ব্যবসায় ফান্ডের খোঁজখবর

ব্যবসায় ফান্ডের খোঁজখবর

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

আইডিয়া ভালো। ব্যবসাসফল হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। সমস্যা শুধু ‘মূলধন নেই’। এমন সমস্যায় হারিয়ে যায় অনেক সম্ভাবনা! উপায় কিন্তু আছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে জোগাড় করা যায় মূলধন। বিনিয়োগ পাওয়ার অনেক উপায় এখন দেশেই আছে। 

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাত অনেক দিকে এগিয়ে গেলেও ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে উল্লেখযোগ্য আস্থা পায়নি এখনো। তবে গত কয়েক বছরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে কিছু পদক্ষেপ। বিভিন্ন উপায়ে জোগাড় করা যাচ্ছে বিনিয়োগ।


সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড

জনগণের দোরগোড়ায় ই-সেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এতে সহায়তা করছে ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং ইউএসএআইডি। ই-সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এসব উদ্যোগ সফল বাস্তবায়নে ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে চালু করা হয় ‘সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড’। ব্যক্তি, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এনজিও, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যে কেউ এই ফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারে।

সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের জন্য নারী ক্ষমতায়ন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সবুজ উদ্যোগ, কম মূল্যের ডিভাইস, শিক্ষা কার্যক্রম, বাংলা ভাষা উন্নয়ন টুল বা যন্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে সরকারের মাঠপর্যায়ের কর্মকার্তাদেরও যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সঙ্গে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেকেই যুক্ত হতে পারছে।

ইনোভেশন ফান্ডের আওতায় ৫ লাখ, ১৫ লাখ ও ২৫ লাখ টাকা—এই তিন বিভাগে অনুদান দেওয়া হয়। আগ্রহীরা সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের ওয়েবসাইটে (www.e-service.gov.bd/SIF/) গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। একজন একাধিক আইডিয়ার জন্যও আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করা উদ্যোগ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উদ্যোগটি বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে।

আবেদনের নিয়ম http://www.e-service.gov.bd/SIF/Application%20Guideline.pdf থেকে পাওয়া যাবে।

ইইএফ ফান্ড

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অর্থায়নে প্রথম সরকারি উদ্যোগ ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ)। ২০০০-০১ অর্থবছরে চালু হওয়া এই প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০৯ সালের জুন থেকে সাব-এজেন্সি অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশকে (আইসিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু নীতিমালা প্রণয়ন, পরিবর্তন ও বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সৃজনশীল, দক্ষ, সম্ভাবনাময়, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা পেতে ও মূলধন স্বল্পতার কারণে প্রকল্প গ্রহণে অসমর্থ উদ্যোক্তাদের ইইএফে অর্থায়ন করা হয়। এতে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অগ্রাধিকার পায়। এ দুই খাতে উদ্যোক্তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের অনুমোদন দেয়। পরে আইসিবি যাচাই-বাছাই করে নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অর্থ প্রদান করে থাকে। ইইএফ সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানি হতে হয়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪৯ শতাংশ দেয় সরকার। বাকি ৫১ শতাংশ উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ করতে হয়। কয়েকটি কিস্তিতে এই অর্থায়ন করা হয়। প্রথম বিনিয়োগের চতুর্থ বছর থেকে কম্পানিকে সরকারের শেয়ার কিনে নিতে হয়। আট বছরের মধ্যে সরকারের পুরো শেয়ার কিনতে না পারলে অবশিষ্ট থাকা শেয়ার ভ্যালুকে (ফেইস ভ্যালু) বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ হিসেবে ধার্য করে এবং কম্পানিকে সেই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইইএফ ফান্ড নিতে এই খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সম্ভব সব সহযোগিতা করে থাকে। আপাতভাবে কিছু জটিলতায় ইইএফ ফান্ডের নতুন আবেদন নেওয়া বন্ধ রয়েছে। আবেদন নেওয়া শুরু হলে আগ্রহীরা www.eef.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে কিংবা আইসিবিতে (http://icb.org.bd) যোগাযোগ করতে পারেন।

ইনোভেশন ফান্ড

২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ‘ইনোভেশন ফান্ড’ চালু করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। উদ্যোক্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ লাখ এবং বিশেষ অনুদান হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারে। এককালীন কিংবা কিস্তিতে এ অনুদান দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দেশি বা আন্তর্জাতিক কোনো ইভেন্ট বা প্রতিযোগিতায় বিশেষ সাফল্য দেখাতে পেরেছে এমন আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুদান দেওয়া হয়। সারা বছর আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটেও সরাসরি এ অনুদানের জন্য আবেদন নেওয়া হয়। প্রতি দুই মাস পর পর আবেদনগুলো বাছাই করা হয়। আগের প্রকল্প উন্নয়নে চাইলে একাধিকবার আবেদন করা যাবে। বিবেচিত হলে অনুদান মিলবে একাধিকবার। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রকল্প প্রস্তাবনা, বাজেটের কপি, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেটের কপি, লিমিটেড কম্পানির ক্ষেত্রে ইন-করপোরেশন সার্টিফিকেট, প্রস্তাবিত প্রকল্পের সুপারভাইজারের প্রত্যয়ন (যদি থাকে), জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও জীবনবৃত্তান্ত এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা বিভাগীয় প্রধানের প্রত্যয়ন জমা দিতে হবে।

আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইট (http://ictd.gov.bd/) থেকে আবেদন করা যাবে।

বেসিসআইডিএলসি উদ্ভাবন

তথ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠানের মূলধন ও বিনিয়োগ সমস্যা সমাধানে ‘আইডিএলসি উদ্ভাবন’ নামের আর্থিক সহায়তা সেবা চালু করা হয়েছে। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড যৌথভাবে এ সেবা চালু করেছে। আইডিএলসি উদ্ভাবন নামের এই ঋণ সুবিধায় উদ্যোক্তারা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, ফিক্সড অ্যাসেট ফিন্যান্সিং, লিজ ফিন্যান্সিং, উইমেন এন্টারপ্রেনার লোন, বাণিজ্যিকভাবে গাড়ি ও জমি কেনার জন্য ঋণ সুবিধা এবং ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। এই সেবার দেশীয় সফটওয়্যার বা সেবা কিনতে চাইলে ঋণ পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। ঋণ পেতে ট্রেড লাইসেন্স ও ই-টিন থাকতে হবে। পাশাপাশি বেসিসের সদস্য হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অন্তত দুই বছর। কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বেসিস কার্যালয়ে কিংবা ওয়েবসাইটের http://www.basis.org.bd/) ঠিকানায় গিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করা যাবে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment