অধিক ফলনশীল নতুন জাত ব্রি হাইব্রিড ধান-৫
- নিউজ ডেস্ক
অধিক ফলনশীল ও পুষ্টিকর খাদ্য শস্যের চাহিদা আজকাল সর্বত্রই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার নামকরণ করা হয়েছে ব্রি হাইব্রিড ধান-৫। এতে প্রোটিন ও শর্করার পরিমাণও অপর জাতগুলোর চেয়ে বেশি এবং চাল হবে চিকবন।
রোগপ্রতিরোধক্ষম এ জাতটির বৈরি পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতাও অধিক। জাতটির কৌলিক সারি বিআর ১৫৮-এইচ। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে( বিএআরসি) অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ৮৪তম সভায় কারিগরি কমিটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রস্তাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান-৫কে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের অনুমোদন দিয়েছে।
চাষাবাদের উপযুক্ত সময় ও চাষ পদ্ধতি :
নতুন এ হাইব্রিড জাতটি বোরো মৌসুমে চাষ উপযোগী। বীজতলায় চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময় ১ থেকে ৩০ অগ্রহায়ন (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর)। বীজ বপনের হার হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি। ৩০ থেকে ৩৫ দিন চারার বয়স হলে ১ থেকে ৩০ পৌষ (১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি) মূল জমিতে চারা রোপন করতে হবে। গোছা হতে গোছার রোপন দূরত্ব হবে ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা হবে ১ থেকে ২টি। রোপনের ৫ থেকে ৭ দিন পর হালি দ্বারা মরাগুছি পূর্ণ করে দিতে হবে।
সার ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনা :
ইউরিয়া, টিএসপি, জিপসাম, এমপি ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ সার চারা রোপনের পর তিন ধাপে প্রয়োগ করতে হয়। বিঘাপ্রতি ইউরিয়া ৩৬ কেজি, টিএসপি ১৭ কেজি, এমপি ১৬ কেজি, জিপসাম ৯ কেজি ও জিঙ্ক ১ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম ধাপ চারা রোপনের ১০ থেকে ১৫ দিন পর, দ্বিতীয় ধাপ ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর ও তৃতীয় ধাপ ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। রোগ ও পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
আগাছা দমন ও সেচ ব্যবস্থাপনা :
প্রথম কিস্তির ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় প্রয়োজন হলে উপযুক্ত মাত্রায় আগাছা নাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। জমির সঠিক আইল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে সেচ দিয়ে পানি ১০ থেকে ১৫ দিন বেঁধে রাখতে হবে। ধানে দুধ ( মিল্কিং স্টেজ) আসা পর্যন্ত জমিতে প্রয়োজনীয় পানি বা রসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পরিপক্ব ফসল কর্তন :
সাধারণত ২৫ চৈত্র থেকে ০৫ বৈশাখের (5 থেকে 10 এপ্রিল) মধ্যে ফসল পেঁকে যায়। শীষের অগ্রভাগ থেকে ৮০ ভাগ পেঁকে গেলে ফসল কাটার উপযুক্ত হয়।
ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও হাইব্রিড ধানের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. জামিল হাসান নতুন এ জাত সম্পর্কে বলেন, ` এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য গাছের উচ্চতা ১০৫ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার হয়। কাণ্ড শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। সাধারণত প্রতি গাছে কুশির সংখ্যা ১২ থেকে ১৫। প্রতি হেক্টরে ফলন ৮ দশমিক ৫ থেকে ৯ টন।
তিনি আরো জানান, এর জীবনকাল ১৪৩ থেকে ১৪৫ দিন। দানার আকৃতি সরু ও লম্বা। দানায় শর্করার পরিমাণ শতকরা ২৩ দশমিক ৪ ও প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯ ভাগ । বাণিজ্যিকভাবে বীজ উৎপাদনের জন্য আমন ও বোরো উভয় মৌসুমই উপযোগী। পিতৃ ও মাতৃ সারির জীবনকালের পার্থক্য আমন মৌসুমে ৮ দিন ও বোরো মৌসুমে ১৪ দিন। এ নতুন জাতটির চাষাবাদ বেশ লাভজনক।