ফেলটুসদের বিশ্ববিদ্যালয়!
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ভারতীয় থ্রি ইডিয়টস চলচ্চিত্র যারা দেখেছেন তারা জানেন, চলচ্চিত্রে আমির খানের নাম ছিল ফুংসুখ ওয়াংরু। এই চরিত্রটি বাস্তবেই রয়েছে এবং ভারতের লাদাখে অনুরূপ একটি বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে কোনো বই-পুস্তক পড়ানো হয় না। সেখানে শিক্ষার্থীরা সব হাতে কলমে শিখে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে এবং সফল হয় বহুলাংশে। বিদ্যালয় নাম সেকমল (SECMOL)। সেকমল একটি শিক্ষা আন্দোলনের নাম। এর প্রতিষ্ঠাতার নাম সোনম ওয়াংচুক। থ্রি ইডিয়টস চলচ্চিত্রটি তাঁর জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করেছেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার রাজকুমার হিরানি।
সোনম ওয়াংচুকের বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করতে হবে! এজন্য সেকমলকে অনেকেই বলে থাকেন ইউনিভার্সিটি অব ফেইলর্স।
সেকমলের শিক্ষার্থীদের আশ্চর্য রকমের সব আবিস্কার। শিক্ষার্থীরা মাটি দিয়ে এমনভাবে বিদ্যালয়ের ভবন তৈরি করেছে যে বাইরে যখন তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ডিগ্রি সে. তখন ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা প্লাস ১৫ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড! গ্রীষ্মে লাদাখের হয়ে ওঠে বিরাণ অঞ্চল, ধূ ধূ মরুভূমি, পানি পাওয়া খুব মুশকিল। তাই গরমের সময় পানি পাওয়ার জন্য সাধারণ পাইপ দিয়ে ‘আইস স্টুপা’ তৈরি করেছেন সোনাম ওয়াংচুক। দেখতে বরফের টিলার মতো, যা দিয়ে সহজে গ্রিন হাউজ ইফেক্ট দূর করা যায়।
তিন-চারবার মাধ্যমিক ফেল করে যারা এখানে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কেউ এখন বিশ্বসেরা সাংবাদিক, কেউ চলচ্চিত্র নির্মাতা, কেউবা স্বনামধন্য উদ্যোক্তা। এমনকি লাদাখের শিক্ষামন্ত্রী যিনি মাধ্যমিকে পাঁচবার ফেল করার পর এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
সাধারণত আমরা আশায় থাকি কবে স্কুল ছুটি হবে আর এই স্কুলের বড় সাজা হলো পুরো এক সপ্তাহই ছুটি! বিদ্যালয়টি একটি দেশের মতো। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় পরিচালনা করে, নেতৃত্ব তৈরি করে, রেডিও স্টেশন সম্প্রচার করে, পত্রিকা ছাপায়—এমনকি নিজেদের খাবার নিজেরাই চাষ করে উৎপন্ন করে। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে অর্থ যোগায় আবার বছর শেষে ঘুরতেও যায়। সোনম ওয়াংচুক বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্থনীতি, ভূগোল, জীববিজ্ঞান শেখা হয়।
শিক্ষা নিয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে সফল হওয়া সোনম ওয়াংচুক পেশায় একজন প্রকৌশলী। তাঁর স্বপ্ন এমনি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেখানে শিক্ষার্থীরা কাজ করবে, আবিস্কার করবে; কোনো গতানুগতিক পড়ালেখা হবে না।