চিনি কেন খাবেন?

চিনি কেন খাবেন?

  • স্বাস্থ্য ডেস্ক

আমরা অনেকেই চিনি খাই। কেউ কেউ দৈনিক শতবারও খাই। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত যত ধরনের মিষ্টি খাবার খাই, প্রতিটি খাবারেই চিনি দেওয়া থাকে। পৃথিবীতে যতগুলো রিফাইন ফুড পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে চিনি। চিনিকে বলা হয় সাদা বিষ (হোয়াইট পয়জন)! একটি খাবার যত বেশি রিফাইন হবে, সেটি শরীরের জন্য তত বেশি ক্ষতিকারক হবে। এখন আবার বের হয়েছে ঘন চিনি। এটি চিনির চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। যত বেশি চিনি খাবেন, যত বেশি মিষ্টি খাবেন, মনে রাখবেন মৃত্যু আপনার দিকে তত দ্রুত ধেয়ে আসবে। মুটিয়ে যাওয়া এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা রোগের কারণ এই চিনি। এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন, হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া, হাড়ে ব্যথা অনুভব হওয়া ইত্যাদি রোগের মূল কারণ হচ্ছে অতিমাত্রায় চিনি খাওয়া। মনে রাখবেন, আমরা প্রতিনিয়ত যা-ই খাচ্ছি—অর্থাৎ ঝাল খাচ্ছি, মিষ্টি খাচ্ছি, টক খাচ্ছি, তেতোজাতীয় খাবার খাচ্ছি, এসব যা কিছুই খাই না কেন, সর্বশেষ কথা হচ্ছে, আমি চিনি খাচ্ছি। অর্থাৎ প্রতিটি খাবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিনিতে পরিণত হচ্ছে। যেখানে আপনার পাকস্থলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিনি উৎপন্ন করছে, সেখানে যদি আপনি সরাসরি চিনি ঢেলে দেন, তাহলে আপনার পাকস্থলি দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়বে—এটাই স্বাভাবিক। পাকস্থলিতে চিনির পরিমাণ যত বেড়ে যাবে, অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নির্গমনের পরিমাণ তত বেড়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে আপনার দেহে ইনসুলিনের ঘাটতি দেখা দিবে। ফলে বহুমূত্র রোগ তথা ডায়াবেটিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

আমরা অনেকেই দই পছন্দ করি। দই আমাদের হজমে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু যখনই আপনি এই দইয়ে চিনি মেশান, তখন সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দইয়ের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওই চিনিমিশ্রিত দই খেতে আপনার ভালো লাগে, কিন্তু তা শরীরের কোনো উপকারে আসে না। তবে আখ অথবা আখের রস খেতে পারেন। এটা ক্ষতিকারক নয়। শরবত খেতে চাইলে চিনি ছাড়া খাবেন। রং চা কিংবা দুধ চা—যেটাই খান না কেন, চিনি ছাড়া খাবেন। অনেকে কফি থেকে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না, আপনার অজান্তেই আপনার প্রিয় কফিকে সাত থেকে আট চা চামচ চিনি থাকে।

সুতরাং আপনি চিনি কেন খাবেন? চিনিতে নেই কোনো প্রোটিন, নেই কোনো মিনারেল, নেই কোনো ফাইবার। যা আছে তার প্রায় সবই শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

অনেক রোগের প্রত্যক্ষ কারণ চিনি। ছবি : ফাইভার

তাহলে চিনির বিকল্প কী

  • চিনির বদলে খাবারে মেশান আখের গুড়, খেজুর গুড় বা ঝোলা গুড় কিংবা তাল পাটালি৷ ভিটামিন বি-৬, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম পাবে শরীর৷
  • গুড় ভাল না লাগলে এক–আধ সময় আখের রস খেতে পারেন৷ ভিটামিন বি, সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজের জোগান পাবেন৷
  • নারকেলের দুধ ফুটিয়ে শুকিয়ে নিলে নীচে পড়ে থাকে নারকেল চিনি৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে অসাধারণ৷ সঙ্গে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদিও এতে আছে পর্যাপ্ত৷ এর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স কম, অর্থাৎ রক্তে সুগার চট করে বাড়তে পারে না৷ কাজেই ডায়াবিটিকরাও খেতে পারেন৷
  • দুপুরে বা রাত্রে খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে, খান খেজুর৷ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ পাবেন প্রচুর৷ কিসমিস বা অন্য শুকনো ফলও খেতে পারেন৷ খেতে পারেন বিভিন্ন টাটকা ফল৷
  • সাধারণ চিনির বদলে খেজুরের চিনি দিয়ে কেক বা পুডিং বানান৷ খেজুর বা তালের রস জ্বাল দিয়ে বানানো সিরাপও ব্যবহার করা যায়৷
  • পুডিং বা কাস্টার্ডে চিনির বদলে মেশান বিভিন্ন ফল৷
  • গ্রিন টি–তে মেশান টাটকা মধু৷ চা–কফিতে ম্যাপ্ল সিরাপ৷ ক্যালোরি চিনির মতো অত বেশি নয়৷ উপরি পাওয়া অ্যান্টি অক্সিডেন্টের গুণাগুণ৷
  • কৃত্রিম চিনি বা অ্যাসপারটেম জাতীয় জিনিস ভুলেও খাবেন না৷ মিষ্টি না খেয়ে থাকতে না পারলে বরং মাঝেমধ্যে এক–আধ চামচ চিনিই খাবেন৷ না হলে বিপদ আরও বাড়বে৷ ডায়াবিটিকরাও এ সব খাওয়ার আগে দু’বার ভাববেন৷
চিনির পরিবর্তে আখ খেতে পারেন। ছবি : novonegocio

চিনি খাওয়া ছাড়লে যেসব উপকার পাবেন

  • দিনে অতিরিক্ত চিনি যারা খান, তারা এখন থেকেই চিনির পরিমাণ কমাতে শুরু করুন। এতে করে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমবে, বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ থেকে রেহাই পাবেন আপনি।
  • চিনি যারা বেশি খান, তাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয় বলা যায়। তাই চিনি খাওয়া কমালে আপনার ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার ঝুঁকিও কমে যাবে।
  • চিনি ও চিনিজাত খাবার দিনে যতো কম খাবেন ততোই মঙ্গল। এতে মন মেজাজ ভালো থাকবে। অতিরিক্ত চিনি খেলে অল্পতেই রেগে যাওয়া বা হতাশায় ভোগার সমস্যায় পড়তে পারেন।
  • যারা চিনি ও চিনি মেশানো খাবার বেশি খান, তাদের ঘুমের ব্যাঘাত হয় বেশি। তাই চিনি খাওয়া বন্ধ করলে রাতে আপনার ঘুম ভালো হবে আশা করতে পারেন।
  • প্রতিদিন যারা বেশি পরিমাণে চিনি খান, তাদের মাঝে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এমনকি মস্তিষ্কের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। তাই চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নত হবে। সব কিছু ভালো মনে রাখতে পারবেন।
  • প্রতিদিন যদি খাবারের তালিকা থেকে চিনি বাদ দেন, তাহলে ওজন কমার লক্ষ্যে খুব ভালো ফল পাবেন।
  • চিনি খাওয়া বন্ধ করলে আগের চেয়ে বেশি তারুণ্যদীপ্ত হয়ে উঠবেন আপনি। আপনার চোখের নিচে কালো দাগ, ফোলা এসব দূর হয়ে যাবে। শরীর সতেজ হয়ে উঠবে।
  • কয়েক দশক আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে চিনি খেলে শরীরের সাদা রক্ত কণিকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে না। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই চিনি খাওয়া বন্ধ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
  • চিনি খেলে প্রথমে শরীরে একটু চনমনে ভাব আসতে পারে। তবে ক্ষতিকর দিক হলো, এরপরই শরীরে বাজে প্রভাব ফেলে চিনি। তাই চিনি খাওয়া বন্ধ করলে আরো প্রাণবন্ত রোধ করবেন আপনি।
  • শরীরের জয়েন্টে ব্যথা বা শরীর ফোলা থেকে রক্ষা পাবেন চিনি খাওয়া বন্ধ করলে।
  • চিনি বা চিনিজাত খাবার ও পানীয় দাঁতের ক্ষতি করে। এদের কারণে ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধে দন্তক্ষয়, মুখের দুর্গন্ধ তৈরি করে। তাই এসব খাবার না খেলে আপনার দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
  • চিনি না খেলে শরীরে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে।
  • বেশি চিনি খেলে লিভারে চর্বি জমে যায়। তাই চিনি খাওয়া বন্ধ করলে লিভার ভালো থাকবে।
  • কয়েক ধরনের ক্যানসার থেকে নিরাপদে থাকবেন চিনি না খেলে।

Sharing is caring!

Leave a Comment