কানাডার ‘এসবিসি প্রতিযোগিতা’ এখন বাংলাদেশে
- বদরুন্নেসা শুচি
খুব কম মানুষই আছেন যারা দৃঢভাবে বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ভালো কিছু ঘটা আর এই দেশে সম্ভব নয়। তাই অনেকেই দেশে ছেড়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় থিতু হচ্ছেন। তারপরও ব্যক্তিবাদ ও স্বার্থপরতার অবিচ্ছিন্ন সাধনায় প্রতিনিয়ত পুঁজিবাদের রথে চড়ে যে ব্যক্তি কেবল ‘লাভ’ খোঁজে, সেই ব্যক্তিরই অন্যকোনো মনের মধ্যে বাস করে পরার্থপরতা ও নিঃস্বার্থতা। আমরা যদি চারপাশে তাকাই, দেখতে পাব, প্রত্যেকেই নিজেদের উন্নতির জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছে। অন্যের কল্যাণের জন্য পরপোকারী এই আকাক্সক্ষার একটি ব্যবসায়িক নাম আছে যাকে বলে ‘সামাজিক ব্যবসা’। এই নতুন ব্যবসায়িক ধারনা মানুষকে ক্রমশ আকর্ষণ করছে। আমাদের দেশে ‘সামাজিক উদ্যোগ’ নামে যে বিপ্লব চলছে তার সফলতার ব্যাপারে আমরা সবাই কমবেশি অবগত। কিছু সাহসী মানুষ পৃথিবী বদলে দেবার পথিকৃৎ ভূমিকায় নেমেছেন। তাদের এই শুভ উদ্যোগ পৃথিবীর জন্য সত্যিই ভালো কিছু বয়ে আনছে। গত এক দশক ধরে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুর সঙ্গে ব্যবসাকে সম্পৃক্ত করার প্রবণতা চলছে এবং আমরা দেখছি, আমাদের চোখের সামনে অনেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এই স্টার্টআপগুলো সমাজের বিদ্যমান সমস্যাকে সনাক্ত করছে এবং তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করছে। যদিও সামাজিক উদ্যোক্তারা মূলত সামাজিক প্রয়োজনেই তৈরি হয়, তারপরও আমাদের চোখের সামনে অনেক সাফল্যের নজির রয়েছে যারা সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থও উপার্জন করেছেন।
সোস্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন প্রতিযোগিতা
কানাডায় অবস্থিত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় স্কুল এইচইসি মন্ট্রিল প্রতিবছর সোস্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন কম্পিটিশন (এসবিসি) আয়োজন করে থাকে। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম। প্রতিযোগিতাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা মানসিকতা তৈরি করা এবং সামাজিক ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, বিশেষ করে প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগের প্রতি অনুপ্রাণিত করা যাতে তারা সামাজিক ব্যবসা খাতে তাদের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এইচইসি মন্ট্রিল বিশ্বাস করে, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সামজিক উদ্যোগ খাতে বিশ্বমানের তরুণ নেতৃত্ব তৈরি হবে। প্রতিযোগিতাটি তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতেও শেখাবে।
এইচইসি মন্ট্রিলের প্রধান সহযোগী হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতাটি তৃতীয় বারের মতো আয়োজন করছে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক ফাইনাল আয়োজন করবে এবং এসব আয়োজনে দেশের প্রথিতযশা ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগকারী, শিক্ষাবিদ ও বিদেশি অতিথিদেরকে বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানাবে। প্রতিযোগিতাটির ইয়ুথ পার্টনার হিসেবে রয়েছে সোস্যাল বিজনেস স্টুডেন্টস ফোরাম (এসবিএসএফ)।
কেন অংশ নেবেন এই প্রতিযোগিতায়
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে পাবেন এইচইসি মন্ট্রিল কর্তৃক সনদ। প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিযোগীরা কানাডার এইচইসি মন্ট্রিলে সাত দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এছাড়া প্রত্যেক প্রতিযোগিকে অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রত্যেক রাউন্ডের জন্য আলাদা আলাদা সার্টিফিকেট পাবেন প্রতিযোগিরা। যার ব্যবসায় আইডিয়া বিজয়ী হবে, তিনি পাবেন ফান্ডসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। এই প্রতিযোগিতার আর্থিক মূল্যমান ৭৫ লক্ষ টাকা প্রায়। এছাড়াও প্রতিযোগিরা শিক্ষাবৃত্তি, ভ্রমণ ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ও আবেদনের যোগ্যত্যা
ষষ্ঠ বারের মতো অনুষ্ঠিত সোস্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন কম্পিটিশন-২০২১ এর রেজিস্ট্রেশন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থী ছাড়াও আগ্রহী যেকোনো শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশনের শেষ সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১। টিমের পক্ষে যেকোনো সদস্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে আবেদনের সঙ্গে প্রত্যেক সদস্যের বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত কনসার্ন লেটার ও বিজনেস আইডিয়ার বিস্তারিত সংযুক্ত করতে হবে। যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে তারাও এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন তবে দলে অবশ্যই এমন একজন সদস্য থাকতে হবে যার শিক্ষাজীবন এখনো চলমান রয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন লিংক: https://socialbusinesscreation.hec.ca
বদরুন্নেসা শুচি
এসবিসি ভলান্টিয়ার ইন বাংলাদেশ

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	