ক্রাফট কন্যা তানজিলা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
ছোটবেলা থেকেই ক্রাফটিংয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল তানজিলা জলিল অমির। ইচ্ছে ছিল একজন ভালো ক্রাফটার হওয়ার। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে ভালো ক্রাফটার হওয়ার সুযোগ হয়নি তার। অমির মতে, সেই দুঃখ থেকেই আজ তিনি একজন ক্রাফট ম্যাটেরিয়াল বিক্রেতা।
খুব অল্প পুঁজি নিয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবোলতাবোল ক্রাফটস (এটি ক্রাফটস) নামের একটি ভার্চুয়াল দোকানের যাত্রা শুরু করেন এই উদ্যোক্তা। ফেসবুক অনলাইন গ্রুপ চালু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ক্রাফটিং বা কারুকলায় আগ্রহীদের কাছে বেশ সাড়া ফেলে এটি ক্রাফটস। বাবা-মায়ের স্বপ্ন মেয়ে ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে অমি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে। মেডিকেলে পড়ার পাশাপাশি ক্রাফটিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে বের করা আবার সেগুলোকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া মোটেও সহজ ছিল না। প্রচুর পরিশ্রম এবং সময়ের ব্যাপার, তাই পরিবার থেকে এই কাজে আপত্তি জানানো হয়। তবুও থেমে যায়নি অমি। নিজের ইচ্ছাটা পূরণ না হোক, অন্য কেউ যেন চাইলে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পায় তার জন্যই গড়ে তুলেছেন এই ভার্চুয়াল দোকান।
অমি জানান, ক্রাফটিংয়ের অনেক জিনিসই আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। আবার দেখা যায় কোন জিনিসটা কোথায় পাওয়া যাবে তার ধারণাও নেই অনেকের। ক্রাফটারদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায় এসব জিনিস জোগাড় করতে। এটি ক্রাফটসে প্রায় সব ধরনের ক্রাফটিং ম্যাটেরিয়াল ও টুল পাওয়া যায়। পেপার, পেপার কাটার, ক্লথ, গহনার ম্যাটেরিয়াল, বিভিন্ন ধরনের লাইট, পেইন্টস ইত্যাদি। এর মধ্যে গহনার ও পেপার ক্রাফটিং ম্যাটেরিয়ালের চাহিদা সব থেকে বেশি। পণ্য লেনদেনে সমস্যার কথা জানতে চাইলে অমি জানান, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য আমি। লেনদেন সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে এই সংস্থাটি তা সমাধান করে। ছোট পরিসরে শুরু করা এই কাজে প্রথমে অমি একাই সব দায়িত্ব পালন করতেন। গ্রাহকের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিধি বেড়েছে। বর্তমানে কাজ করছেন পাঁচ জন নারী কর্মচারী।
গৎবাধা উপহার কিংবা বিভিন্ন ডেকোরেশনে পরিবর্তন আনতে হস্তশিল্পে আগ্রহীরা নিজেরাই তৈরি করছে হরেক-রকম জিনিস। ইউটিউব, ইন্টারনেট থেকে খুব সহজে ক্রাফটিং শিখে নিলেও সমস্যায় পড়ছে উপকরণ সংগ্রহে। এমন অবস্থায় ক্রাফটারদের নতুন কিছু পৌঁছে দিতে পেরে অমি নিজেকে সফল মনে করেন। লোকাল এবং দেশের বাইরে থেকে আনা দুই ধরনের উপকরণ সরবরাহ করে থাকেন এই উদ্যোক্তা। চাহিদা অনুযায়ী চীন, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রোডাক্ট আনান অমি।
এটি ক্রাফটসের পাশাপাশি চলতি বছর থেকে অমি ‘কণ্ঠী’ নামের আরেকটি কাজ শুরু করেছেন। হাতে তৈরি গহনা নিয়েই কাজ করছে কণ্ঠী। এই বিষয় অমি বলেন, ‘অনেকে ভাবেন হাতে তৈরি গহনা ফ্যাশনসম্মত হয় না। এই ধারণা থেকে বের হওয়ার জন্যই কণ্ঠী শুরু করেছি।’ তৈরিকৃত পণ্য নিয়ে এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতেও অংশ নিয়েছেন তিনি। অমি চান তার এই উদ্যোগ শুধু অনলাইনে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে।