আলো প্রকল্প দরিদ্র কৃষকদের উন্নতির পথ দেখাচ্ছে : দারিদ্র্য জয়ের কাহিনী
- নিউজ ডেস্ক
আলো প্রকল্প এখন দরিদ্র কৃষকদের উন্নতির পথ দেখাচ্ছে। দরিদ্র কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে অলটারনেটিভ লাইভলিহুড অপশনস (আলো) শীর্ষক এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। চার বছরের এই প্রকল্পের মাধ্যমে আট হাজারেরও বেশি সুবিধাভোগী পরিবার দারিদ্র্য সীমা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই চার বছরে দরিদ্র কৃষকদের আয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। সেই সঙ্গে তাদের উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ করে। অন্যদিকে ব্যয় কমেছে ১৫ শতাংশ। ফলে তাদের মুনাফা বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
প্রকল্পের শুরু থেকেই সুবিধাভোগী সদস্যরা ২৪০টি গ্রুপে ভাগ হয়ে সঞ্চয় গড়ে তোলে। শুরুতে অবশ্য প্রতিটি গ্রুপকে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেয়া হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরের ছয়টি উপজেলার আট হাজার ৭৪ জন কৃষককে। তারা নিজেরাই প্রত্যেকে প্রতি মাসে একশ টাকা করে দিয়ে স্ফীত করেছে তাদের সঞ্চয়কে। প্রতিটি গ্রুপ ব্যাংকে হিসাব খুলে সঞ্চয় করতে গিয়ে জ্ঞানার্জন করেছে আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে। পাশাপাশি তারা জেনেছে উন্নত চাষাবাদ সম্পর্কে। এক সময় যারা মাটির উর্বরতা সম্পর্কে কিছুই জানত না, তারা এখন নিজেদের জমির মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে চাষাবাদ করছে। এতে তাদের উৎপাদনও বেড়েছে।
এক সময় যারা দাদনে জর্জরিত ছিল, তারা এখন নিজেদের সঞ্চয় থেকেই স্বল্পসুদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিচ্ছে কৃষি কর্মকা-ের জন্য। পাশাপাশি গ্রুপ থেকে লাভজনক খাতে বিনিয়োগও করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ২৪০টি গ্রুপের এখন মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রকল্প শুরুর আগে যারা এক বেলা খেতে পারত। তারা এখন তিন বেলা বেশ ভালভাবেই খেতে পারে। সদস্যদের পরিবারের ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যায়। বাড়িতে নির্মিত হয়েছে পাকা পায়খানা। স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তারা বেশ সচেতন হয়েছে। তাদের প্রবেশাধিকার ঘটেছে স্থানীয় সরকারী স্বাস্থ্য সেবায়। দলবদ্ধ হওয়ার কারণে প্রশাসনের সঙ্গে দর কষাকষির দক্ষতাও বেড়েছে। সচেতন হয়েছে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে। শুধু তাই নয়, এবারের ইউপি নির্বাচনে এই সদস্যদের মধ্যে ১৬ জন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে।
চার বছর মেয়াদী এই আলো প্রকল্পের সফল সমাপ্তিতে সোমবার রাজধানীর ডেইলি স্টার মিলনায়তনে এক কর্মশালায় প্রকল্পের চূড়ান্ত মূল্যায়ন উপস্থাপন করা হয়। মূল্যায়ন প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের জীবন মান উন্নয়নের দিকগুলো। যাকে দারিদ্র্য জয়ের এক সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করা হচ্ছে। যা জাতিসংঘের এসডিজি অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। প্রশ্ন উঠেছে দারিদ্র্য জয়ের এই সফল মডেলকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ট্রেইডক্রাফটের অর্থায়নে চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ডেভেলপমেন্ট হুইল নামক এক এনজিও। এই প্রকল্পের আওতায় গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের একটি শক্তিশালী সংগঠন। এই সংগঠন তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে মেলারও আয়োজন করেছে।
প্রকল্পের মূল্যায়ন সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন ট্রেইডক্রাটের কান্ট্রি ডিরেক্টর শাহেদ ফেরদৌস, ডেভেলপমেন্ট হুইলের নির্বাহী পরিচালক শাহ আব্দুস সালাম প্রমুখ।