ঝুঁকি বিষয়ে বাফেটের বয়ান

ঝুঁকি বিষয়ে বাফেটের বয়ান

মারুফ ইসলাম :  ঝুঁকি বলতে আপনি কী বোঝেন? সাধারণত সবাই এরকম উত্তর দেবেন যে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কোনো খাতে বিনিয়োগ করার নামই ঝুঁকি। কোনো ব্যবসায়ীকে যদি এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন তবে হয়ত একটু ঘুরানো উত্তর পাবেন। তারা বলবেন, পুঁজি বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা ফিরে না পাওয়ার সম্ভাবনাকে ঝুঁকি বলে। এ দুটোর ভাবার্থ প্রায় কাছাকাছি। আপনি সাধারণ জ্ঞানেই বুঝতে পারছেন, উপরোক্ত দু’দলই মূলত টাকা বা অর্থকেই ঝুঁকি হিসেবে প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটকে (বাফেটকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তাঁর অন্যতম পরিচয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী নাগরিক) জিজ্ঞেস করেন, ঝুঁকি কী? তিনি উত্তরে কী বলবেন জানেন? তিনি বলবেন, ঝুঁকি সম্পর্কে আপনাদের সবার ধারনাই ভুল।

বাফেট তাঁর শেয়ারহোল্ডারদের কাছে সর্বশেষ যে চিঠিটি লিখেছেন তাতে এই ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বাফেট লিখেছেন, ‘অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং ঝুকি শব্দ দুটিকে সমার্থক মনে করেন। আসলে শব্দ দুটির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এরা কখনো সমার্থক হতে পারে না। কোনো কোনো বিনিয়োগকারী আবার দ্বিধাগ্রস্ততাকে ঝুঁকি পরিমাপের দাঁড়িপাল্লা হিসেবে বিবেচনা করেন। এটাও আমার কাছে এক হাস্যকর বিবেচনা ছাড়া আর কিছু নয়।’

বাফেট তাহলে ঝুঁকি পরিমাপ করেন কীভাবে? তিনি বলছেন, ঝুঁকি পরিমাপ করতে হয় ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে কিনা তার নিক্তিতে। আরো পরিষ্কার বললে বলতে হয়, পুঁজি হিসেবে আপনি যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে চান সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে কতটুকু পণ্য ক্রয় করতে পারছেন। এই ক্রয় ক্ষমতা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে কি না। যদি কমে যায় তাহলে বুঝবেন আপনি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করেছেন।

ওয়ারেন বাফেট । জন্ম: ৩০ আগষ্ট ১৯৩০।
ওয়ারেন বাফেট । জন্ম: ৩০ আগষ্ট ১৯৩০।

এরপর বাফেট তার শেয়ারহোল্ডারদেরকে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন।

১. দীর্ঘমেয়াদে নগদ অর্থ জমা রাখুন :

যারা আমার কাছে বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ চাইতে আসেন তাদেরকে একটাই পরামর্শ দেই-কিছু নগদ অর্থ সবসময় নিজের কাছে জমা রাখুন। এই টাকায় কখনো হাত দেবেন না। তারপর তাদেরকে বলি, সম্পূর্ণ পুঁজি একবারে হারানোর চেয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে লসের মুখোমুখি হওয়া ভালো। আজ আপনার যতটুকু লস হয়েছে কাল আপনি তা কাটানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু একবারে যদি আপনার সমুদয় পুঁজি হারিয়ে যায় তাহলে তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবেন। তাই অল্প অল্প করে পুঁজি বিনিয়োগ করুন আর অল্প অল্প করে ক্ষতি কাটিয়ে উঠুন। দেখবেন এক সময় আপনি সমস্ত ক্ষতি মোকাবেলা করার কৌশল শিখে ফেলেছেন।

আপনি শুরুতেই যেটা করবেন সেটা হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার বিনিয়োগকে বেঁধে ফেলুন। ধরা যাক, আগামী পাঁচ বছরের জন্য কোনো একটা ব্যবসায় আপনি বিনিয়োগ করলেন। নিয়ম অনুযায়ী সেই ব্যবসায় একদিন লস হবে আরেক দিন মুনাফা হবে। যেদিন লস হবে সেদিন ওই লস পূরণ করার জন্য শুরুতেই দীর্ঘ মেয়াদে যে টাকা জমা রাখতে বলেছিলাম সেথান থেকে পূরণ করুন। মনে রাখবেন, ওই দীর্ঘ মেয়াদে জমা রাখা টাকা কেবল ব্যবসার জন্যই ব্যয় করবেন, এবং পাঁচ বছরের জন্য একটু একটু করে; পুরোটা কখনোই নয়।

২. সম্পূর্ণ অজানা খাতে বিনিয়োগ নয় :

আরেকটা ভুল আমি প্রায়ই করতে দেখি মানুষকে। সেটা হচ্ছে কোনো একটা ব্যবসায় সম্পূর্ণ বিনিয়োগ করা। তাদের ধারনা, তাদের কর্মীরা সবাই খুব দক্ষ হবে, সবাই জীবন উৎসর্গ করে কাজ করবে এবং এর ফলে তার ব্যবসায় মুনাফা হবে। বিনিয়োকৃত পুঁজি উঠে আসবে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তা হয় না। বেশিরভাগ কর্মী দক্ষ হয় না। তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এরকম পরিস্থিতিতে আপনার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়তেই পারে। তখন আপনার করণীয় হচ্ছে বিকল্প কোনো খাতে বিনিয়োগ করা। তবে হ্যাঁ, যে বিষয়ে আপনার নূন্যতম ধারণা নেই সে বিষয়ে কখনো বিনিয়োগ করতে যাবেন না। এভাবে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো যায়।

ফোর্বস অবলম্বনে মারুফ ইসলামfavicon

Sharing is caring!

Leave a Comment