তিন তরুণের সাড়া জাগানো উদ্যোগ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
বিল গেটস থেকে মার্ক জাকারবার্গ—প্রযুক্তি দুনিয়া কাঁপিয়েছেন তরুণ বয়সেই। তরুণ বা নওজোয়ানদের অসাধ্য কিছু নেই। প্রথা ভাঙায় দুঃসাহস দেখাতে পারে শুধু তরুণেরাই। বাংলাদেশেও রয়েছে এমন কিছু তরুণ প্রাণ, যারা চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
এমনই কয়েকজন তরুণ স্বপ্ন দেখলেন উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশেও অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু করে মানুষের ভোগান্তি দূর করার। সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ‘পাঠাও’ এর তিন উদ্যোক্তা। ঢাকা শহরে স্মার্টফোন ভিত্তিক পরিবহন অ্যাপ ‘পাঠাও’ চালু করে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছেন এই তরুণরা। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে ‘পাঠাও’। তারুণ্যের এমন উদ্যোগ রাজধানীবাসীর ভোগান্তি আর দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করেছে।
যেভাবে শুরু: ২০১৫ সালের মার্চ মাস। সবেমাত্র নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন হুসেইন এম ইলিয়াস আর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সিফাত আদনান। ওই সময়ে চাকরি, সোনার হরিণ। তাই চাকরির পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করার চেয়ে নিজে থেকে কিছু একটা করার চিন্তা করলেন এই দুই তরুণ। ভাবলেন, উদ্যোক্তা হবেন। দুই বন্ধু মিলে ছোট পরিসরে শুরু করলেন ডেলিভারি এজেন্টের কাজ। দুই চাকার বাইসাইকেল দিয়ে বাসায় গিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্ট পৌঁছে দিত এজেন্ট কর্মচারীরা। সেই থেকে শুরু মূলত ‘পাঠাও’ এর আইডিয়া।
উদ্যোক্তরা ভাবলেন, ট্রাফিক জ্যামের কারণে রাজধানীবাসীর বহু কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, সেই চিন্তা থেকে এলো দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেল সেবা চালু করার। মোটরবাইক সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিবে যাত্রীদের। এতে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে অন্য দিকে যাত্রীদেরকে গুনতে হবে না বাড়তি টাকা। সেই সময় ‘পাঠাও’ কোম্পানিতে যুক্ত হলেন কানাডায় পড়াশোনা করা কিশোয়ার হাশমী। এই তিনজন মিলে শুরু করলেন দেশীয় ডেভেলপার দিয়ে অ্যাপস তৈরির কাজ। অ্যাপস তৈরির পর রাজধানীতে প্রথমবারের মতো স্মার্ট ফোনভিত্তিক মোটরবাইক সার্ভিস ‘পাঠাও’ চালু করেন তারা। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এই সেবা চালু করা হয়।
কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশোয়ার হাশমী জানান, প্রথম যেদিন এই সেবা চালু হয়েছিল সেদিন কোম্পানির এই তিনজনই যাত্রী হয়েছিলেন, কারণ তখন কেউ মোটরবাইকে চড়ে কোথাও নিরাপদে যাবে, সেটা বিশ্বাস করতে পারেনি। তাই প্রথম দিন কোনো যাত্রী না পেয়ে তারাই যাত্রী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, শুরুতে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে তাদের। রাস্তায় নেমে মানুষকে দিনের পর দিন বুঝিয়েছেন এর পজিটিভ দিকগুলো। কিছু দিন না যেতেই ব্যাপক সাড়া মিলে। কিন্তু এখন তো রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। লাখ লাখ মানুষ প্রতি মাসে যাতায়াত করছেন ‘পাঠাও’ এর মোটরবাইকে।
রাজধানীবাসীর যাতায়াতে কতটুকু প্রভাব রাখছে ‘পাঠও’ জানতে চাইলে হাশমী জানান, অবশ্যই অনেক পরিবর্তন এসেছে পরিবহন সেক্টরে। পাঠাও মোটরবাইক সেবা নিয়ে মানুষ অবশ্যই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। কমেছে মানুষের দুর্ভোগও। প্রতিনিয়ত ব্যাপক হারে বাড়ছে যাত্রী। বেড়েছে চালকের সংখ্যাও। কিভাবে এই আইডিয়া এসেছে জানতে চাইলে ‘পাঠাও’ উদ্যোক্তারা জানান, একবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ভ্রমণ করতে গিয়ে এই সেবা দেখে বাংলাদেশেও এই ধরনের সেবা চালুর চিন্তা মাথায় আসে। এর পরই দেশীয় ডেভেলপার দিয়ে অ্যাপস চালু করে এই ধরনের সেবা ঢাকায় চালু করি।
কিভাবে ‘পাঠাও’ এর প্রতি মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে জানতে চাইলে কিশোয়ার হাশমী জানান, আমরা মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। সেটা লোকজনকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। যেখানেই মানুষের দুর্ভোগ, সেখানেই আমরা কাজ করছি। ‘পাঠাও’ মোটরবাইক সেবায় কোনো ধরনের অপরাধ করার সুযোগই নেই। কারণ চালকদের সবধরনের তথ্য দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তাদের সব তথ্য থাকায় কোনো অনিয়ম করলে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।
বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ ‘পাঠাও’ অ্যাপস ব্যবহার করছেন। আর ৫০ হাজারেরও বেশি চালক ‘পাঠাও’ এর রাইডার হিসেবে অ্যাপস ব্যবহার করছেন। এই তরুণদের উদ্যোগী মনোভাবে বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি লোক ‘পাঠাও’ রাইডের সঙ্গে জড়িত। কোম্পানির স্থায়ী কর্মী রয়েছে একশরও বেশি। যে কেউ চাইলে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে প্লে-স্টোর থেকে ‘পাঠাও’ অ্যাপস ডাউনলোড করে এর সেবা নিতে পারবেন।