মনের রোগ সারাতে মনোচিকিৎসা

মনের রোগ সারাতে মনোচিকিৎসা

মোস্তাফিজুর রহমান : সাইকোথেরাপির খুব ভালো বাংলা “মন:সমীক্ষণ”। সহজ কথায় মনের রোগ বা মানসিক রোগ, যা কখনো কখনো ঔষধ ভালো করতে পারে না, তখন যে পদ্ধতিতে রোগীর মানসিক রোগ চিকিৎসা কার হয় তাকে সাইকোথেরাপি বলে। পারসংখ্যান বলছে, উন্নতবিশ্বে সাইকোথেরাপি এখন অনেকের দৈনন্দিন জীবনের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাড়িয়েছে! এক পরিস্যংখান মতে, শুধু ২০০৮ সালে, ৪০ মিলিয়ন আমেরিকান মানসিক স্বাস্থের চিকিৎসা নিয়েছে। যদি আপনি কখনো থেরাপি না নিয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমবার থেরাপি নেওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার কাছে কিছুটা রহস্যের মত মনে হতে পারে।

যারা ইতিমধ্যে ঠিক করেছেন, থেরাপি নিবেন কিন্তু জানেন না এটা কিভাবে শুরু করতে হয় অথবা শুধু কৌতুলহ থেকে জানতে চান – এটা কি, কেন এবং কিভাবে করতে হয়; তারা নিচের নির্দেশনাগুলো লক্ষ করুন : জেনে নিন সাইকোথেরাপির কিছু বিশেষ জ্ঞাতব্য:


মন:শক্তি থেরাপি: মনোজাঙ্গমিক বা মনঃশক্তি থেরাপি হল শুধু কথা বলা। সুনির্দিষ্টভাবে রোগিকে তার চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা এমন কি যা ইচ্ছা তাই বলতে বলা হয়, তার অজ্ঞত, অসতর্ক আচরণকে সম্মুখে আনার জন্য। যাতে সে খুব সহজভাবে নিজেই সমস্যাটা ধরতে পারে এবং পরিবর্তিত হতে পারে। শুধু মাত্র নিজের সমস্যা ব্যাখা করতে আগ্রহী রোগীদের ডিপ্রেশন, উদ্বেগ এবং কিছু পেনিক-সংক্রান্ত সমস্যা এই পদ্ধতিতে সমাধান করা সম্ভব। এই থেরাপি একটা নির্দিষ্ট সময় অথবা লম্বা সময় জুড়ে হতে পারে। তবে সর্বচ্চ ২ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এই থেরাপির প্রয়োজন হবে। রোগীকে তার মনে যা কিছু হচ্ছে তা স্বাভাবিকভাবে নিতে বলা হয়।

জ্ঞান থেরাপি: এই পদ্ধতিতে আমরা আমাদের নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করতে পারি। জ্ঞানীয় আচরণগুত থেরাপি স্বল্পমেয়াদী এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ নির্দেশি। থেরাপিষ্ট এবং রোগী একসাথে কাজ করে রোগীর আচরণগত সমস্যাগুলো খুজে বের করে এবং তা পরিবর্তন করতে একটা কর্মপরিকল্পরা স্থির করে। ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, না খেতে চাওয়া, মেজাজ ভালো না থাকা, বিতৃষ্ণায় এই থেরাপি কার্যকর। এটা ৪ থেকে ৭ মাস ব্যাপি হতে পারে।

পারিবারিক থেরাপি: পরিবার একটি সংঘবদ্ধ মানুষের দল, যা আলাদা আলাদা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালি এবং বর্তমানের মত একটা পপ সংস্কৃতির জেনারেশনের চেয়ে অনেক বেশি সংগ্রাম, টানপোড়েন, মানসিক দন্দ মোকাবেলা করতে সক্ষম। আশার কথা, পরিবারিক বন্ধন কাঠামোর মধ্যেই পারিবারকি থেরাপি বিবেচনা করা হয়। পারিবারের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং পারিবারিক বন্ধন সুদৃড় করার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সমাধান করা য়ায়। মানসিক রোগ, খাদ্যে অনিয়ম, কোন কিছুর অপব্যবহার, জিনিসপত্র ভাংচুর, এই ধরনের সমস্যাগুলো পরিবারিক থেরাপির মাধ্যমে মোকাবেলা করা হয়।

এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা স্বল্পমেয়াদী। তবে সমস্যার তীব্রতার উপর নির্ভর করে সময় নিরুপন করা হয়। সাধারণত পরিবারের সাথে থেকেই এই থেরাপি দেওয়া হয় এবং থেরাপিস্ট পরিবারের সদস্যদের কেউ হয়ে থাকে।

দলগত থেরাপি: যে সব মানুষ সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্র এবং জীবনের নানা পরতে চ্যালেঞ্জ এবং দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই থেরাপি কার্যকর। সেই সব লোকের মাধ্যমে একটি সহায়ক গ্রুপ করে কাজ করুন, যারা একই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছে; কোন কিছু হারানো বা কোন গভীর মানসিক আঘাতের কারনে যারা বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তায় বিচলিত থাকেন, তবে এই সমস্য সমাধানে অন্যান্য কয়েক জনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। গ্রুপিং প্রত্যেককে পরষ্পর সমন্ধে অনেক জানতে এবং সমস্যা বুঝতে সহায়তা করে। ফলে পরষ্পর থেকে প্রচুর ফিডব্যাক পাওয়া সম্ভব হয়।

এই থেরাপি ৬ থেকে ২০ সপ্তাহ স্থায়ী হওয়া প্রয়োজন। থেরাপিস্ট ৫ থেকে ১০ জনের একটা গ্রুপ করেন যারা একই ধরনের সমস্যা বা দ্বন্দ্বে ভুগছেন। থেরাপিস্টের নির্দেশনায় ঐ গ্রুপটি ৭৫ থেকে ৯০ মিনিট-এর অনেকগুলো আলোচনায় অংশ নেয় এবং করনীয় নির্ধারণ করেন।

ন্যায়শাস্ত্রীয় থেরাপি: আত্মঘাতী চিন্তার সাথে ব্যাক্তিসত্তার উন্নতির বিষয়টা সাংঘর্ষিক। চুড়ান্ত ব্যাক্তিত্ব বিবর্জিত মানুষ – বিশেষ করে যারা অস্থির ভাবমুর্তির, বিষন্ন, আত্মঘাতী চিন্তা চেতনায় মত্ত, চরম প্রতিক্রিয়াশীল এবং ভয়ভীতিহীন তাদের ক্ষেত্রে এই থেরাপি কার্যকর। যেসব ব্যাক্তিরা চরম ব্যাক্তিত্ব বর্জিত অর্থাৎ নিয়ন্ত্রনহীন আবেগি, দ্রুত মেজাজ পরিবর্তনশীল, অহেতুক শুন্যতা ভোগকারী তারা গভীর কোন না কোন মানসিক আঘাত বা নির্যাতনের শিকার।

সাধারণত এই থেরাপি ১ বছর সময় নেয়। তবে রোগীর মানসিক অবস্থার উন্নতির সাথে কালক্ষেপন সম্পর্কিত। সাপ্তাহিক থেরাপিতে আন্তঃব্যাক্তিগত দক্ষতা অর্জন এবং সমস্যা সমাধান সুক্ষভাবে শেখানো হয়। নিজেদের আরও দক্ষ করতে রোগীরা গ্রুপ ভুক্ত হয়ে সেবা নিতে পারে।

ইন্টারনেট থেরাপি: অন্যকে বিশ্বাস করা, তার তারিফ করা এবং সকল প্রকার সম্পর্ক শক্তপোক্ত হওয়া বাঞ্চনিয়। সাধারণত বিষন্নতা রোগীর বাবা-মা, আত্মিয়-স্বজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগে অনিহা সৃষ্টি করে, তাই ইন্টারনেট থেরাপি রোগীর সম্পর্কের উপর নজর দেয় এবং এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। সর্বাধিক ২০ সপ্তাহ সময় লাগে এমন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাক্তির আন্তঃব্যাক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিষণতা দুর করা যায়।

প্রথম দর্শনে আলোচনাটি পরষ্পর সম্পর্কিত এবং একই কথা বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, না। থেরাপিগুলো আলাদা আলাদা বিশ্লেষনের দাবি রাখে বিধায় স্ববিস্তারে বর্ননা করা হল। কারণ এটা এমন রোগ নিয়ে আলোচ্য যে রোগের কার্যত কোন ঔষধ হয় না। মানসিক রোগ থেকে বেচে থাসুন; সুখি হন।

হাফিংটোন পোষ্ট এবং বিভিন্ন গবেষণা অবলম্বন
মডেল: মাঞ্জুমা তুষি
ফটোগ্রাফি: এস এম রাসেল  favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment