প্রতিদিন ছোলা খাচ্ছেন কি?
- ঋতুপর্ণা চাকী
কাঁচা ছোলা যে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তাতো আমরা সবাই জানি। কিন্তু মাছ মাংসের বিকল্প হিসেবে যে ছোলা আমাদের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে এ কথা আমাদের অনেকেরই অজানা।
ছোলা সাধারণত একটি ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কার্ডিওভাসকুলার নামক পুষ্টি উপাদান। এছাড়া ছোলাতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ লবণ। ছোলাতে মাছ-মাংসের সমপরিমাণ আমিষ থাকায় খাদ্য তালিকায় মাছ-মাংসের বিকল্প হিসেবে ছোলার ডাল, তরকারিতে ছোলা, সেদ্ধ ছোলা ভাজি, ছোলার বেসন, ছোলা-ভুনা ইত্যাদি নানান উপায়ে ছোলা খাওয়া যেতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ থাকে প্রায় ১৮ গ্রাম, ফ্যাট ৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম থাকে ২০০ মিলি গ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায় প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম আর সাথে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-১ ও বি-২। ছোলা মলিবেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর একটি ভালো উৎস।
ছোলাতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরণের আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে এটি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম করে ছোলা খেয়ে থাকে সেই সকল লোকেদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাকি সকলের থেকে ৪৯% কমে যায়।
এ বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নিউট্রেশন এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা সরকার বলেছেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই পুষ্টিহীনতায় ভোগে। শুধু মাত্র খাদ্য তালিকায় ছোলা এই একটি মাত্র উপাদান যোগ করলেই অনেকাংশে মিটবে পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা। ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ট্রিপট্যোফান, কপার, ফসফরাস এবং আয়রণ যা একজন স্বাভাবিক মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন থাকা উচিত। অনন্যা এই বিষয়ে আরো বলেছেন, ছোলায় যে পরিমাণ ফ্যাট বা তেল থাকে তার বেশির ভাগই পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা শরীরের জন্য একদমই ক্ষতিকর নয়। তাই যে কেউ তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিসন্দেহে এই উপাদানটি রাখতে পারেন।
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, অল্পবয়সী নারী যারা ফলিক এসিড যুক্ত খাবার বেশি করে খান তাদের হাইপারটেনশনের প্রবণতা কমে যায়। আর ছোলাতে রয়েছে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফলিক এসিড। তাই বিশেষ করে অল্প বয়সী নারীরা নিয়মিত ছোলা খেলে সহজেই তারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
পুষ্টি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, রক্তশূণ্যতা, ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক অবসাদ, ক্ষুধা-হ্রাস ভাব, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে প্রতিদিন নিয়ম করে ছোলা খাওয়া উচিত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো মানুষের।
জাত ভেদে ছোলায় থাকা আমিষের পরিমাণও ভিন্ন। যেমন বারি ছোলা বা বড়ালে আমিষ রয়েছে ২৩-২৭%, বরেন্দ্র ছোলাতে আমিষ রয়েছে ২৩-২৬%, জোড়াফুল ছোলাতে আমিষের পরিমাণ ১৮-২১%, পাবনাই ছোলাতে রয়েছে ২০-২২% এবং নাভারুন ছোলাতে আমিষ আছে ১৯-২১%।
যেকোনো শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে আমরা প্রায় ৩৬০ ক্যালোরি শক্তি পেতে পারি। তাই মানবদেহে দীর্ঘক্ষণ শক্তি যোগান দিতে ছোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।