এই সময়ে সর্দি-জ্বরে কী করবেন
- ডা. ইসমাইল আজহারি
সাধারণ সর্দি-জ্বর এক প্রকার ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত শ্বসনতন্ত্রের উপরিভাগে হয়ে থাকে বা আপার রিসপাইরেটরি ট্র্যাককে (Upper respiratory tract) আক্রান্ত করে। সাধারণত রিনো ভাইরাস নামক এক প্রকার ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে।
সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস করোনাভাইরাসের মতো। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে এটা একটু দুর্বল প্রকৃতির ভাইরাস। কারণ এটা শ্বসনতন্ত্রের উপরিভাগকে আক্রান্ত করলেও নিচের অংশ তথা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে না। তাই ক্ষতির পরিমাণ তেমন একটা নাই বললেই চলে।
উপসর্গ
♦ নাক দিয়ে পানি পড়া
♦ নাক বন্ধ হয়ে আসা
♦ হালকা গলা ব্যাথা
♦ কাশি
♦ গায়ে গায়ে জ্বর
♦ জ্বর মোটামুটি ৯৯ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে
♦ মাথা ব্যাথা
♦ হাঁচি আসা
♦ শারীরিক দূর্বলতা, ইত্যাদি।
টাইফয়েডের সাথে এই জ্বরের পার্থক্য
♦ টাইফয়েড জ্বরে সাধারণত সর্দি-কাশি থাকে না।
♦ রিনো ভাইরাসের ক্ষেত্রে সর্দি কাশি দিয়েই শুরু হয়।
♦ টাইফয়েড সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি উচ্চতাপমাত্রাসহ হয়ে থাকে। রিনোভাইরাস তুলনামূলক কম তাপমাত্রার। টাইফয়েডের ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হতে পারে। এখানে ডায়েরিয়া থাকবে না। টাইফয়েডের ক্ষেত্রে শরীরে র্যাশ দেখা দিবে, এখানে র্যাশ দেখা দিবে না।
করোনার সঙ্গে রিনো ভাইরাসের পার্থক্য :
করোনা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। তবে রিনো ভাইরাস ফুসফুসকে আক্রান্ত করে না। কিংবা ফুসফুসে মারাত্মক জটিলতা করতে সক্ষম নয়।
♦ সর্দি কাশি দিয়ে জ্বর শুরু হলে বুঝতে হবে ভাইরাল ফিভার এবং আতংকিত হবার কারণ নাই। করোনা পরীক্ষা করে নিতে হবে দ্রুত।
জটিলতা
সর্দি-জ্বর থেকে অনেক সময় সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে থাকে। টনসিলাইটিস, মিডেল ইয়ার ইনফেকশন বা অটাইটিস মিডিয়া হতে পারে।কানে ব্যাথা করতে পারে।
নিউমোনিয়া হতে পারে, একিউট সাইনুসাইটিস হতে পারে।এজমা রোগীদের এজমা এটাক হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়
সাধারণত দেখা যায়, এক পরিবারে একজনের সর্দি-জ্বর হলে সবার তা হয়ে যায়, তাই প্রতিরোধের জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে, নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারিত সামগ্রী ব্যবহার না করা। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারিত গ্লাস ও অন্যান্য অনুষঙ্গ ব্যবহার না করা।
চিকিৎসা
দ্রুত করোনা টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। যদি নেগেটিভ আসে কিংবা করোনার অন্যান্য লক্ষণ না থাকে তবে এসব সর্দি জ্বরে সাধারণত চিকিৎসার দরকার হয় না। শুধুমাত্র উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসাই যথেষ্ট।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল আর সর্দির জন্য এন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ৭-২১ দিনের মধ্যে মোটামুটি সুস্থ হয়ে যায়।
সাবধানতা
ভাইরাল ফিভার ভালো হবার পর অনেকের ক্ষেত্রে দুটো এলার্মিং উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন:
১। পোস্ট ভাইরাল ড্রাই কফ (শুকনো কাশি)
২। পোস্ট ভাইরাল হেডেক (মাথা ব্যাথা)
প্রয়োজনে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. ইসমাইল আজহারি : চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল