ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট: পানির ব্যবসা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে রু করে করপোরেট অফিস_সবখানেই এখন খাওয়ার পানি মানেই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের শোধন করা জারের পানি। এই পানি সৃষ্টি করেছে কর্মসংস্থানের এক বিশাল বাজার। আপনিও হতে পারেন এর অংশীদার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মারজান ইমু
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট
কিছু জায়গা আর হাতে ভালো পুঁজি থাকলে স্থাপন করতে পারেন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। একটি প্লান্ট তৈরি করতে তিন-চার কাঠা জায়গা হলেই হবে। আর বিএসটিআইয়ের ম্যানুয়াল অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ প্লান্ট তৈরি করতে পুঁজি লাগবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। তবে ব্যবসা শুরুর জন্য আপনার থাকতে হবে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। আরবা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসীম দেবনাথ বলেন, এ ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার লাগবে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন, বিএসটিআই সার্টিফিকেট,আইসিডিডিআরবি সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
যেভাবে শুরু করবেন
একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করতে প্রথমে পানি রাখার জন্য একটি রিজার্ভ ট্যাংক তৈরি করতে হবে। যদি ওয়াসার পানির ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সাবমার্সেবল মেশিনের সাহায্যে মাটির গভীর থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর তৈরি করতে হবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এই প্লান্টের মাধ্যমে ফিল্টার পদ্ধতিতে পরিশোধন করে খাওয়ার উপযোগী করে তোলা হয় সাধারণ পানি। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সঙ্গে একটি ল্যাবও তৈরি করতে হবে, যেখানে পানির বিশুদ্ধতার মাত্রা ঠিক আছে কি না, তা প্রতিদিন পরীক্ষা করা হয়। এ জন্য একজন ফুলটাইম কেমিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। আর বিএসটিআইয়ের কোড অনুযায়ী পুরো প্লান্ট টাইলস করতে হবে এবং সর্বদা পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
পানি বিশুদ্ধকরণের প্রক্রিয়া
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য প্রথমে পানি স্টোরেজ ট্যাংক থেকে প্লান্টের ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অঙ্াইড সিলিন্ডারে প্রবাহিত করা হয়। এই সিলিন্ডারে ফিল্টার করে পানির আয়রন দূর করা হয়। এরপর কার্বন ফিল্টারের মাধ্যমে ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করে রেজিন সিলিন্ডারে ঢোকানো হয় পানি। রেজিন সিলিন্ডারে পানির মাত্রা নির্ধারণ করে জারে সংরক্ষণ করা হয়।
পরিবেশক হতে চাইলে
কম পুঁজি থাকলে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মালিক হওয়ার পরিবর্তে পানির পরিবেশক হতে পারেন। এ জন্য পানির ফ্যাক্টরি আছে এবং পানি সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক হতে চাইলে চুক্তি করতে হবে। চুক্তির জন্য পরিবেশকের ট্রেড লাইসেন্স, নাম-ঠিকানা সংবলিত প্যাড এবং পানির জার সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। এ আর এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলাউদ্দিন খান জানান, সবার আগে প্রয়োজন যে এলাকায় ব্যবসা করবেন সেখানে পরিচিতি।
যেভাবে শুরু করবেন
ফ্যাক্টরি মালিকের সঙ্গে চুক্তির পর জার কিনতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের জার পাওয়া যায়। প্রতিটি পেট জারের দাম পড়বে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, আর পিসি জারের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ব্যবসা শুরুর প্রথমেই বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান, রেস্টুরেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, চা দোকানে গিয়ে পানির চাহিদা এবং অর্ডার নিতে হবে। এরপর জার কিনতে হবে। তবে প্রথম দিকে ৫০টি জার দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এর মধ্যে ২৫টি জার দিয়ে ব্যবসা চলবে, আর বাকি ২৫টি জার ফ্যাক্টরি থেকে পানি আনার কাজে থাকবে। পেট এবং পিসি জারগুলো ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, নিউমার্কেট,গুলিস্তান ইত্যাদি এলাকায় পাইকারিভাবে পাওয়া যায়।
লাভ কেমন
একটি জারে সাধারণত ২০ লিটার পানি ধরে। এতে প্রায় ১০০ গ্লাস পানি হয়। ফ্যাক্টরি থেকে রিভার অসমোসিস বা আরো পানি পরিবেশকের কাছে প্রতিটি জার ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সাধারণ পানি প্রতি জার ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। রিভার অসমোসিস বা আরো পানি পরিবেশক খুচরা ক্রেতার কাছে জারপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন,আর সাধারণ পানি জারপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন।