করোনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন

করোনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন

  • ডা. হিমেল ঘোষ

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দিনে দিনে বাড়ছে। উপসর্গ দেখা দিলেই এখন পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে উপসর্গই দেখা যায় না। আবার কারও ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকলেও করোনা ধরা পড়ছে না। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে নানাজনের মনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রশ্ন: কোনো উপসর্গ নেই, তবু করোনা হতে পারে?

করোনা সংক্রমিত ৮০ শতাংশ রোগীর উপসর্গ থাকে খুবই মৃদু, সাধারণ সর্দিজ্বরের মতো। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসির তথ্যমতে, ২৫ শতাংশ রোগীর আদৌ কোনো উপসর্গই থাকে না। এ ধরনের রোগী নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠছেন। তবে তাঁরা সংক্রমণ ছড়াতে ভূমিকা রাখছেন। এই দলে শিশু-কিশোরদের সংখ্যাই বেশি। রোগীদের একটা অংশ আবার প্রি-সিম্পটোমেটিক। মানে, তাদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে একটু দেরিতে। কিন্তু তার আগেই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করেন তাঁরা। কাজেই জ্বর-কাশি না থাকলেও যে আপনি বা আপনার চারপাশের সবাই নিরাপদ ও করোনামুক্ত, তা কিন্তু নয়। এ ক্ষেত্রে সিডিসির পরামর্শ হলো, যত দিন লকডাউন চালু থাকে তত দিন ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন, মাস্ক পরুন।

প্রশ্ন: উপসর্গ আছে, কিন্তু করোনা নেগেটিভ। তাহলে?

গবেষকেরা বলছেন, করোনা নির্ণয়ের জন্য যে আরটি পিসিআর পরীক্ষা করা হয়, তা ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে পারে। নমুনা সংগ্রহের সময় অসতর্কতা, শরীরে ভাইরাল লোড (জীবাণুর সংখ্যা) কম থাকা বা সঠিক সময়ে পরীক্ষা না করার কারণে এমনটা হয়। এর সমাধান হলো রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও সতর্কতা অবলম্বন করে ১৪ দিন আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) থাকতে হবে, সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি থাকলে বুকের সিটি স্ক্যান একটি বিকল্প পরীক্ষা, যা ক্ষেত্রবিশেষে ৯৭ শতাংশ নিশ্চিত করে বলে দিতে পারে করোনার সংক্রমণ হয়েছে কি না।

প্রশ্ন: করোনা একবার হলে কি পরে আবার হতে পারে?

কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা। অন্য সব ভাইরাসের মতো শরীরে বিদ্যমান সেই অ্যান্টিবডি সুস্থ হয়ে ওঠার পর অনেক দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইতিমধ্যে আক্রান্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশের শরীরে যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে, যা পরে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এদিকে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার পর আবারও সংক্রমিত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, করোনার পুনঃসংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ডা. হিমেল ঘোষ, চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment