বিশ্বসেরা নারী উদ্যোক্তারা
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
প্রতি বছর বিশ্বের ক্ষমতাশীল ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করে থাকে বিশ্বখ্যাত ব্যবসায় সাময়ীকি এন্ট্রাপ্রেনিউর। সমায়ীকিটির অক্টোবর নভেম্বর সংখ্যায় এ রকমই এক তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকা প্রস্তুতকরণ কমিটির প্রধান ছিলেন বিশ্বের জনপ্রিয় সুপার মডেল ও উদ্যোক্তা কার্লি ক্লস। সেই তালিকা থেকে শীর্ষ ১০ নারী উদ্যোক্তার পরিচয় তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
১. জেনেট মক
লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক
টেলিভিশন সিরিজ পজ-এর প্রিমিয়ার যেদিন প্রথম অনুষ্ঠিত হয়, সেদিনই মূলত ইতিহাসে নাম লেখান জেনেট মক। মাত্র এক বছর আগের কথা। ২০১৮ সালে শুরু হয় পজ, আর শুরু হওয়ার পর পরই ব্যপক জনপ্রিয়তা পায় টেলিভিশন সিরিজটি। এই সিরিজে জেনেট মক অতিশয় দক্ষতার সঙ্গে আশির দশকের নিউইয়র্কের বল সংস্কৃতি তুলে ধরেন। বল সংস্কৃতি প্রকৃতপক্ষে সমকামী মানুষদের সংস্কৃতি। জেনেট মকই প্রথম নারী, যিনি সফলতার সঙ্গে এই সংস্কৃতি টেলিভিশনের পর্দার জন্য লিখেছেন এবং পরিচালনা করেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে সক্ষম হয়েছেন ইতিহাসে নাম লেখাতে।
গত জুন মাসে এই জনপ্রিয় লেখক নেটফ্লিক্সের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। অনেকেই এই চুক্তিকে বলছেন ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’। মক বলেছেন, ‘নিশে একটি নতুন পৃথিবী। এই পৃথিবীর গল্প শোনার জন্য মানুষ ক্ষুধার্তের মতো অপেক্ষা করছে। আমি অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত যে সেই পৃথিবী নির্মাণের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা রয়েছে।’
মক আরও বলেন, ‘শুধু মানুষকে বিনোদিত করাই আমার আসল কাজ নয়। বরং বিনোদন অনুষ্ঠান নির্মাণের বাইরেও আমার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সেটি হচ্ছে নারীদেরকে ক্ষমতায়িত করা, নিম্নকণ্ঠের লেখকদের তুলে আনা, তাদেরকে কাজের সুযোগ করে দেওয়া ইত্যাদি।’
২. মেলানি পারকিন্স
ক্যানভার প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা
ক্যানভা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক একটি গ্রাফিক ডিজাইনের প্ল্যাটফর্ম। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে যেকোনো স্থানের যেকোনো মানুষ সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করতে পারেন। মাত্র ছয় বছরের মাথায় ক্যাভানা ১৪০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এর বর্তমান বাজারমূল্য ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। প্ল্যাটফর্মটিতে রয়েছে ১৫ মিলিয়ন কার্যকর ব্যবহারকারী। পারকিন্স বলেন, বিশ্বের ১০০টি ভাষায় আমাদের প্ল্যাটফর্ম চালু রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বের মাত্র এক শতাংশকে ক্ষমতায়িত করতে পারছি। আমরা চাই সারা বিশ্বকে ক্ষমতায়িত করতে।
৩. ন্যান্সি হুইটম্যান
ওয়ানা ব্র্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা
যখন আপনি ডাইম ব্যাগে (এক ধরনের হাত ব্যাগ) একটি পেনি ক্যান্ডি ঢুকান, তখন আসলে কী ঘটে? তখন আপনি বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করা একটি প্রতিষ্ঠানকেই আসলে সহযোগিতা করেন। প্রতিষ্ঠানটির নাম ওয়ানা ব্র্যান্ড। ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন ন্যান্সি হুইটম্যান। তিনি একজন বিপণন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। ন্যান্সি তার ব্যবসার যাত্রা শুরু করেছিলেন মাত্র ১৩৫ স্কয়ার ফিটের একটি রান্নাঘর থেকে। তারপর আস্তে আস্তে ওয়ানা ব্র্যান্ডকে একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। এটি এখন শুরুর প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ গুণ বড়।
৪. অড্রে গেলম্যান
দ্য উইংয়ের প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা
লরেন কাসানকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৬ সালে দ্য উইং প্রতিষ্ঠা করেন অড্রে গেলম্যান। এটির মূল উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি করা। তিন বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে লন্ডনেও যাত্রা শুরু করে। এর মাধ্যমে মূলত দ্য উইংয়ের বৈশ্বিক যাত্রা শুরু হয়। তখন অড্রে গেলম্যান পরিকল্পনা করেন যে, তারা লিংকডইনের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবেন যেখানে চাকরিদাতারা চাকরির খবর ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করতে পারবেন। অপরদিকে চাকরিপ্রত্যাশী নারীরা চাকরি খুঁজে নিতে পারবেন এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। দ্য উইং কার্যালয়ের ডিজাইন থেকে শুরু করে আসবাবপত্র—সবকিছুই নারীদের ডিজাইন করা এবং তৈরি করা।
৫. ত্রিস কসটেলো
পোর্টফোলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী
