সাইকেলে চড়ে আলোকিত হওয়ায় স্বপ্ন বালিকাদের
- নিউজ ডেস্ক
সকাল ৯টা। তিন বান্ধবী রাজিয়া, স্মৃতি, মারুফা। গাঢ় আকাশী ও সাদা স্কুল ড্রেস পরে গ্রামের আকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে আসছে। গন্তব্য তাদের বিদ্যালয়। প্রতিদিন শিবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরা গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। স্কুল ছুটির পর মেয়েদের বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে যে কেউ দেখলে মনে করবে সাইকেল র্যালি হচ্ছে।
১ থেকে ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসব মেয়ে প্রতিদিন বাইসাইকেলে করে স্কুলে আসে। গ্রামের সড়কগুলো কাঁচা হওয়ায় বৃষ্টি হলে কিছুটা সমস্যা হয়। তবুও সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কালাদহ ইউনিয়নের একটি গ্রাম শিবরামপুর। বিদ্যালয়টি বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ শতাধিক। তার মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ৩ শতাধিকের ওপরে। বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি মেয়েই এখন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। ২০০৬ সালে শিবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী দীপা দেবনাথ প্রথম বাইসাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করে। তার দেখাদেখি ৪-৫ জন সহপাঠী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করে। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন এ বিদ্যালয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসবে। কোনো কোনো অভিভাবক প্রথমে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
বখাটে ছেলেদের হাসি-ঠাট্টা ও টিটকারী উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে মেয়েরা। বাইসাইকেলে স্কুলে আসার অনেকটা সুফল পায় শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। এখন শিবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েরা ভর্তি হলেই অভিভাবকরা তাদের বাইসাইকেল কিনে দেয় যাতায়াতের জন্য। মেয়েদের সাইকেলে করে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা দেখে এখন আশপাশের স্কুলের মেয়েরাও তাদের অনুসরণ করছে। শিক্ষার দিক থেকেও এ বিদ্যালয়টি উপজেলার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিক থেকেও অনেকটা এগিয়ে। সারা দেশে শ্রেষ্ঠ স্কুল নির্বাচিত হওয়ায় ২০০৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ স্কুলের সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির অসংখ্য শিক্ষার্থী বর্তমানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করছেন।
সহকারী শিক্ষক জীবন আনন্দ দেবনাথ বলেন, প্রায় দশ বছর যাবৎ এ বিদ্যালয়ের মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। প্রথম প্রথম এলাকার বখাটে ছেলেরা রাস্তাঘাটে মেয়েদের সাইকেল চালাতে দেখে হাসি-ঠাট্টাসহ উত্ত্যক্ত করত। বিষয়গুলো শিক্ষকরা অভিভাবকদের নিয়ে প্রতিবাদ করায় আস্তে আস্তে এসব বন্ধ হয়ে যায়। শিবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী দিপা দেবনাথ বলেন, ২০০৬ সালে প্রথম আমি বাইসাইকেলে করে স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করি। বাইসাইকেলে স্কুলে যাওয়া নিয়ে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাকে। এখন প্রায় সব মেয়েই সাইকেলে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে তা দেখে অনেক ভালো লাগে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, একজন মেয়ে যখন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে তখন তার মধ্যে কোনো জড়তা থাকে না। প্রতিদিন প্রায় ২ শতাধিক মেয়ে বিদ্যালয়ে সাইকেল চালিয়ে এখন যাওয়া-আসা করে।