রোজ এক ঘন্টা হাঁটুন, বহুবছর বাঁচুন

রোজ এক ঘন্টা হাঁটুন, বহুবছর বাঁচুন

শিমি আক্তার : হাঁটার কথা শুনলেই এক ধরণের আলসেমি কাজ করে। কিন্তু নিয়মিত হাঁটা যে কতটা জরুরী তা কি আলাদা করে কখনো ভেবে দেখেছি ? হাঁটলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।ওয়াশিংটনের ওয়েটরন অ্যাফেয়ার্স মেডিকেল সেন্টার ও ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টো সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটলে মানুয়ের আয়ু বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে পিটার কোংস জানিয়েছেন, মৃত্যুকে আটকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু ঠিকমত শরীর চর্চা করে মানুষের জীবনের আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব। সুতরাং, শুধু হাঁটার মাধ্যমে একজন মানুষ শতকরা ৮০ ভাগ সুস্থ থাকতে পারে। তাই নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়াও নিয়মিত হাঁটার ফলে হাড়ের বৃদ্ধি ঘটে। পায়ের গঠন ভালো থাকে। পেটের ভেতরকার পেশি ও ফুসফুসের উপকার পাওয়া যায়। পেট পরিস্কার হয়। দেহের ভেতরে অতিরিক্ত চর্বি জমলে বা ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হাঁটার ফলে এ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়। শুধুমাত্র যাঁরা অসুস্থ কেবল তাঁরাই হাঁটবেন এমন নয়, সুস্থ শরীরেও হাঁটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চলুন জেনে নিই সবিস্তারে :


কোথায় হাঁটবেন :

গ্রামে হাঁটার জায়গার অভাব না হলেও শহরের বাসিন্দাদের, বিশেষ করে ঢাকার লোকদের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে কোথায় হাঁটবো? শহরের নাগরিক জীবনে হাঁটার নিরাপদ যায়গার অভাব বোধ করেন অনেকে। তাঁরা বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি বা লনে হাঁটতে পারেন। এছাড়া খোলা মাঠ, পার্ক, ফুটপাত ইত্যাদি যায়গাতেও হাঁটা যেতে পারে। হাঁটার জন্য সমতল যায়গা বেছে নেয়া ভালে। আর এমন ভাবে হাঁটা উচিত যাতে শরীরে কষ্ট না হয়। যাঁরা বাইরে হাঁটতে সংকোচ বোধ করেন, তাঁরা বাড়ির পাশে খোলা যায়গা থাকলে সেখানে নিয়মিত হাঁটতে পারেন। আজকাল যেখানে সেখানে অসংখ্য ছোট বড় জিম দেখা যায়, আপনি যদি হাঁটার জন্য নিরাপদ যায়গা না পান সেক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত জিমে গিয়ে জিম ট্রেইনারের সাহায্য নিতে পারেন।

কখন হাঁটবেন :

সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা বা রাত যখনই সময় পাবেন হাঁটার জন্য বেছে নিতে পারেন সেই সময়কে। হাঁটার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। সাকালের পরিবেশ সাধারণত সুন্দর, শান্ত ও দূষণমুক্ত থাকে। এ সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য শরীরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নেয়া যায়। তাই উৎকৃষ্ট সময় হিসেবে এই সকালকে বেছে নিতে পারেন। এছাড়া সকালে হাঁটার ফলে মনের মধ্যে এক ধরনের বিশুদ্ধতার আনন্দ তো রয়েছেই। শুধু সকালেই নয়, বিকেল বেলাতে হাঁটলেও যে মন ভালো থাবেনা তা নয়, হাঁটার জন্য আপনার পছন্দের সময়কেই গুরুত্ব দিন। শরীর বেশি অসুস্থ থাকলে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন। রোগীদের ক্ষেত্রে হাঁটার সময় নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, চিকিৎসকদের মতে ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাঁটা অত্যন্ত জরুরী।

কেমন পোশাক পরবেন :

হাঁটার জন্য সবসময় ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত, খেয়াল রাখতে হবে যেন পোশাকে অবশ্যই বাতাস চলাচল করতে পারে। শীতকালে গরম পোশাক পরা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ট্র্যাকস্যূট বেছে নেয়া সবচেয়ে উত্তম। হাঁটার জন্য জুতাকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। মেয়েদের হাঁটার সময় হিল বা স্লিপার পরে হাঁটা ঠিক নয়। উভয়ের হাঁটার জন্য কেডস্ বেছে নেয়াটাই উত্তম। কিছু কিছু সু কোম্পানী হাঁটার জন্য বিশেষ সু বা কেডস তৈরি করে, মার্কেটে খোঁজ নিয়ে এগুলো কিনতে পারেন।

