উচ্চশিক্ষার গন্তব্য জাপান
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
উচ্চশিক্ষার জন্য জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন অনেক শিক্ষার্থীরই পছন্দের তালিকায় থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উচ্চতর গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য বেছে নিচ্ছে এ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন। সে সঙ্গে টিউশন ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচাপাতি ও ভর্তির শর্তাবলি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আবেদন করতে হবে।
জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত বছরে দুটি সেশনে ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সেমিস্টার শুরু হয় প্রতিবছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন। তবে ভর্তি নিশ্চিত হলে ভিসা জটিলতা তেমন পোহাতে হয় না বললেই চলে। ভর্তির আবেদনের সময় নির্ভুল ও সঠিক তথ্য দিতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক অফিস বাংলাদেশে আছে। সেসব প্রতিষ্ঠান ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকে। তা ছাড়া শিক্ষার্থী নিজেও ইন্টারনেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারেন।
জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সুবিধা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেক্সট (মনোবুকাগাকুশো) বৃত্তি। এ বৃত্তি সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইছেন, সে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। দূতাবাসের মাধ্যমে ভর্তি হতে চাইলে এর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে বছরের এপ্রিল মাস থেকে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর আবেদনপত্রগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসে পাঠানো হবে। এখানে বেশ কিছু পরীক্ষার পর আপনি জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ভর্তি হতে চাইলে এর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে বছরের অক্টোবর থেকে। এ ক্ষেত্রে আপনার ফলাফল, গবেষণা প্রস্তাবনা—সবকিছু নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরাবর মেইল করতে হবে। এর পর নির্দিষ্ট অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাকে বৃত্তি জোগাড় করতে হবে।
জাপানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর—উভয় পর্যায়েই উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করা যায়। স্নাতক পর্যায়ে পড়ালেখার জন্য আপনাকে ১২ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ করতে হবে এবং স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে ১৬ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রেই ৬০ শতাংশের নিচে নম্বর গ্রহণযোগ্য নয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা সব অনুষদেই পড়ার সুযোগ রয়েছে জাপানে।
জাপানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যম জাপানি। তবে ইংরেজিতেও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
দেশে জাপানি ভাষা শিখতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ‘ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ’ অথবা ‘জাপানি দূতাবাসে’ শিখতে পারেন। অথবা জাপানে গিয়েও জাপানি ভাষা শেখার জন্য কোর্স করতে পারেন। তবে প্রস্তুতি দেশ থেকে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
জাপানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি একরকম নয়। আপনি যদি জাতীয় পর্যায়ের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তবে প্রতিবছর আপনাকে নয় লাখ ৪০ হাজার ইয়েনের বেশি খরচ করতে হবে। আবার আপনি যদি স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তবে আপনাকে প্রতিবছর খরচ করতে হবে ১০ লাখ ৭০ হাজার ইয়েন। আর যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তবে প্রতিবছর আপনাকে খরচ করতে হবে সাড়ে সাত লাখ থেকে ৫৮ লাখ ইয়েন। খাবার, যাতায়াত ইত্যাদির জন্য আপনাকে বছরে সোয়া এক লাখ থেকে পৌনে দুই লাখ ইয়েন খরচ করতে হবে। স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। ছয়জন থাকা যায় এমন রুমের জন্য ৪৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার ইয়েন খরচ পড়ে। বিদেশি ছাত্রদের স্বাস্থ্য-বিমা থাকা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্য-বিমার জন্য বছরে ন্যূনতম ১৮ হাজার ইয়েন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স করে যাওয়া ভালো।
মনোবুকাগাকুশো বৃত্তি ছাড়াও জাপানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষার জন্য প্রচুর বৃত্তি দিয়ে থাকে। এশিয়ান ইয়ুথ ফেলোশিপ, হিউম্যান রিসোর্সেস স্কলারশিপসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্কলারশিপ ফাউন্ডেশন বিদেশি ছাত্রদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। জাপান সরকারের ওয়েবসাইট থেকে আপনি বৃত্তির তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
জাপানের রিতসুমেইকান এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী জয় প্রকাশ দেবনাথের মতে, কোনো শিক্ষার্থীর যদি তত্ত্বীয় পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণায় আগ্রহ থাকে, তাহলে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সহজেই তার পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে।
উচ্চশিক্ষার জন্য যেকোনো প্রয়োজনে আপনি বারিধারার দূতাবাস রোডে অবস্থিত জাপান দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের শিক্ষাবিষয়ক কর্মকর্তার ই-মেইল ঠিকানা হলো : education@dc.mofa.go.jp। এ ছাড়া তাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা : www.bd.emb-japan.go.jp।
এ ছাড়া ঢাকার ইন্দিরা রোডে অবস্থিত ‘জাপানিজ ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি-ইচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকে। তাদের ই-মেইল ঠিকানা : info@juaab-bd.org। তাদের ওয়েবসাইট : www.juaab-bd.org।
তাই যাঁরা উচ্চশিক্ষার এবং উচ্চতর গবেষণার জন্য দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কথা ভাবছেন, তাঁরা জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।