রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ‘স্ট্রেচিং’
- সুজাতা মুখোপাধ্যায়
ভ্যাক্সিন যতই আসুক না কেন, কোভিডের হাত থেকে বাঁচতে এখনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই প্রধান ভরসা। আর সেই ভরসার প্রধান হাতিয়ার সঠিক খাবার ও অঢেল ব্যায়াম। চিন্তাটাও এখানেই। খাবার না হয় তবু মোটামুটি ঠিক করে নেওয়া যায়। কিন্তু ব্যায়াম? সময় কোথায়! ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ব্যস্ত জীবনের মাঝে সকালে বা বিকেলে ৪০-৪৫ মিনিট সময় বার করা কি চাট্টিখানি কথা! তার উপরে নিজে থেকে না-বুঝে করতে গেলে কী না কী বিপদ হয়! ঘরে ট্রেনার রাখা এক দিকে যেমন ব্যয়সাপেক্ষ, অতিমারির কালে নিরাপদ হয়তো নয়। জিমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অত্যন্ত ব্যয়বহুল জিমগুলি হয়তো বা নিরাপদ, কিন্তু সেখানে যেতে পারবেন ক’জন? তা হলে?
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মৌলিমাধব ঘটক জানিয়েছেন, “এতে টেনশন করার কিছু নেই। বেশিক্ষণ ধরে ব্যায়াম করার সময় না থাকলে বা শারীরিক সক্ষমতা যাঁদের কম, তাঁরা যদি সকালে এবং বিকেলে ১০ মিনিট হালকা কয়েকটি স্ট্রেচিং করেন, তাতেও উপকার যেমন হবে, শরীরও ধীরে ধীরে বড় ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।”
স্ট্রেচিংয়ের উপকার
স্ট্রেচিং হল শরীরের জড়তা ভাঙার ব্যায়াম। অনেকক্ষণ বসে বা শুয়ে থাকার পরে শরীরে জমা হওয়া আলস্য কাটাতে আমরা যেমন আড়মোড়া ভাঙি, অনেকটা সে রকম ব্যাপার। নির্দিষ্ট নিয়মে শরীরের বিভিন্ন সন্ধি ও পেশি বিভিন্ন দিকে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে নিলে শরীরের নমনীয়তা বাড়ানো যায়। পেশিতে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে চোট লাগার আশঙ্কা কমে। কোনও ব্যথা থাকলে কমে তার প্রকোপ। মানসিক চাপ কমাতেও স্ট্রেচিংয়ের ভূমিকা আছে বলে জানা গেছে। আর সব কিছু মিলে বিভিন্ন অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ে শরীরের। মৌলিমাধবের মতে, “যতই কাজ থাক, সকালে ১০ মিনিট ও কাজের শেষে বিকেলে ১০ মিনিট কয়েক ধরনের স্ট্রেচিং করবেন। টানা বসে কাজ করতে হয় যাঁদের, তাঁরা কাজের মাঝে এক বার করে নিলে ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যথা ইত্যাদির হাত থেকে যেমন বাঁচবেন, কাজের চাপও সামলাতে পারবেন সহজে। তবে শুরু করার আগে এক বার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ, কোনও ব্যথা-বেদনা বা সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত স্ট্রেচিংয়ে তা বেড়ে যেতে পারে।”
কোন স্ট্রেচিং, কীভাবে
১. প্রথমে করুন আর্ম সার্কল। এক বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও পরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে কাঁধের কাছ থেকে ১০ বার করে এক-একটা হাত উপরে-নীচে ঘোরান।
২. এর পরে শোল্ডার সার্কল। সোজা দাঁড়িয়ে কাঁধকে ১০ বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও ১০ বার ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘোরান।
৩. রোটেশনাল নেক এক্সারসাইজ করুন। সোজা দাঁড়িয়ে বা বসে মাথা ডান দিকে ও বাঁ দিকে ঘোরান ১০ বার। মাথা কাঁধের কাছে নামান, ডান দিকে ও বাঁ দিকে ১০ বার। এ বার মাথা পিছনে নিয়ে যান যথাসম্ভব, তার পরে ঝোঁকান সামনের দিকে। এও ১০ বার।
৪. সোজা দাঁড়িয়ে সাইড বেন্ডিং, ব্যাক বেন্ডিং ও ফ্রন্ট বেন্ডিং করবেন ১০ বার।
৫. পায়ের জন্য করতে হবে ফ্রন্ট কিক, ব্যাক কিক ও সাইড কিক। কিছু ধরে সোজা দাঁড়িয়ে এক এক পায়ে ১০ বার করে করুন।
৬. এ বার শুয়ে পড়ুন৷ একটা করে পা ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে ১০-২০ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখুন। পরে ২ পা একসঙ্গে করবেন। ৩টে মিলে একটা সেট। ৩টে সেট করবেন।
৭. চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করে বাঁ হাত দিয়ে ধরে আপনার বাঁদিকের মাটিতে চেপে ধরুন আর ডান হাত ও শরীরের উপরাংশ ডান দিকে ঘুরিয়ে দিন, যতটা যেতে পারেন। ২০ সেকেন্ড থাকুন, তার পরে উল্টোদিকে আবার করুন।
এ রকম আারও অনেক ব্যায়াম আছে৷ প্রথম দিকে কয়েকটা করে অভ্যাস হয়ে গেলে, পরে অন্যগুলোও একে একে করতে পারবেন।
সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা