তাসমিয়াহ’র নিনিক পিনিক

তাসমিয়াহ’র নিনিক পিনিক

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

গ্রাফিক ডিজাইন কিন্তু কোনো আর্ট না, এটা এমন ডিজাইন হবে যা সহজ সরল এবং সবাই বুঝবে। আলোচনার শুরুতে গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে নিজের মত এভাবেই ব্যক্ত করেন হুতুম বাংলাদেশ লি নামক গ্রাফিক ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের ‘হেড অব ডিজাইনার’ তাসমিয়াহ্ আলম। রাজধানীতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে চলছে দশম শিশু চলচ্চিত্র উত্সব। এই উত্সবের লোগো থেকে শুরু করে অনেক কাজ করেছে তাসমিয়াহ্র নেতৃত্বে তার প্রতিষ্ঠান হুতুম। এই উত্সবের কাজগুলো নিয়ে তাসমিয়াহ বলেন, বিষয়টা শিশুদের আর দশ বছর হয়েছে এই উত্সবের। তাই সব মিলিয়ে আমি একটা কালারফুল আউট লুক দিয়ে জিজাইন চেয়েছি। শুধু তাই নয় বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে তাসমিয়াহর নেতৃত্বে হুতুম বাংলাদেশ সরকারের বেশ কিছু কাজ করেছে। কারিগড়ি শিক্ষা বিষয়ে ও তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অলিম্পিয়াডেও কাজ করে হুতুম।

তাসমিয়াহ জানান, মূলত তারা ওয়েব ডিজাইন আর গ্রাফিক ডিজাইন করলেও নিনিক পিনিক নামের তার একটা পেজ আছে। নিনিক অর্থ নিজে নিজে করি। পিনিক অর্থ অতি আনন্দ। এই পেজে ঘরে বসে ঘরের জিনিস  দিয়ে অতিসহজে অল্প সময়ে মজার সব গিফট আইটেম তৈরি করা শেখানো হয়।

ডিজাইন করতে কোনো বিষয়কে গুরুত্ব দেন প্রশ্ন করলে জানান, কোনো কাজ করার আগে ভাবেন তার বিষয়বস্তু নিয়ে। কী, কেন তারা করছেন, কাদের জন্য করা হচ্ছে প্রভৃতি সব বিষয় জেনে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নিজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, আর সৃজনশীলতার ছাপি খুলে ধরেন। তাসমিয়াহ ডিজাইনে দেশীয় বিষয়বস্তুর আবেশ জড়িয়ে দিতে চান। মানুষ যেন দেখেই বোঝে এটা বাংলাদেশের বিষয়।

ছেলেবেলা থেকে তার গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। ব্যক্তি মালিকানাধিন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা বাবার দুই মেয়ের মধ্যে বড় তাসমিয়াহ্ উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ইডেন কলেজে অ্যাকাউন্টিং বিষয় ভর্তি হন ২০০৯ সালে। প্রতিদিন উত্তরা থেকে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করে অ্যাকাউন্টিং-এর মতো নিরস বিষয়ে দিন দিনই তার আগ্রহ হারাচ্ছিল। বিরক্তির কথা জানতে পেরে  তারই এক বন্ধু জানান, তুমি গ্রাফিক ডিজাইনিং বিষয়টি দেখ, মজা পাবে। এখানে সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগাতে পারবে। তিনি তাই করলেন। গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে জানার সুযোগ হয় বন্ধু আশ্রাফ-উল আমিনের কল্যাণে। আশ্রাফ অনেক আগে থেকেই এই কাজ করছিলেন। সিদ্ধান্ত নেন আর অ্যাকাউন্টিং নয়। কিন্তু বাবা তাতে বাদসাধেন। গ্রাফিক ডিজাইনিং কী তা বাবাকে বুঝিয়ে এই বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কোর্সে ভর্তি হতে তাকে রীতিমতো যুদ্ধ জয় করতে হয়। তাসমিয়াহ বলেন, আজো বাবাকে বোঝাতে হয় তিনি কী কাজ করছেন। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এখনো সেভাবে গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত নয়। আপনি একটা চাকরি করেন তা বললেই মানুষ তা বোঝে। কিন্তু গ্রাফিক ডিজাইনার বললে বোঝাতে হয় সেটা কী কাজ।

চার বছরের গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড আইটি বিভাগে পড়ার সময়ই কাজ করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ স্টোরে (বিওয়াইএলসি)। স্নাতক সম্মান শেষ হওয়ার পরই বন্ধু আশ্রাফুল আমিনের সাথে ২০১৪ সালের অক্টোবরে হুতুম প্রতিষ্ঠা করেন তাসমিয়াহ। কেন ‘হুতুম’ এমন প্রশ্ন করলে বলেন, হুতুমপ্যাঁচা জ্ঞানের প্রতীক। আবার এই প্রাণীটি নিশাচর। আমরা যারা গ্রাফিক ডিজাইন আর ওয়েব ডিজাইন করি তারাও রাতে কাজ করি। সর্বোপরি হুতুম আমাদের দেশীয় একটি প্রাণী। আমি আমার সব কাজের মধ্যে দেশীয় আমেজ রাখতে চাই। আবার কাজটাও করতে চাই বিশ্বমানের। মেয়েদের জন্য পেশাটা কেমন প্রশ্ন করলে হেসে বলেন, মেয়েদের জন্য সৃজনশীল পেশা সব সময় ভালো। আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। মেয়েরা একসাথে অনেক কাজ করতে পারে। তাসমিয়াহ ভবিষ্যতে অ্যানিমেশন নিয়েও কাজ করতে চান। আর গ্রাফিক ডিজাইনকে করতে চান আন্তর্জাতিক মানের।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment