দৌড়ানোর ৭ মন্ত্র

দৌড়ানোর ৭ মন্ত্র

সাবরিনা তাবাসসুম : “আমি দৌড়াতে ভালোবাসি’’ জানি এটা শুনলে আপনি হয়ত বিরক্ত হবেন। ভাববেন কী বিরক্তিকর মানুষ রে বাবা! আমার মত এমন অনেক বিরক্তিকর মানুষকেই হয়ত আপনি চেনেন যারা হেসে হেসে ট্রেডমিল করেন, সারাক্ষণ বিভিন্ন ট্রেইনিং এর কথা বলেন এবং দৌড়াদৌড়ি আর খাওয়া দাওয়ার মধ্যেই থাকেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমরা আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না। সুস্থ থাকতে হলে যে সব সময় আপনাকে দৌড়ের উপরেই থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। তাছাড়া পৃথিবীতে আরও কত হাজার রকমের ব্যায়াম রয়েছে। এই ছোট্ট জীবনে যেটা আপনি পছন্দ করেন না তার পেছনে দৌড়ানোরই বা দরকার কী? তার চেয়ে বরং নিজেই খুঁজে নিন যা করতে আপনার পছন্দ।

কিন্তু তাই বলে ভাববেন না এ বিষয় থেকে আপনি রেহাই পেয়ে গেলেন। হতেই পারে, ব্যায়ামের কথা ভাবতেই আপনার ক্লান্ত লাগে। তারপরও একটু চিন্তা করে দেখুন, টিভির সামনে সোফায় চিৎ-কাত হয়ে পড়ে থাকার চেয়ে একটু নড়াচড়া করা নিশ্চয় ভালো। তাতে শরীর বাড়তি শক্তি পাবে। আপনার দৌড়ানো আরও উপভোগ্য করতে নিচের উপায়গুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।


০১। দৌড়ান-হাঁটুন-দৌড়ান

আগেই বলেছি সারাদিন দৌড়াতে হবে এমন কোন কথা নেই। দৌড়ানোর মাঝে মাঝে একটু হাঁটার বিরতি নিন। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, দীর্ঘ দূরত্বে দৌড়ানোর সময় দৌড়ানোর মাঝে নিয়মিত বিরতিতে হাঁটা ভালো। আপনি প্রথমেই আপনার দূরত্বকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ভাগে মনে মনে ভাগ করে নিন এবং ঠিক করে নিন কোন অংশটি আপনি হাঁটবেন এবং কোন অংশটি আপনি দৌড়াবেন। একটানা দৌড়ের একঘেয়েমি যেমন কেটে যাবে একই সাথে আপনার শরীর ও মন অবসন্ন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। কারণ এতে একদিকে আপনি আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে যেমন দৃঢ় থাকবেন অপর দিকে যতগুলো ভাগ আপনি পার হবেন এবং ফিনিশ লাইনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবেন ততই আপনার জয়ের আনন্দ বাড়তে থাকবে।

০২। হাল ছেড়ে দিবেন না

না দৌড়ানোর হাজারটা অজুহাত আছে। যেমন-“আজ অনেক ঠান্ডা। কাল দৌড়াব।”, “আজ খুব ক্লান্ত লাগছে, কাল না হয় শুরু করি” বা “ইশ! দৌড়ানোর পর পায়ে ব্যথা করবে।” এ সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে একটু আশাবাদী হন এবং নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দৌড়ানো শুরু করার আগে আপনার সম্প্রতি কোন পজিটিভ কথা বা সাফল্যের স্মৃতি মনে করুন। হতে পারে সুন্দর কোন এক সকালের স্মৃতি যখন আপনি দৌড়াতে খুব পছন্দ করতেন – যা আপনাকে উৎফুল্ল মনে দৌড়ানোতে সাহায্য করবে।

০৩। খেলতে থাকুন

ফুটবল, সফট বল, বাসকেট বল, হকি যেটা ভালো লাগে সেটা শুরু করুন। অফিসের কলিগদের অথবা বন্ধুদের মাঝে যারা বিভিন্ন খেলাধূলার সাথে জড়িত আছেন তাদের দলে ভিড়ে যান। ব্যায়াম করার চাইতে খেলাধূলা করাটা অনেক বেশি সহজ হতে পারে। ২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোন সাধারণ ব্যায়াম হিসেবে দৌড়ানোর চাইতে কোন খেলার প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ থাকে, যেখানে ওজন কমানোর চাইতেও খেলায় জয়ের আনন্দ আর উত্তেজনা তাদের কাছে মূখ্য হয়ে ওঠে। সুতরাং খেলতে থাকুন।

০৪। ব্যায়ামের সঙ্গী যখন বন্ধু

যে কোন এক বন্ধুকে দৌড়ানোর প্রতি উৎসাহিত করুন। দেখবেন দুজনে মিলে দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে মাইলের পর মাইল পার হচ্ছেন টেরই পাবেন না।

০৫। হাসতে থাকুন

নিজেকে দেখানোর জন্য হলেও হাসতে থাকুন। দৌড়ানোর সময় খুশি থাকার জন্য চেষ্টা করুন। এমন কি আপনার পাশাপাশি কেউ যদি ট্রেডমিলে মুখে হাসি ধরে রেখে দৌড়াতে থাকে তাহলে আপনিও তার সাথে যোগ দিন। সেই হাসি যদি মেকিও হয় মনে রাখবেন এক সময় না এক সময় সেই হাসি আপনার অবসাদ কমাতে সাহায্য করবে।

০৬। ছন্দের সাথে দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন

আপনি জানেন কী আপনার সঠিক গানের লিস্টটি আপনার দৌড়ানোকে আরো আনন্দময় ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী গান শুধু মানুষকে ব্যথা আর ক্লান্তি থেকেই দূরে রাখে না বরং মন প্রফুল্ল করে, সহ্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এমনকি বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। গান শুনতে শুনতে কখন যে আরও এক মাইল পার হয়ে গিয়েছেন বা অনেক সময় ধরে সাইকেল চালাচ্ছেন বা সাঁতার কাটছেন টেরই পাবেন না। ২০১২ সালে লন্ডনে অবস্থিত ব্রুন্যাল ইউনিভার্সিটির কোস্টাস কারাগিওরগিস নামে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যায়ামের উপর সঙ্গীতের প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, গান হচ্ছে এক ধরনের পারফরম্যান্স বৃদ্ধিকারক ড্রাগ।

০৭। নির্দিষ্ট বিরতিতে গতি বৃদ্ধি

অনেক সময় দৌড়াতে দৌড়াতে হতাশা এসে ভর করে এভাবে – “কখন যে দৌড়ানোটা শেষ হবে।” এক্ষেত্রে একটি সমাধান হচ্ছে আপনার দৌড়ানোর দূরত্বটাকে সমান কয়েকটি ধাপে ভাগ করে, প্রতি ভাগে ধীরে ধীরে গতি বৃদ্ধি করা। তাহলে বেশি সময়ের জন্য দৌড়িয়ে আপনি যে ফল পেতেন তা অল্প সময়ে অধিক বেগে সমান দূরত্বে দৌড়ে আপনি একই ফল উপভোগ করতে পারবেন। যেমন আপনি ট্রেডমিলে যখন দৌড়াবেন তখন প্রথম ২ মিনিট যে গতিতে দৌড়াবেন, তার পরের ১ মিনিট আরও জোরে দৌড়াবেন। পরবর্তী সময়ে আবার আগের বেগে ফেরত আসবেন। এরকম করলে আপনার এই ব্যায়ামের সময়টা কমে আসবে কিন্তু একই পরিমাণ কার্ডিও উপকার পাবেন।

উপরের সব তো পড়লেন কিন্তু এগুলো করা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি আপনার জুতোর ফিতা বেঁধে একদম রেডি হয়ে নেমে পড়বেন। দৌড়ানোর জন্য সবারই প্রেরণার প্রয়োজন। এমন কি আমার মত যারা দৌড়াতে ভালোবাসে তাদেরও প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আপনি চিন্তা করে দেখুন যে আপনি ভবিষ্যতে নিজেকে কীভাবে দেখতে চান? যদি কোন সন্দেহ থাকে মনে তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন- “দৌড়ানোর পর কি আমার আরও ভালো লাগবে?” যদি দৌড়ানোর পর আপনি খুব অসুস্থ না হন, বা নিদ্রাহীনতায় না ভোগেন, তাহলে আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে দৌড়ানোর পর আপনি সব সময় ভালো বোধ করবেন।

লেখক : সারাহ ক্লেইন
হাফিংটন পোষ্ট থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : সাবরিনা তাবাসসুম
মডেল : শারমিন ইসলাম স্নিগ্ধা
ফটোগ্রাফি : এস এম রাসেল

Sharing is caring!

Leave a Comment