মধু নিয়ে মধুর কথা

মধু নিয়ে মধুর কথা

  • নাইমা আনজুমান

মধু পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মধু মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি মিষ্টি ও ঘন তরুল পদার্থ যা মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বেশিরভাগ মধু সংরক্ষণ করা হয় সুন্দরবনের কেউড়া গাছের ফুল থেকে।

শুধু আয়ুর্বেদ নয়, বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও মধুর উপকারিতার কথা বলা আছে। যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে মধুর ইতিহাস পড়লে জানতে পারবো ৮০০০ বছর আগে মানুষ প্রথম মধু ব্যাবহার করত। যদিও খ্রিস্টপূর্বে ২৪০০ অব্দ আগে মধু চাষের কোনো যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রাচীনকালে বেশিরভাগ মানুষ দেহের বদহজম এবং ভারসাম্যহীনতার কাজে ব্যবহার করত মধু।

মধুতে রয়েছে গ্লুকোজ, ফুক্টোজ এবং খনিজের মতো প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান। যেমন আয়রন, ফসফেট, পটাশিয়ামসহ অনেক। এক চামচ মধুতে ৬৪ গ্রাম ক্যালরি, ১৭ গ্রাম সুগার, ১৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার, ফ্যাটের পরিমাণ ০ গ্রাম যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের জাতীয় পুষ্টি ডাটাবেসে প্রমাণিত হয়।

মধুর উপকারিতার কথা জানলে অনেকে অবাক হবেন। ত্বক ও মুখের যত্নে মধুর ব্যবহার খুবই উপকারী। অনেকের ত্বক শুষ্ক বা চামড়া ফেটে যায়, সে ক্ষেত্রে মধু ব্যাবহারের ফলে আপনার ত্বক হবে মসৃণ। ময়েশ্চারাইজিং এবং পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্যের কারণে আপনার হারানো তারুণ্য ফিরে আনবে। তা ছাড়া হাত কেটে যাওয়া, চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি, কাটা ঘা বা পোড়া স্থানে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে মধুর ব্যাবহার অতুলনীয়। আমরা প্রায়ই শুনি মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশি খেলে ব্রেন ভালো থাকে। আসলে মিষ্টি জাতীয় জিনিস সেবনে বিপাকীয় চাপকে বাধা দেয় এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে, ফলে দীর্ঘকালীন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে মধুর থেকে ভালো কোনো তরল হতে পারে না।

ঘরোয়া উপায়ে কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে মধু। শুকনা কাশি, গলা আটকে যাওয়া, গলা জ্বালা, এসব থেকে প্রতিকার পেতে হলে গরম পানির সাথে মধু সেবন করলেই এর উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের চুলে খুশকি এবং চুল পড়ে যাওয়ার অভিযোগ কমবেশি সবার থাকে। সে ক্ষেত্রে ২ টেবিল চামচ মধু এবং তেল মিশ্রণ করে তা ১৫ মিনিট চুলে রেখে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এতে শুষ্ক চুল হবে প্রাণবন্ত, মসৃণ ও নরম।

প্রাকৃতিকভাবে স্লিপিং এইড হিসেবে মধুর কার্যকারিতা ব্যাপক। অনেকের ঘুমে সমস্যা, ঘুম কম হয় অথবা পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে এক গ্লাস গরম দুধে এক চা চামচ মধু যোগ করে পান করুন। রাতে ভালো ঘুম হবে। তাছাড়া কাচা মধু পানির সাথে মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যাবহার করলে দাঁত ও মাড়ির ব্যাথা, প্রদাহ ও অন্যান্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

মধুর উপকারিতায় অনেকে মুগ্ধ হলেও ক্ষতিকর কিছু বিষয়ের উপর আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমে ১২ বয়স থেকে কম বাচ্চাদের মধু খেতে দেয়া উচিত না। কারণ মধুতে যে ধূলিকণা রয়েছে তা বটুলিজমের কারণে ব্যাকটেরিয়া বহন করে যা শিশুদের জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া যাদের এলারজিক সমস্যা রয়েছে সে ক্ষেত্রে মধু না খাওয়াই ভালো। বয়স্ক যারা থাকেন তাদের ডায়াবেটিস থাকলে মধু খাওয়া সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ। মনে রাখতে হবে মধুর উপকারিতার পাশাপাশি মধুর অপকারিতা ও খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই ।

Sharing is caring!

Leave a Comment