কলা-তেও মহামারী : বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে সবচেয়ে জনপ্রিয় কলা!
- আব্দুল্লাহ আল মনসুর
জলবায়ু পরিবর্তন, পোকামাকড়ের উপদ্রব, মাটির নিম্নমান এবং গাছের জীবাণুর মতো অসংখ্য কারণে বিলুপ্তি ঘটতে পারে কলা গাছের।
ঠিক এই রকম কারণেই বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় কলা উপগোষ্ঠী, যা ক্যাভেনডিশ কলা নামে পরিচিত যা এখন বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে এবং এর বিলুপ্তি আমাদের পুরো খাদ্যাভ্যাসকে বদলে দিতে পারে।
ফ্রান্সের বায়োভার্সিটি ইন্টারন্যাশনালের বিজ্ঞানী এবং সংস্থার কলা-জেনেটিক্স সংস্থার নেতা নিকোলাস রক্স বলেন যে, “পশ্চিমা দেশগুলিতে যে কলা খাওয়া হয় সবথেকে বেশি সেটি এই ক্যাভেনডিশ উপগোষ্ঠীর কলা”
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বে হাজার হাজার রকমের বিভিন্ন কলা রয়েছে তবে সেগুলো ক্যাভেনডিশ এর মতো জনপ্রিয় জাতের কলার থেকে ভিন্ন এবং স্বাদ ও মানের দিক থেকেও আলাদা। বাণিজ্যিকীকরণের জন্য যে কয়েকটি ফলের প্রজনন করা হয়েছে তার মধ্যে ক্যাভেনডিশ কলা অন্যতম।
৫০ এর দশকে এমনই এক জনপ্রিয় কলা ছিলো ‘গ্রস মিশেল কলা’ যা ছিলো অন্যান্য কলার থেকে বড়, অনেক বেশি মিষ্টি এবং নরম। যার কারণে সেই সময় ইউরোপে পছন্দের শীর্ষে ছিলো এই জাতের কলা। কিন্তু সেই সময় এক ভয়ংকর ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এই জাতের কলা এবং যার কারণে প্রজননবিজ্ঞানীরা আরেক ধরণের কলা তৈরী করেন যা সেই ছত্রাক এর চেয়েও শক্তিশালী এবং সেই কলা-ই হলো আজকের এই ক্যাভেনডিশ।
প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ মিলিয়ন টন এরও বেশি কলা রপ্তানি করা হয় এবং সেগুলির প্রায় সবগুলিই ক্যাভেনডিশ উপগোষ্ঠীর, যা কিনা বছরে প্রায় ১৪৪ বিলিয়ন কলা’র সমান।
নব্বই এর দশকে মাটিবাহিত ছত্রাকের একটি নতুন জাত ক্যাভেনডিশ জাতের কলাকে আক্রান্ত করতে শুরু করে যা ফুসারিয়াম উইল্ট নামে পরিচিত। এর ফলে তখন বিজ্ঞানীরা এই জাতের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েন। এই ছত্রাককে প্রাথমিকভাবে ছত্রাকনাশক দ্বারাও বিনাষ করা সম্ভব হয়নি। এটি কলা গাছের কান্ডে আক্রমণ করতো, গাছে পানির সরবরাহ বন্ধ করে দিতো এবং পরে এটি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ গাছটিকে মেরে ফেলতো।
ক্যাভেনডিশ উপগোষ্ঠীর কলা এবং গাছে অন্যান্য আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, এই জাতের কলাগুলো অযৌন, তাই তাদের সবগুলিই একে অপরের ক্লোন হিসেবে কাজ করে। যার কারণে কোনও রোগ একটি ক্যাভেনডিশ কলা বা তার গাছকে আক্রমণ করলে একসাথে এর আশেপাশের সকল কলা এবং গাছকেও আক্রমণ করে।
কিন্তু বর্তমানে কালো সিগাতোকা নামে একটি নতুন ছত্রাকের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এটি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কারণ উষ্ণ আবহাওয়ায় এই ছত্রাকটি আরও দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে।
জমিতে ছত্রাকনাশক ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলেও বিজ্ঞানীদের মত তবে এর জন্য বছরে প্রায় ৬০বারেরও বেশি এই জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে প্রতিটি জমিতে। ফুসারিয়াম উইল্ট নামক ভাইরাসটি ইতিমধ্যে ভারত, চীন, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার বেশ কিছু অংশে আক্রমণ করতে শুরু করেছে।
সারাবিশ্বে কলা’র চাহিদার ৬ শতাংশ আসে ইকুয়েডর থেকে যা সংখ্যায় প্রায় ৮মিলিয়ন টনেরও বেশি। এত বড় রপ্তানি অঞ্চলেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
আমরা যেভাবে এখন কলাগুলো খাচ্ছি বা দেখছি এই অবস্থা অপরিবর্তিত রাখতে হলে অবশ্যই কলাচাষের বর্তমান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে, বস্তুত এর মানে হচ্ছে খামারগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলতে হবে এবং এর মধ্যে বৈচিত্র নিয়ে আসতে হবে। তবে এর কারণে সময়ের সাথে সাথে কলার মূল্য বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরিবর্তন আসতে পারে এর স্বাদেও।
ক্যাভেনডিশ নিয়ে যা জানবেনঃ
- এই জাতের কলা বিশ্বের সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত কলা।
- যুক্তরাজ্যের এক চাষীর হাত ধরে এই কলার আগমন ঘটে।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রজাতির কলা’র আবাদ বৃদ্ধি পেতে থাকে কারণ এটি দ্রুত সময়ে অধিক চাষ হতো এবং যার কারণে বেশি পরিমাণেও বিক্রিও হতো।
- তবে বর্তমানে এই প্রজাতির কলায় ভাইরাসের আক্রমণ ঘটায় এর ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
- জলবায়ু পরিবর্তন এবং এই প্রজাতি অযৌন উপায়ে বৃদ্ধি পাওয়া এই ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়ানোর অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
তথ্যসূত্র:

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	