হাঁটা সংক্রান্ত কিছু নির্দেশিকা :

  • হাঁটতে যাওয়ার ঠিক আগেই কিছু না খাওয়া ভালো, তবে বেশি ক্ষুধা লাগলে খুব হালকা কোনো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা যেতে পারে। হাঁটা শেষ করে সাথে সাথেই ভারী খাবার খাওয়া ঠিক নয়, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খাওয়া উচিত, বিশ্রাম শেষে পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন।
  • বিভিন্ন বয়সি লোকদের জন্য বয়স ভেদে হাঁটার সময় নির্ধরণ করা প্রয়োজন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১ থেকে দেড় ঘন্টা এবং চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের জন্য আধাঘন্টা করে, সকাল ও বিকাল দুইবার মিলিয়ে ১ ঘন্টা পর্যন্ত হাঁটা যেতে পারে।
  • প্রথমে ২০ মিনিট হাঁটুন, এরপর সময়ের পরিমাণ বাড়িয়ে ১ ঘন্টায় নিয়ে আসুন । ১ ঘন্টা হাঁটলে প্রায় ২০০ কিলো ক্যালরি ক্ষয় হয়। মেদ কমানোর জন্য এতটুকু সময়ই যথেষ্ট। তবে ১ঘন্টা হাঁটতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। শরীর যতটা নিতে পারে ততটাই হাঁটা উচিত।
  • হাঁটার গতি সবসময় একই থাকা উচিত। পুরো সময় ধরেই একটি নির্দিষ্ট ছন্দে হাঁটা উচিত। তবে মাঝে মাঝে মধ্যমগতি থেকে দ্রুতগতিতে আবার দ্রুতগতি থেকে মধ্যমগতিতে হাঁটা যেতে পারে।

মৃত্যুকে আটকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু ঠিকমত শরীর চর্চা করে মানুষের জীবনের আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব। সুতরাং, শুধু হাঁটার মাধ্যমে একজন মানুষ শতকরা ৮০ ভাগ সুস্থ থাকতে পারে।

  • মধ্যম গতিতে হাঁটলে সাধারণত ২০০ থেকে ৩০০ কিলো ক্যালরি এবং দ্রুত গতিতে হাটলে প্রায় ৪০০ কিলো ক্যালরি পর্যন্ত পুড়তে পারে।
  • হাঁটার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে, এ সময় লম্বা করে শ্বাস নেয়া ভালো।
  • হাঁটার পরপরই গোসল না করে শরীর সম্পূর্ণ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন । সঙ্গে সঙ্গে গোসল করলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
  • অল্প হাঁটলে যারা ক্লান্ত হয়ে পড়েন তারা দ্রুতগতিতে না হেঁটে মধ্যমগতিতে হাঁটলেও উপকার পাবেন।
  • শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিজস্ব রুটিন মেনে বা চললে অনেকটা মেদ কমে আসবে। যেমন-নিজের কাজটা নিজে করা, মেডিটেশন করা, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করা, নিয়মিত বাচ্চাদের সময় দেয়া ইত্যাদি। নিয়মিত ডায়েটের মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যায়।
  • হাঁটার ক্ষেত্রে মোটা, রোগা বা পাতলা মানুষের কোনো ব্যাপার নেই। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে দম ও সময়ের কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
  • হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন না করে হাঁটা উচিত নয়।

রাস্তা, পার্ক বা অন্যান্য যায়গায় যাঁরা হাঁটতে চান না বা হাঁটার বিকল্প পথে যেতে চান তাঁরা হাঁটার বিকল্প হিসেবে মেশিনের সাহায্যও নিতে পারেন, মেশিনের কার্যকারিতাও শতভাগ, আবার জিমেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন জিম। তবে নিয়মিত বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মেশিনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জিমে ভর্তি হওয়ার আগে জেনে নিন এর নিয়ম-কানুন, খরচ কত, কোর্স কতদিনের, এছাড়াও কোনো বিশেষ ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে কিনা, ইত্যদি।

মডেল : শারমিন ইসলাম স্নিগ্ধা
ফটোগ্রাফি : এস এম রাসেল favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment