সুস্থ থাকুন মাত্র তিনটি কলায় !

সুস্থ থাকুন মাত্র তিনটি কলায় !

সাদিয়া ইসলাম: বারোমাস বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কারণে – অকারণে যে ফলটি প্রায় সময়েই মজুদ থাকে তা হল কলা। আঙ্গুর, আপেলের মত দামী নয়, কিন্তু খুবই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। সহজেই পেট ভরিয়ে দেওয়া বারোমেসে এই ফলটিকে দেখতে পাওয়া যায় ধনী-গরীব ভেদে সবার বাড়িতেই। সকালের প্রাতঃরাশ, বিকেলের নাস্তা, দুধ-ভাতের সাথে, কাস্টার্ড বা স্কোয়াশের মতন নানারকম খাবারে, কিংবা একেবারে এমনিতেই প্রায়ই আমাদের খাওয়া পড়ে এই সহজপ্রাপ্য ফলটি। কিন্তু এতটা কলা খাওয়া কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো?

বিশেষজ্ঞদের মতে- হ্যাঁ! ভালো। আর কেবল ভালোই নয়, প্রতিদিন একজন মানুষকে তিনটি করে কলা খাওয়ারও পরামর্শ দেন তারা। গবেষনায় পাওয়া যায় একজন মানুষের ভেতরে অসাধারন ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিতে পারে তার প্রতিদিনের কলা খাওয়ার অভ্যাস। আসুন জেনে নিই প্রতিদিন তিনটি করে কলা খেলে ঠিক কি কি উপকারিতাগুলো পাবেন আপনি।


১. রক্তচাপ কমায়:

প্রতিদিন অন্তত তিনটি কলা গ্রহন করলে মানুষের রক্তচাপ কমে যায়। গবেষনায় দেখতে পাওয়া যায় যে, তিনটি কলায় থাকে ৪২২ মিঃগ্রাঃ পটাশিয়াম আর খুবই অল্প পরিমাণে সোডিয়াম, যা আমাদের শরীরের জন্যে খুবই উপকারী। আর এই অল্প সোডিয়ামসহ বেশিরভাগ পটাশিয়াম খুব সহজেই আমাদের শরীরের সোডিয়ামের কারণে হওয়া উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে।

২. হজমে সাহায্য করে:

কলার ভেতরে থাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে খুব ধীরগতিতে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে করে আমাদের পেট বেশিক্ষণের জন্যে ভরে থাকে আর ক্ষুধাবোধ তৈরি হয় দেরীতে। ফলে খুব সহজেই কলা আমাদের শরীরকে সঠিক আকৃতিতে আনতে বা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলায় মজুদ থাকা যথাযথ পরিমাণ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্যকেও দূর করতে সাহায্য করে।

৩. হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে:

কলা থেকে প্রাপ্ত আঁশ কেবল আমাদের ক্ষুধাবোধ আর কোষ্ঠকাঠিন্যের ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রণ করেনা, সুস্থ রাখে হৃদপিন্ডকেও। প্রতিদিন তিনটি কলা গ্রহন করলে আমাদের হৃদপিন্ড অনেক বেশি সুস্থ থাকে আর করোনারি হার্ট ডিজিজ কিংবা অন্য কোন হৃদযন্ত্রের সমস্যাও দূর হয়ে যায় অনেক পরিমাণে।

৪. কোষ তৈরি করে:

কলা আমাদের শরীরে ভিটামিন বি৬ উৎপন্ন করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের ২০ শতাংশ বি৬ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায় যদি সে দিনে মাত্র তিনটি কলা খায়। এছাড়াও এটি শরীরে হিমোগ্লোবিন, ইনসুলিন ও কিছু অ্যামিনো এ্যাসিড তৈরিতে সাহায্য করে, যা শরীরের কোষকে সুস্থ রাখার জন্যে অত্যন্ত জরুরী। কলা কেবল কোষকে সুস্থই রাখে না, এর ওপরে যাতে কোনধরনের রোগ-বালাই না আসতে পারে সে জন্যে দরকারি সব অ্যান্টিবায়োটিকসও উৎপন্ন করে।

৫. ভিটামিন সি’র যোগান দেয়:

ভিটামিন সি আর ফলকে এক সাথে ভাবতে গেলেই আমাদের মনে চলে আসে লেবু কিংবা স্ট্রবেরীর নাম। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে এদের চাইতে আরো অনেক বেশি পরিমান সাহায্য করে কলা শরীরকে ভিটামিন সি এর ব্যাপারে। মাত্র তিনটি কলা যেকোন মানুষের শরীরের ১৫ শতাংশ ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে আর এই ভিটামিন সি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে নানারকম রোগের হাত থেকে।

৬. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে:

কলায় রয়েছে ভিটামিন সি ছাড়াও যথেষ্ট পরিমাণ লৌহ। এই লৌহ শরীরে লাল রক্তকণিকা তৈরি ত্বরান্বিত ও যথযথ পরিমাণে সম্পন্ন করার মাধ্যমে দূর করে দেয় মানুষের, বিশেষত নারীদের শরীরের অ্যানিমিয়ার আক্রমণকে। এছাড়াও, দূর্বলতা, অবসাদ, নিশ্বাসে সমস্যা- এরকম ছোটখাটো অনেক শারিরীক সমস্যার সমাধানও খুব সহজেই দিয়ে ফেলে কলা।

৭. শরীরচর্চায় সাহায্য করে:

শরীরচর্চাবিদ বা অ্যাথলেটরা ‘কলা’ ফলটিকে বেশ পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু কেন? অ্যাপলেশিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষনা থেকে জানা যায় যে, সাইকেল চালাবার সময় প্রতি ১৫ মিনিট পরপর পুষ্টিকর একটি পানীয় যতটা না সাহায্য করে মানুষকে, ঠিক সেই কাজটিই একইভাবে করে থাকে ১৫ মিনিট পরপর খাওয়া অর্ধেকটা কলাও। এছাড়াও শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরির মাধ্যমে মাসল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে এই ফলটি। favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment