ছয় উদ্যোক্তার নতুন ব্যবসার চিন্তা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাচ্ছেন, কিন্তু ঠিক করতে পারছেন না কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন—এই সমস্যা অনেকের। কারণ, একেক ব্যাংকের ঋণের সুদ হার একেক রকম। সব ব্যাংকের ঋণের সুদ হার এক জায়গায় তুলনা করার মতো কোনো তথ্যভান্ডার বা প্রতিষ্ঠানও দেশে নেই। এ সমস্যা সমাধানে ‘ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি’ নামের একটি প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করেছেন একদল তরুণ। অনলাইনভিত্তিক এই তথ্যভান্ডারে বিভিন্ন ব্যাংকের সুদ হার, মুদ্রা বিনিময় হারসহ বিভিন্ন আর্থিক তথ্য থাকবে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একজন গ্রাহক সহজেই তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী কোন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
প্রযুক্তিভিত্তিক এমন তথ্যভান্ডারের কথা জানা গেল গতকাল বুধবার গ্রামীণফোন আয়োজিত ‘জিপি অ্যাকসেলারেটর’ অনুষ্ঠানে। প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন উদ্যোগ বা স্টার্টআপ ব্যবসাকে আর্থিক ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্যে। এ কার্যক্রমের তৃতীয় ব্যাচের যাত্রা শুরু উপলক্ষে রাজধানীর বসুন্ধরায় গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জিপি অ্যাকসেলারেটরের তৃতীয় ব্যাচে সুযোগ পেতে ৬০০ স্টার্টআপ আবেদন জমা পড়ে। এসডি এশিয়া নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এসব আবেদনের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর ছয়টি স্টার্টআপকে চূড়ান্ত করা হয়। এগুলো হলো ব্যাংক কম্পেয়ার বিডি, ক্রাউডওয়্যার, ডক্টর কই ডট কম, জলপাই ইলেকট্রনিকস, বাড়ি কই ও মাইক্রোটেক। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের গতকাল আমন্ত্রিত অতিথি ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সবার সামনে নিজেদের উদ্যোগের ধারণা তুলে ধরেন ছয় স্টার্টআপের ছয়জন উদ্যোক্তা।
এসব স্টার্টআপকে আগামী চার মাস নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেবে গ্রামীণফোন। স্টার্টআপগুলো ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে পাবে ১১ লাখ টাকা করে। গ্রামীণফোন কার্যালয়ে কাজ করার সুযোগের পাশাপাশি এসব উদ্যোগ ব্যবসায়িকভাবে সফল করতে প্রাসঙ্গিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করবে। চার মাস পর ‘ডেমো ডে’ নামক আয়োজনের মাধ্যমে স্টার্টআপগুলো অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী, অংশীদার ও মূল ক্রেতাদের সামনে নিজেদের ধারণা উপস্থাপন করবে।
জলপাই ইলেকট্রনিকসের উপস্থাপনায় বলা হয়, তারা ‘স্নিফার’ নামের একটি ‘গ্যাস লিক’ চিহ্নিত করার অ্যালার্ম উদ্ভাবন করেছে। বাসাবাড়ির গ্যাসলাইন বা সিলিন্ডার থেকে বেশি মাত্রায় গ্যাস বেরিয়ে গেলে এটি সতর্কসংকেত দেবে। রান্নাঘরের গ্যাসের চুলার বিস্ফোরণ ঠেকাতে এ প্রযুক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানানো হয়।
অনলাইনে রোগী ও চিকিৎসকদের যোগাযোগ স্থাপনে কাজ করবে ডক্টর কই ডট কম। এর উপস্থাপনায় বলা হয়, অনলাইনভিত্তিক এ তথ্যভান্ডারে একজন রোগীর বিভিন্ন তথ্য থাকবে, যা চিকিৎসকের জন্য সহায়ক হবে। আবার একজন রোগী তার সমস্যা নিয়ে কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন, সে বিষয়ক তথ্যও মিলবে সেখানে। চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার সময়ও এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঠিক করা যাবে।
বাড়ি কই স্টার্টআপের উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা বা অঞ্চলের ঠিকানা ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়ার তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করবে বাড়ি কই। সহজেই কোনো ঠিকানা খুঁজে বের করতে লম্বা ঠিকানাকে এখানে শর্টকোডের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত করে রাখা হবে। এতে সহজেই একটি ঠিকানা বের করা যাবে। দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্ভুল ঠিকানা খুঁজে বের করার কাজে এই তথ্যভান্ডার ব্যবহার করতে পারবে।
শিশুদের খেলার ছলে যেকোনো কিছু শেখার অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর) অ্যাপ্লিকেশন ‘নীলিমার বায়োস্কোপ’ তৈরি করেছে মাইক্রোটেক। এটির উপস্থাপনায় বলা হয়, অ্যাপ্লিকেশনটির জন্য একটি বইও তৈরি করা হয়েছে, যা গুগল প্লেস্টোর ও অ্যাপল স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে। শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা এ বইয়ে চরিত্রগুলো থ্রিডি আকারে দেখা যাবে। যেমন একটি শিশু যখন অ-তে অজগর পড়বে, তখন অজগর জীবন্ত হয়ে শিশুটির সামনে ধরা দেবে এখানে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গ্রামীণফোন দেশের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার একটি ভালো সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। জিপি অ্যাকসেলারেটর চালুর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা আরও বাড়বে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পেটার বি ফারবার্গ বলেন, এই কার্যক্রমের প্রথম ব্যাচে ২০০, দ্বিতীয় ব্যাচে ৪০০ আর সর্বশেষ ব্যাচে ৬০০ আবেদন জমা পড়েছে। এটা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার সঠিক পথে আছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জিপি অ্যাকসেলারেটরের প্রধান মিনহাজ আনোয়ার, এসডি এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর আর খান প্রমুখ।