ই-কমার্স সাইট বানাতে চান ?
উদ্যোক্তা ডেস্ক
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিকিকিনির ধারাটা আমাদের দেশে দ্রুতই জনপ্রিয় হচ্ছে। অনলাইনে বসে কয়েকটা মাত্র ক্লিকে চাহিদা জানানো যাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য চলে আসছে নিজের ঠিকানায়। বই, পোশাক, চাল-ডাল-সবজি, ইলেকট্রনিকস পণ্য কিংবা কোনো সফটওয়্যার—সবই বেচাকেনা করা যায় অনলাইনে। আর এটাই ই-কমার্স। আর ই-কমার্সে তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহও বেশি।
পণ্য বিক্রি করতে যেমন দোকান লাগে, ই-কমার্সেও তা-ই। একটি ই-কমার্স সাইট এখানে দোকান হিসেবে কাজ করে। তাই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে প্রথমেই বেচাকেনার একটা সাইট বানাতে হবে। কীভাবে একটি ই-কমার্স সাইট বানাতে এবং অনলাইনে চালু করতে হয়, তা দেখানো হচ্ছে এই প্রতিবেদনে। নিজে নিজে বানাতে পারলে তো ভালো, আর না পারলে অন্যকে দিয়ে বানানোর সময় এই ধাপগুলো খেয়াল রাখতে পারবেন।
ধাপ ১
নামকরণ ও ডোমেইন
ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে সাইটের নাম ঠিক করা। আর এই নামে ডোমেইন খালি আছে কি না তা দেখা। একটি সুন্দর ডোমেইন নাম নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠান পরিচিতি পাবে এই নামেই। যদি পেশাদারত্বের সঙ্গে সাইট তৈরি করতে চান, তবে অবশ্যই নতুন নাম নির্বাচন করতে হবে।
* আপনার পণ্য, সেবা বা ব্যবসার সঙ্গে মেলে এমন ডোমেইন নাম পছন্দ করুন।
* নাম যত ছোট নেওয়া যায়, তত ভালো। এতে আপনার সাইট যাঁরা দেখবেন, তাঁদের নামটা মনে রাখা সহজ হবে।
* সাধারণত ডোমেইন নিবন্ধন করা যায় ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে। ডোমেইন এক বা দুই বছরের জন্য নিবন্ধন করা যায়। মেয়াদ শেষে নবায়ন (রিনিউ) করতে হয়। এই কাজটা করে দেওয়ার জন্য অনেক পেশাদার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
* ডোমেইনের নিয়ন্ত্রণ (কন্ট্রোল প্যানেল)নিজের হাতে নেবেন। কন্ট্রোল প্যানেল দিতে পারবে না এমন সেবাদাতা বা প্রোভাইডারের কাছ থেকে ডোমেইন কেনা যাবে না। বিশ্বস্ত একটি ডোমেইন সরবরাহকারী হলো https://sg.godaddy.com। অবশ্যই বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডোমেইন কিনতে হবে। সমস্যা হলে যেন সহজেই যোগাযোগ করা যায়।
*আপনি যে নাম বা ডোমেইন ঠিক করলেন, সেটা ইন্টারনেটে খালি আছে কি না, তা জানতে যেতে পারেন www.1and1.com/domain-check ওয়েবসাইটে। .com ডোমেইন নেবেন।
ধাপ ২
কোন হোস্টিং ই-কমার্স সাইটের উপযোগী?
