ওজন কমানোর ডায়েট ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

ওজন কমানোর ডায়েট ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

  • ডা. এম আমির হোসেন

যে জিনিস জাদুকরী ফল দেয়, সেই জিনিসে প্রায়শই ভেজাল থাকে। অনেকে ইউটিউবে দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলার তরিকা দিচ্ছেন; ওষুধ না খেয়ে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হৃদরোগ প্রভৃতি ব্যধিসমূহ ভালো করার বিভিন্ন বয়ান দিচ্ছেন। বিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান, বিশ্বাস প্রভৃতি মিলিয়ে এই বয়ানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ওষুধ-খাওয়া কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল ব্যাপার। অনেক রোগে দীর্ঘদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হয় যা রোগীরা পছন্দ করে না। জনপ্রিয় ইউটিউবাররা রোগীদের এই মনস্তত্ত্বকে সুযোগ হিসাবে নেয়। তারা কিছু নিয়ম-পদ্ধতি বাতলে দেয় যা রোগীদের জন্য সহজ ও স্বল্প ব্যয়ের। মনে রাখবেন, বিজ্ঞান হলো যুক্তিগ্রাহ্য জ্ঞান; কেবল বিশ্বাস নয়। ভালো থাকার কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। চিকিৎসা হতে হবে চিকিৎসকের মনের মতো, আপনার মনের মতো নয়। অল্প-বিদ্যা ভয়ঙ্করী, ভুল-বিদ্যা প্রলয়ঙ্করী।

ওজন কমানোর জন্য বর্তমানে কিটোজেনিক ডায়েট নিয়ে খুব প্রচার হচ্ছে। যে ডায়েটে ৬০-৯০% ফ্যাট, ৬-৩০% প্রোটিন এবং ৪-১০% কার্বোহাইড্রেট থাকে তাকে কিটোজেনিক ডায়েট বা লো-কার্ব ডায়েট বলে। সাধারণত আমরা খাবারে কার্বোহাইড্রেট তথা শর্করা বেশি খাই। এই ডায়েটে শর্করা থাকে সবচেয়ে কম। মৃগীরোগের শিশুদের কেউকেউ এ ধরণের ডায়েটের পরামর্শ দেন। ওজন কমানোর জন্য অনেকে এই ডায়েট ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিটোজেনিক ডায়েটের উপকারিতা মৃগীরোগীদের জন্য কিছুটা থাকলেও এই ডায়েটের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। পরিপাকতন্ত্র, হৃৎপিণ্ড, কিডনিসহ আরও অনেক অঙ্গে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ডাক্তার বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ ছাড়া ফেইসবুক কিংবা ইউটিউবের প্রচারে প্রভাবিত হয়ে এই ডায়েট গ্রহণ করবেন না। শুধু ডায়েট দিয়ে কখনো রোগ ভালো হয় না, যথাযথ ম্যানেজমেন্ট লাগে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি রোগের ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করবেন না। কিটোজেনিক ডায়েটের সাইড এফেক্টগুলো নিম্নরূপঃ

ভিটামিন, মিনারেল ও ইলেক্ট্রলাইটের ঘাটতি : যারা কিটোজেনিক ডায়েটিং ফলো করেন তাদের শরীরে বিভিন্ন ভিটামিন (প্রধানত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স) এর ঘাটতি দেখা যায়। এছাড়া তাদের শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যামাইনো এসিডের ঘাটতিও তৈরি হয়। এই উপাদানগুলো সুস্থ শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই ডায়েট রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রায় পরিবর্তন আনে যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ডায়েট গ্রহীতাদের তাই ক্লান্তি, অবসাদ, শরীর ব্যাথায় ভুগতে দেখা যায়।

হৃদরোগ : কিটোজেনিক ডায়েটের কারণে হার্টের রিদম অনিয়মিত হতে পারে। হার্টের পেশি দূর্বল হয়ে কার্ডিওমায়োপ্যাথিও দেখা দিতে পারে।

পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা : কিটোজেনিক ডায়েট যারা করেন তারা প্রায়শই ডায়রিয়া, বমি, ডিসপেপসিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ব্যথার অভিযোগ করে থাকেন।

লিভারের সমস্যা : দীর্ঘদিন কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণ করলে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ সৃষ্টি করতে পারে যা ধীরে ধীরে লিভারকে নষ্ট করে দেয়। ফ্যাট ও প্রোটিনকে ভেঙ্গে গ্লুকোজ উৎপাদনের জন্য লিভারের উপর প্রচুর চাপ পড়ে বলে রক্তে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

কিডনি পাথর : এই ডায়েটের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। কিটোজেনিক ডায়েট অনুসরণ করেছে এমন ২০ জনের মধ্যে ১ জন শিশু কিডনি-পাথরের সমস্যায় ভোগে। ওজন কমানোর জন্য যারা এই ধরণের ডায়েট অনুসরণ করে তাদের মাঝেও কিডনি পাথরের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।”

ডা. এম আমির হোসেন

মেডিসিন ও নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ

Sharing is caring!

Leave a Comment