাই স্থানীয়ভাবে যারা এ খাতে কাজ করছে, তাদের একইভাবে ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর কাজী। তিনি জানান, এর মাধ্যমে যেমন পরিবেশ ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে, তেমনি বর্জ্য সংগ্রহ এবং শোধনের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয়ও কমছে। এ ধরনের আরও প্রকল্প গড়ে উঠলে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ ডেভিড মিয়েল। প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের জন্য যে ধরনের উচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার প্রশংসা করেন তিনি। পরিবেশ রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়ন ডলারের রিসাইক্লিং শিল্প গড়ে উঠেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশেও এই শিল্প বড় আকারে গড়ে উঠবে। মিয়েল বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশ থেকে একেবারেই চলে যায় না, তাই কারও না কারও এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’ বিপিসিএল এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করেন এবং এর মাধ্যমে শুধু যে মুনাফাই করা যাবে তা নয়, পরিবেশ রক্ষা এবং টোকাইদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও ভূমিকা রাখা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদেম মাহমুদ ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশে পিইটি বোতল উত্পাদন সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে আমদানিকৃত রেজিনের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে দেশেই বিপিসিএল পিইটি রেজিন উত্পাদন শুরু করার পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এর মাধ্যমে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়েও ভূমিকা রাখছে বিপিসিএল।
উল্লেখ্য যে, পিইটি বোতল মাটিতে মিশে যেতে ৫০০ বছর সময় লাগে। তবে বিপিসিএল প্রতি বছর ১৫ হাজার মেট্রিক টন পিইটি বোতল নদী, ড্রেন এবং অন্যান্য স্থান থেকে সংগ্রহ করে রিসাইকেল করার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার কাজ করবে।
Sharing is caring!