ই-কমার্স সাইটের জন্য ডোমেইনের পরেই যেটা বেশি প্রয়োজন, সেটা হলো হোস্টিং। হোস্টিং হলো আপনি যে সাইটটা তৈরি করবেন, সেটা যাবতীয় ডেটা, ফাইল ও দরকারি জিনিসপত্র রাখার জায়গা, মানে কম্পিউটার সার্ভার। হোস্টিং যেকোনো দেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া হয়। সাইট রাখার এই কাজটা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: ডেডিকেটেড হোস্টিং, শেয়ার (ভার্চ্যুয়াল), ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (ভিপিএস হোস্টিং), ক্লাউড হোস্টিং ইত্যাদি।
একটা কম্পিউটারের পুরোটাকেই যখন সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন একে ডেডিকেটেড সার্ভার বলা হয়। ডেডিকেটেড সার্ভারের হোস্টিং হলো ডেডিকেটেড হোস্টিং। ই-কমার্সের জন্য ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। তবে এই সার্ভারের আপটাইমের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। ডেডিকেটেড সার্ভারের মাসিক ভাড়া কমবেশি ছয় হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে।
যখনএকই সার্ভার বিভিন্ন সাইট ভাগাভাগি করে, তখন সেটা শেয়ার হোস্টিং। এ ধরনের হোস্টিং ই-কমার্স সাইটের জন্য অনুপযোগী। বেশি মানুষ সাইটে এলেই সার্ভার বসে যায় (ডাউন)। ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া এগুলোর।
যখন একটা ডেডিকেটেড সার্ভারকে ভার্চ্যুয়াল কোনো সফটওয়্যারের মাধ্যমে একাধিক ভাগে ভাগ করে বেশ কটি সার্ভার তৈরি করা হয়, তখন সেটি ভিপিএস নামে পরিচিত হয়। এই একেকটা ভাগ একেকটা স্বাধীন সার্ভারের মতো কাজ করে। ই-কমার্সের জন্য এগুলো ব্যবহার করা যায়। তবে এটার ব্যবস্থাপনা কষ্টসাধ্য এবং হামেশাই ডাউন হয়। ভালো ভিপিএস সার্ভারের মাসিক ভাড়া চার হাজার টাকা থেকে শুরু।
যখন কোনো ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়, তখন তা একটি সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ক্লাউড হোস্টিংয়ে সাইটটি একটি সার্ভারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। অর্থাৎ প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন সার্ভারের সমন্বয়ে ক্লাউড প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে পারে। তাই একই সময়ে বেশি মানুষ সাইটে গেলেও সার্ভার ডাউন হয় না। তাই ই-কমার্স সাইটের জন্য প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত ক্লাউড হোস্টিং।
ধাপ ৩
ওয়েবসাইট তৈরি
ওয়েব ডেভেলপারদের দিয়ে তো ই-কমার্স সাইট বানানোই যায়। তবে ইন্টারনেটে বেশ কিছু সফটওয়্যার আছে, যেগুলো দিয়ে নানা রকম ই-কমার্স সাইট তৈরি করা যেতে পারে। কাজটা সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে আটটি ভালো উপায় রয়েছে।
১. ওপেন কার্ট: কেনাকাটা করার মুক্ত সফটওয়্যারের মধ্যে ওপেন কার্ট একটি। সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং আকর্ষণীয় নকশা করা যায় এটি দিয়ে। website Demo: demo.opencart.com-এ গিয়ে নুমনা দেখতে পারেন। ঠিকানা: www.opencart.com
২. উকমার্স: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো হচ্ছে এটি। সহজেই ব্যবহার করা যায়। প্রোগ্রামিং সংকেত বা ডেটাবেইস জ্ঞান ছাড়াই শুধু সফটওয়্যার চালু করেই ই-কমার্সের সব সুবিধা পাওয়া যাবে। ঠিকানা: www.woocommerce.com
৩. জেন-কার্ট: অনেকেরই পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জেন-কার্ট নামের এই কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার (সিএমএস)। ঠিকানা: www.zen-cart.com
৪. ওএসকমার্স: ওপেন সোর্স কমার্স বা ওএসকমার্স শীর্ষ জনপ্রিয় অনলাইন স্টোর ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। ঠিকানা: www.oscommerce.com
৫. টমেটো কার্ট: নতুন প্রজন্মের ই-কমার্স সিএমএসগুলোর মধ্যে টমেটো কার্ট জনপ্রিয়। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটারের জন্য টমেটো কার্টে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নমুনা। ঠিকানা: www.tomatocart.com
৬. ভার্চ্যুমার্ট: জুমলাভিত্তিক জনপ্রিয় সিএমএস ভার্চুমার্ট। যারা জুমলা ব্যবহার করে অভ্যস্ত, তারা এই অনলাইন দোকান ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারটি দেখতে পারেন। ঠিকানা: www.virtuemart.net
৭. প্রেস্তা শপ: এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য আকর্ষণীয় ডিজাইন। ঠিকানা: www.prestashop.com
৮. ম্যাজেন্টো: এটি হচ্ছে ই-কমার্স সাইটের জন্য ব্যবহৃত সিএমএসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এতে রয়েছে যুগোপযোগী নানা বৈশিষ্ট্য। তবে এর থিম ও প্লাগ-ইনসের দাম কিছুটা বেশি। ঠিকানা: www.magentocommerce.com
ধাপ ৪
নিরাপত্তা সবার আগে
ই-কমার্সসাইটের জন্য নিরাপত্তার ব্যাপারটা খুবই জরুরি। যে ঘরানাতেই সাইট তৈরি করেন না কেন, স্বচ্ছ একটা নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে। আজকাল অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ই-কমার্স সাইট তৈরির পর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া মাথায় রাখতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করলে অনেক প্লাগ-ইনস পাবেন। সেগুলো ব্যবহার করা যায।