মাত্র ৩০ শতাংশ ধনী মানুষ উদ্যোক্তাবৃত্তিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হোন। এরমধ্যে নারীদের সংখ্যা মাত্র এক শতাংশ। এজন্য ২০১৪ সালে ত্রিস কসটেলো পোর্টফোলিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটি নারীদেরকে উদ্যোক্তাবৃত্তিতে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে। পোর্টফোলিয়ার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে, এটি প্রতিষ্ঠার সময়েই ২৪৯জন বিনিয়োকারী নারী সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রত্যেক সদস্য তখন কমপক্ষে ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। পোর্টফোলিয়া যুক্ত হওয়ার জন্য এখনো ১৪ হাজার নারী অপেক্ষা করছেন। ত্রিস কসটেলোর ইচ্ছা, ২০২২ সালের মধ্যে পোর্টফোলিয়া নেটওয়ার্কে বিনিয়োগকারী নারী সদস্যের সংখ্যা এক লাখে পরিণত করা।
৬. রিচেল শেটম্যান
স্টোরির প্রতিষ্ঠাতা
বছরের পর বছর ধরে রিচেল শেটম্যানের গল্পটা ছিল একজন খুচরো বিক্রেতার গল্প। সেই গল্প বদলে গেছে ২০১৮ সালে। রিচেল তাঁর স্টোরি ব্র্যান্ডকে বিক্রি করে দিয়েছেন মেসি’র কাছে এবং নিজে মেসিতে যোগ দিয়েছেনে একজন ব্র্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স অফিসার হিসেবে। রিচেল বলেন, স্টোরি আমার প্রথম ব্যবসায়িক উদ্যোগ। এখন মেসির বাইরেও নতুন নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করছি।
৭. কেনড্রা স্কট
কেনড্রা স্কটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী
২০০২ সালে প্রথম যখন বাড়ির বাইরের মানুষের জন্য গহনার ডিজাইন তৈরি করেন, তখন পর্যন্ত কেনড্রা স্কট কল্পনাও করেননি যে তার ডিজাইন একদিন এক বিলিয়ন ডলারের ব্র্যান্ডে পরিণত হবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, কেনড্রা স্কটের ১০০টি দোকান রয়েছে। সেসব দোকানে রয়েছে ২ হাজারেরও বেশি কর্মচারী। এসব কর্মচারীর আবার ৯০ শতাংশই নারী। বেশির ভাগ নারীই আসলে মা। তাই কেনড্রা স্কটের প্রতিটি দোকানে রয়েছে মায়েদের নার্সিং রুম এবং শিশুদের খেলার ঘর। বছরের একটি দিন কেনড্রা তার কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে মেতে ওঠেন নানা খেলাধুলা আনন্দযজ্ঞে। কেনড্রা বলেন, মনে রাখতে হবে, আমাদের কর্মচারীরা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের প্রতিষ্ঠানে। সুতরাং আমাদের উচিত তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করা। প্রতিষ্ঠান তাদেরকে সহায়তা করলে তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন।
৮. অ্যাশলে অ্যামন্স ও কেরি শেরাডার
মিক্সট্রোজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা
মিক্সট্রোজ একটি ইভেন্ট নেটওয়াকিং মোবাইল অ্যাপ। যারা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে চায় তাদেরকে একটি প্রোফাইল ফরম পূরণ করতে বলে মিক্সট্রোজ। প্রশ্নগুলো করা হয় আয়োজক বা স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। অ্যামন্স বলেন, মিক্সট্রোজ থেকে গত বছরে আয় হয়েছে এক মিলিয়ন ডলার।
৯. ক্ল্যারি ওয়াসারম্যান
লেডিস গেট পেইডের প্রতিষ্ঠাতা
ক্ল্যারি ওয়াসারম্যান ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন লেডিস গেট পেইড। নারীদেরকে ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতন করা এবং ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশে লেডিস গেট পেইড চালু করেন তিনি। বছর খানের পরে কোনো এক ঘটনায় পুরুষ অধিকার কর্মীরা তার বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে অবশ্য তারা মামল থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এই মামলা পরিচালনা করা সময় ক্রাউড ফান্ডিংয়ের আয়োজন করেছিলেন ক্ল্যারি ওয়াসারম্যান। তিন সপ্তাহের মধ্যে তার ফান্ডে জমা হয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ডলার।
১০. পায়েল কাদারিকা
ক্লাস পাসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান
২০১০ সালের কথা। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন পায়েল কাদারিকা। কী করবেন তিনি? অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলেন উদ্যোক্তা হবেন। তারপর কাজ শুরু করলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন ক্লাসপাস। এটি একটি অনুশীলনমূলক অনলাইন ক্লাসরুম। বিশ্বের কুড়িটি দেশের ২৫০০ শহরে প্ল্যাটফর্মটি সেবা দিয়ে আসছে। এটি একটি নিবন্ধনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম।
এ বছর অবশ্য কাদারিয়া তার কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করেছেন। তিনি তার ক্লাসরুমে গুগল, ফেসবুক, মরগানের মতো স্টুডিওকে সম্পৃক্ত করেছেন। এরফলে তিনি কর্পোরেট সেবা দিতে পারছেন।
প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ২৫৫ মিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সূত্র: এন্ট্রাপ্রেনিউর
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফ ইসলাম