মানববর্জ্য থেকে জৈব সার
- নিউজ ডেস্ক
সাতক্ষীরায় মানববর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের জৈব সার। এই সার ব্যবহারে জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশ দূষণরোধ এবং কর্ম সংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভা ও প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে মানববর্জ্য শোধনের জন্য গড়ে ওঠা একটি প্লান্ট প্রতিদিনের বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন করে আসছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভায় বসবাসকারী জনসংখ্যা এখন দেড় লাখ। প্রতিদিন তাদের পরিত্যক্ত বর্জ্যর পরিমাণ ৫০ থেকে ৬০ টন। পরিবার অথবা প্রতিষ্ঠানসমূহের এই বর্জ্য অপসারণ অনেকটাই ঝামেলার বিষয়। যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গন্ধযুক্ত এই বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষণের সুযোগ থেকেই যায়। দুর্যোগকালে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এতে নানা ধরনের রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। বর্জ্য অপসারণে আর্থিক ব্যয়ও কম নয়। বিশেষ করে বস্তিতে বসবাসকারীদের পরিত্যক্ত মল এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির কাজে ব্যবহৃত পুকুরের পানিতেও তা মিশে যায়। পারিবারিক মানববর্জ্য অনেক সময় নিকটস্থ খালে অথবা নদীতে কোনো না কোনোভাবে মিশে যায়। শহরের ড্রেনে পৌঁছে পরিবেশগত দূষণও সৃষ্টি করে। এতে জনস্বাস্থ্যহানিরও সম্ভাবনা রয়ে যায়।
সাতক্ষীরা পৌরসভার কুখরালিতে পয়ঃব্যবস্থাপনা প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এই প্লান্টের মাধ্যমে মানব বর্জ্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২০০০ লিটার মানববর্জ্য এখানে ফেলা হয়। এ থেকে ২০০ কেজি কমপোস্ট সার তৈরি হচ্ছে। কৃষিতে এই সার ব্যবহার করে যেমন রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমছে, তেমনি জমির ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পয়ঃবর্জ্য প্লান্টে মানববর্জ্য দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের সুযোগ থাকছে না। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও এই সার ব্যবহার করে বেশি ফলন পাচ্ছে।
সাতক্ষীরার হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সনাতন পদ্ধতিতে মানব বর্জ্য অপসারণ করে আসছেন। এখন তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নতুন পদ্ধতিতে পয়ঃ অপসারণ করে লাভবান হচ্ছেন। এজন্য তারা প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন।
শহরের সেপটিক ট্যাংক থেকে সরাসরি নর্দমায় মানববর্জ্য ঠেলে দেওয়ার কারণে পরিবেশগত নানা সমস্যা রোধ হচ্ছে পয়ঃবর্জ্যব্যবস্থাপনার কারণে। কর্মকর্তারা বলেন, মানববর্জ্যের ব্যবহার এভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে দিলে কৃষি ও পরিবেশে একটি বড় পরিবর্তন আনা যায়। তাছাড়া সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে মানববর্জ্যের সার ব্যবসায়িকভাবে উৎপাদন করাও সম্ভব বলে জানালেন তারা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জন স্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। তিনি আরো জানান, সুস্বাস্থ্যের জন্য স্যানিটেশন কভারেজ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগের বিকল্প নেই।
সাতক্ষীরার পৌর মেয়র আলহাজ্ব তাজকিন আহমেদ চিশতি জানান, পৗরসভার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পয়ঃবর্জ্য প্লান্টে মানববর্জ্য দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে। অপরদিকে, পরিবেশ দূষণের সুযোগও থাকছে না। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও এই সার ব্যবহার করে বেশি ফলন পাচ্ছে।