মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে জীবনের প্রকৃত অর্থ !

মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে জীবনের প্রকৃত অর্থ !

সাদিয়া ইসলাম: সম্প্রতি এক গবেষনায় পাওয়া যায়, প্রযুক্তির উৎকর্ষের দরূন আমাদের সবার হাতে হাতে থাকা মোবাইলটি আদতে আমাদের জন্যে অতটা সুখকর ব্যাপার নয়। এমনিতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সব ধরনের দুরত্বকে দূরে ঠেলে দিয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তকে এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছে মোবাইল নামের এই ছোট যন্ত্রটি। তবে ইতিবচক এই কাজটির বদলে এটি ছিনিয়ে নিয়েছে মানুষের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়কে। গবেষনায় দেখা যায়, বর্তমানে মোবাইল ফোন যারা ব্যবহার করছেন, তাদের চেয়ে কয়েক গুন অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করেন সেই ব্যাক্তিরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না। কিন্তু কি করে? আসুন জেনে নিই।


১. বাস্তব সম্পর্ক উপভোগ:

মোবাইল ব্যবহারকারী ব্যাক্তিরা সামনের সত্যিকারের আর কাছের মানুষটির চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন মোবাইলের অপর পাশের মানুষ কিংবা তাদের বার্তা নিয়ে। এতে করে তারা বাস্তব সব সত্যিকারের সম্পর্ক থেকে চলে যান অনেক দূরে। অন্যদিকে মোবাইল যারা ব্যবহার করেন না এদিক দিয়ে তারা থাকেন সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন ধরনের বাড়তি পিছুটান ছাড়াই নিজের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে থাকা মানুষগুলোকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তারা।

২. সত্যিকারের পৃথিবীকে জানা:

মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্যে সময় কাটানোর অন্যতম একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে গেমস আর গান আর এই দুটোর প্রত্যেকটিকেই তারা পেতে পারেন বাস্তব পৃথিবীতে। সত্যি বলতে কি এই অবাস্তব দুনিয়ার মোহে পড়ে সত্যিকারের মাঠে ফুটবল নিয়ে দৌড়ানোর আনন্দ, গলা খুলে সবার সাথে গানের কলি খেলার মত ব্যাপারগুলো ভুলেই যান তারা। এগুলো থেকে অনেকটা দূরে চলে যান । কৃত্রিমতায় ভরে যায় তাদের জীবন।

৩. মানসিক চাপমুক্ত থাকা:

টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত মিশোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষনায় জানা যায়, ক্লাসের ভেতরে মোবাইল বেজে উঠলে এবং সেটা ধরতে না পারলে শিক্ষার্থীদের রক্তচাপ আর হৃদকম্পন আশংকাজনকভাবে বেড়ে যায়। এছাড়াও ভিন্ন দুটি গবেষনায় জানা যায় যে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের চেয়ে এটি যারা ব্যবহার করে না তারা বেশি ভালো আর খুশি থাকেন। শুধু তাই নয়, মোবাইল ঘুমের ক্ষেত্রেও বাঁধা তৈরি করে। আর এসবই একজন মানুষকে নিয়ে যায় উত্তরোত্তর মানসিক চাপের দিকে। অথচ মোবাইল যারা ব্যবহার করেননা তারা এসব সমস্যা থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকেনে । হাসিখুশি থেকে, মানসিকভাবে থাকেন একেবারেই চাপমুক্ত।

৪. কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা:

মানুষ তখনই ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে পারে আর মনযোগ পুরোটা দিতে পারে যখন তার সবটা ইন্দ্রিয় থাকে কেবল একটি দিকে। কিন্তু মোবাইল আমাদের জীবনকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভাগ করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বার্তা ও কলসহ আরো অনেকগুলো ব্যাপারে একইসাথে মোবাইল টেনে রাখে আমাদের মনযোগকে। যা খানিক পরপর আমাদের কাজ আর কাজের প্রতি মনযোগকে বাধা দেয়। ফলাফল হিসেবে কাজে সমস্যা দেখা দেয় ও পুরোটা না দিতে পারার জন্যে সাফল্য আসে না। পিছিয়ে পড়তে হয় কর্মক্ষেত্রে। যে সমস্যাটায় অন্যদেরকে ভুগতে হয় না।

৫. চারপাশকে আবিষ্কার করা:

ভাবুন তো, এমন একটি স্থানের কথা, যেখানে আপনারা সব বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছেন এবং ঘটনাক্রমে আবিষ্কার করেছেন যে সেই পুরো জায়গাটিতে আছে বিনামূল্যের ইন্টারনেট সেবা? কি হবে এরপর? ঠিক কয়জন মোবাইল ব্যবহারকারী এই তথ্যটি জানবার পর পুরোটা মনোযোগ দিতে পারবেন চারপাশের প্রকৃতি বা পরিবেশে? এর বদলে দেখা যাবে সবাই খানিক পরপর বসে পড়ছেন মোবাইল নিয়ে। ঢুকে পড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকটাই পন্ড হয়ে যাচ্ছে ঘুরতে আসার মজা। কিন্তু কেমন হবে যদি আপনাদের কারো হাতেই না থাকে মোবাইল ফোন? ঠিক ধরেছেন। পুরো দৃশ্যই উল্টে যাবে। আর তাই সবটা দিক বিবেচনা করে এবার আপনিই সিদ্ধান্তে আসুন আদতেই মোবাইল আপনাকে ছিনিয়ে নিচ্ছে কিনা জীবনের প্রকৃত অর্থ থেকে?

রচনা: সাদিয়া ইসলাম
মডেল: রুমাইয়া রেজা
ফটোগ্রাফি: এস এম রাসেলfavicon

Sharing is caring!

Leave a Comment