আলো ছড়াচ্ছে ‘সুইচ’
প্রমিনেন্ট প্রতিবেদক :প্রতি বছর বইমেলা এলেই রাকেশের (ছদ্ম নাম) মন খারাপর হয়ে যেত। বন্ধুরা সবাই প্রতিদিন বিকেলে বইমেলায় ধুলো উড়িয়ে হেঁটে বেড়ায় আর পছন্দের বই কেনে কিন্তু রাকেশকে একা একা বসে থাকতে হতো ঘরের কোণে। বইপোকা রাকেশ বন্ধুদের হাতে পছন্দের বইয়ের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতেন তাদের ফিরে আসার। শারীরিক প্রতিবন্ধী রাকেশকে এবছর আর ঘরের কোণে বসে থাকতে হয়নি। প্রতিদিন বইমেলা ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দের বই কিনছেন তিনি।
রাকেশের মতো প্রতিবন্ধী যারা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে পারেন না তাদের জন্য এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে বাংলা একাডেমি ও সেচ্ছাবেসী সংগঠন ‘সুইচ’। এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলার প্রধান ফটকে অবস্থান করছেন। প্রতিবন্ধী যারা আসছে তাদেরকে সম্পূর্ণ মেলা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন তারা। পছন্দের বই কিনতে সহায়তা করছেন।
সেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘সুইচ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত পরিচালিত একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। যুব সমাজের মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১১ সালে এর যাত্রা শুরু।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজ করছে এই সংগঠনের সদস্যরা। গ্রামে পিছিয়ে পরা শিক্ষার্থীদের সুস্থ মানসিক বিকাশে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করে তারা। ম্যাগাজিনটিতে শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, ক্যারিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দিকনির্দেশনা এবং সামাজিক বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। এটি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এ পর্যন্ত ৮০টি স্কুল ও কলেজে ১০ হাজার কপি ম্যাগাজিন বিতরণ করেছে সংগঠনটি।
এছাড়া সংগঠনটি ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এক মাসব্যাপী, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০১৫) এক মাসব্যপী এবং ঢাকার ৩২টি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সফলভাবে করেছে। এ বছরও অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় সুইচ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর সচেতনতা মূলক কার্য়ক্রম পরিচালনা করছে। মেলায় সুইচের পক্ষ থেকে একটি স্বাক্ষর বোর্ড রাখা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য, যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলতে ১০ লাখ মানুষকে শপথ করানো। ইতিমধ্যে ৬ লাখ মানুষের শপথ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৮টি আধুনিক ডাষ্টবিন স্থাপন করেছে সুইচ ।
আরও কার্যক্রম রয়েছে সুইচের। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে আধুনিক ও মানসম্মত সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে (যেমন প্রযেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস করানো, কম্পিউটার ল্যাব, খেলা-ধুলার সকল উপকরণ সহ চার রুম বিশিষ্ট) একটি স্কুল পরিচালনা করছে সংগঠনটি। সেখানে ৫০ জন সুবিধা বঞ্চিত পথশিশু বিনামূল্যে লেখাপড়া শিখছে।
এছাড়াও গ্রাম পর্যায়ে সুইচ কমিউনিটি লাইব্রেরি স্থাপন করছে। গ্রামের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় বইগুলো এ লাইব্রেরীতে পাবে। ফানুদাসকাঠী ঝালকাঠীতে একটি, চড়ডাঙ্গা জামালপুরে একটি, চিতলমারী বাগের হাটে একটি ও চাঁদপুরে একটি লাইব্রেরী স্থাপন করছে। স্থানীয় তরুণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও শীতার্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়ে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো কার্যক্রমও পরিচালিত করেছে এই সংগঠন। এ পর্যন্ত তারা ৩ হাজার রোগীকে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
২০১৩ সালে এই সংগঠনটি ঢাকার ইএমকে সেন্টারে একটি ইউথ বিজনেস প্লান কম্পিটেশন করেছিল। সেই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৬টি দল অংশগ্রহণ করেছিল। সেখান থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় বিজয়ী দলকে পুরষ্কৃত করেছে সুইচ।