ছয় মাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আয় তানজিলার
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
‘রেডি টু কুক গরুর ভুঁড়ি’ উদ্যোক্তা তানজিলা জামানের সিগনেচার আইটেম। গত ছয় মাসে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে এই গরুর ভুঁড়ি। এত কম সময়ে অনলাইনে এত বেশি টাকার ভুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে দেখে উদ্যোক্তা নিজেই বেশ অবাক হয়েছেন।
অনার্স পরীক্ষার্থী তানজিলা জামান রাজধানীর উত্তরায় থাকেন। চার বছর বয়সী এক সন্তান ও স্বামী নিয়ে তাঁর সংসার। ব্যবসা বা চাকরি করার বিষয়টি আগে সেভাবে মাথায় ছিল না। গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামে (উই) যুক্ত হন। সেখানে উদ্যোক্তাদের সাফল্যের গল্পগুলো তাঁকে অনুপ্রাণিত করে।
সেখানেই তিনি দেখেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা গরুর ভুঁড়ি নিয়ে ব্যবসা করছেন। প্রথমে ঘি নিয়ে কাজ করতে চাইলেও পরে ভুঁড়ি নিয়েই কাজ শুরু করেন। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শুরু করেন ব্যবসা। তাঁর ব্যবসায়িক উদ্যোগের ফেসবুক পেজের নাম দেশি ফুড।
তানজিলা বললেন, একসময় গরুর ভুঁড়ি তাঁর নিজেরও পছন্দের খাবার ছিল। তবে তা পরিষ্কার করার ঝামেলা তো ছিলই। অনেকে নাকসিটকালেও গরুর ভুঁড়ি অনেকেরই পছন্দের খাবার। পরিষ্কারের ঝামেলায় ইচ্ছা থাকলেও খাবারের তালিকা থেকে অনেকে বাদ রাখেন এই খাবার। বাজারে যেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো সেভাবে পরিষ্কার থাকে না। ফলে রান্না করার আগে ঝামেলা পোহাতেই হয়। ক্রেতাদের এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতেই তানজিলার এই উদ্যোগ।
ভুঁড়ির অর্ডার পাওয়ার পর ক্রেতাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন তানজিলা। একটা ৬ কেজি ওজনের গরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করতেই লেগে যায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা। শুধু গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে কষ্টও বেশি। পরিষ্কার করার পর কেজি হিসাবে তিনি ঢাকার মধ্যে হোম ডেলিভারি দেন।
তানজিলা জানালেন, বাজারে বিক্রি করা ভুঁড়ি বেশির ভাগই চুন বা সোডা দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। ফলে স্বাদটা নষ্ট হয়ে যায়। তিনি শুধু গরম পানি দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ভুঁড়ি পরিষ্কার করেন বলে স্বাদের জন্যই চাহিদা বাড়ছে।
তানজিলা বললেন, বায়িং হাউসে চাকরি করা স্বামী যা আয় করেন, তা দিয়ে ভালোই দিন কাটছিল। তাই ব্যবসা, তা–ও আবার ভুঁড়ি নিয়ে কেন ব্যবসা শুরু করলেন, এ নিয়ে অনেকেই জানতে চান। তবে নিজের পরিবার এ নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি, বরং কাজে সহযোগিতা করছে। বাসার কাজের সহকারীসহ দুজন কর্মী রেখেছেন ভুঁড়ি পরিষ্কার করার কাজের জন্য। বাড়ির কেয়ারটেকার বা নিজেই উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গার বাজার থেকে ভুঁড়ি সংগ্রহ করেন। তারপর নিজের রান্নাঘরেই চলে তা পরিষ্কারের কাজ।
তানজিলা বললেন, ‘জীবিকার তাগিদের কাজটি করছি না। কাজটি করছি ভালোবেসে। পাশাপাশি বাড়তি আয়ও হচ্ছে।’
তানজিলার ক্রেতাদের ৮০ শতাংশই উই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসার পরিসর বড় হলে গরুর ভুঁড়ি তিনি সারা দেশে ডেলিভারি দিতে চান।
উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, গরুর ভুঁড়ি মুখরোচক খাবার। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই এই খাবারের সঙ্গে তেমন পরিচয় নেই। ভুঁড়ি পরিষ্কারের ঝামেলার কারণে অনেক বাসায় এখন আর এই খাবার রান্না হয় না। বাজারে গরুর ভুঁড়ি পাওয়া যায়, তবে নারী হয়ে এই খাবার নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য বেশ সাহসের প্রয়োজন। সাহসের পাশাপাশি কাজে ভালোবাসা থাকলে ব্যবসায় উন্নতি করা যায়, তার প্রমাণ তানজিলাসহ অন্য উদ্যোক্তারা।
সূত্র: প্রথম আলো