চাহিদামতো ঋণ না পাওয়ায় নারী উদ্যোক্তা উঠে আসছেন না
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো সারা বছর যে ঋণ বিতরণ করে, তার ১৯ শতাংশ দেওয়া হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে। কিন্তু এসব এসএমই ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ পান নারী উদ্যোক্তারা। চাহিদামতো ঋণ পাচ্ছেন না বলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না।
নারী উদ্যোক্তা দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ তথ্য উঠে আসে। অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস বাংলাদেশ (এজিডব্লিউইবি) ও আইএফআইসি যৌথভাবে ‘নারী উদ্যোক্তা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে। তাতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এজিডব্লিউইবির প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বের শ্রমশক্তির ৪০ ভাগ নারী। উন্নত দেশের ২৫ ভাগ শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নারী। অথচ বাংলাদেশে এই হার ১০ শতাংশের কম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক সমর্থন না পাওয়া। নারী উদ্যোক্তারা চাহিদামতো ঋণ পাচ্ছেন না। ঋণ পেতে পুরুষের চেয়ে বেশি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা উঠে আসতে পারছেন না।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ার।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক উদ্যোক্তা সূচকে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম, এটি হতাশাজনক। এ সূচকে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও সুইডেন। উন্নত দেশে নারীরা বড় ভোক্তা শুধু নয়, বড় উদ্যোক্তা হচ্ছেন। বাংলাদেশেও নারী উদ্যোক্তাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংগতির কারণে সেই সুযোগ তাঁরা ব্যবহার করতে পারছেন না। তাই নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে স্বল্প সুদে ঋণ, গ্যারান্টি জটিলতা নিরসন, নিরাপদ বাজার নিশ্চিত ও নারীদের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীরেন সিকদার বলেন, সামগ্রিক উন্নয়ন ও সফলতা নিশ্চিত করতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেওয়া দরকার। সেই লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দেশের অর্ধেকই নারী। এ জন্য নারীদের উঠে আসার অবাধ সুযোগ রয়েছে। নারীরা সময়মতো উঠে না এলে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
শাহ আলম সারওয়ার বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ ঋণ সুবিধা পাওয়া। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঋণ পাওয়াটা এখন সহজ হয়ে উঠছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি ঋণ পাওয়ার সমস্যাকে অনেকটা মিটিয়ে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তা তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আর সেগুলোর জবাব দেন অতিথিরা।