পোল্ট্রি ফার্ম করে লাখপতি আয়নাল
- ঋতু চাকী
কথায় আছে পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি, কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা, আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প পুঁজি দিয়েও যে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় সেকথাই প্রমাণ করেছেন পাংশা উপজেলার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. আয়নাল হক।
পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় এসএসসি পাশ করার পর আর কলেজে পড়ার সুযোগ হয় নি আয়নালের। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও বাবুপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর প্রত্যন্ত এই গ্রামে তিনিই প্রথম পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে শূণ্য থেকে হয়েছেন লাখপতি। নিজ উদ্যোগে আয়নাল গড়ে তুলেছেন চারটি পোল্ট্রি ফার্ম।বর্তমানে পোল্ট্রি ফার্ম থেকে তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এখন তিনি পাংশা উপজেলার একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠিত পোল্ট্রি ব্যবসায়ী।
তবে ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকের যাত্রাটা একদমই সহজ ছিলো না আয়নালের। পরিবারে একটু আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে আয়নাল যখন কাজের সন্ধানে মরিয়া তখন টেলিভিশনে আমার দেশ নামক অনুষ্ঠান দেখে পোল্ট্রি ফার্ম করার বিষয়ে উৎসাহ পান তিনি।
ধান বিক্রি করে মাত্র আট হাজার পাঁচশ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০৩ সালে শুরু হয় আয়নালের যাত্রা। প্রথমে মুরগির বাচ্চা পালনের জন্য তখন পৈতৃক ৭ শতাংশ জায়গায় ৪০ হাত লম্বা ঘর নির্মাণ করেণ তিনি। তারপর তিনশো ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা দিয়ে শুরু হয় তার পোল্ট্রি ফার্ম। তখন প্রতিটি মুরগির বাচ্চা কিনেছিলেন সাত টাকা দরে। প্রথম কিস্তিতে তিনি সাত হাজার টাকা লাভ করেন। এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ৫৫০ টি মুরগির বাচ্চা থেকে লাভ করেন ১৬৫০০ টাকা।
পরবর্তীতে আয়নাল সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রয়লার মুরগি কিভাবে পালন করে সে বিষয়ে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণও প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে সঠিক ভাবে ব্রয়লার মুরগি পালন করে অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তাঁর পোল্ট্রি ফার্ম থেকে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করতে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে আয়নাল সরকারীভাবে আদর্শ খামারীর সুযোগ সুবিধাও পান।
এই ব্যবসা শুরু করার পর থেকে আয়নালকে আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। ব্যবসায়ের মাধ্যমে উপার্জিত লাভের টাকা দিয়ে নিজ এলাকায় ৭২ শতাংশ জামি কিনেছেন তিনি। এ বিষয়ে আয়নাল জানান তিনি সব সময় সততার সাথে ব্যবসা করেছেন এবং তাতে তিনি সফলতাও পেয়েছেন। আয়নাল আরো বললেন তাঁর পোল্ট্রি ফার্মটি পরিচালনা ও ব্যবসায় সব সময় তাঁকে সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর স্ত্রী পারভনী আক্তার। তাঁদের দুজনের সম্মিল্লিত প্রচেষ্টায়ই এতো দূর পর্যন্ত আসা সম্ভব হয়েছে।
তিনি তরুণ সমাজের কথা চিন্তা করে বলেছেন কোনো বেকার যুবক যেনো শুধু চাকুরীর আশায় বসে না থাকে। এধরনের ব্যবসায়ীক কাজে যেনো তাঁরা নিয়োজিত হয় কারণ এধরনের ব্যবসাতেও প্রচুর লাভবান হবার সুযোগ আছে।
সর্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য চার জন লোক কাজ করছে ফার্মটিতে। আয়নালের পোল্ট্রি খামারে কাজের সুযোগ পেয়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছে চারটি পরিবার। মাসকাবারি ভালো বেতন পাওয়ায় শ্রমিকরাও বেশ খুশি এখানে কাজ করে।
এ বিষয়ে আয়নালের গ্রামবাসী মো. শহীদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম বলেছেন, তাঁদের গ্রামের কঠোর পরিশ্রমী ও সৎ আয়নাল এখন গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছেই আদর্শ। তাঁকে দেখে গ্রামের অনেক তরুণ সমাজ ও শিক্ষিত বেকার যুবক এধরণের ফার্ম তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
- ঋতু চাকী
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি