ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী যশোমাধবের রথ

ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী যশোমাধবের রথ

  • ইয়াসফি খান

ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার যশোমাধবের তৈরি জগন্নাথের রথ বাংলাদেশ তো বটেই পুরো উপমহাদেশের এক অনন্য নিদর্শন। সময়ের সবচাইতে জমজমাট ও লোকে লোকারণ্য এই রথযাত্রাটি প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসকে ধারণ করে।

স্থানীয় লোকমুখে শোনা যায়য যে, যশোবান্ত পাল নামে এক রাজা ধামরাইয়ে মন্দির স্থাপন করেন যা যশোমাধবের মন্দির নামে পরিচিত।পরবর্তীতে ১৬৭২ সাল থেকে ঐ মন্দিরের মাধব কর্তৃক রথটান হয়। ১৭৫৭ -১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বালিয়াটি জমিদারগণ ১৭ ফুট লম্বা ও ৪৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট রথের সার্বিক দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে ১৯৪৩ সালে মির্জাপুরের রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহা এই রথের দায়িত্ব গ্রহণ করেন যা স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পুড়িয়ে ফেলা হয়।
বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের তত্বাবধানে ২০০৯ সালে ধামরাই রথের টেন্ডার হয়। টেন্ডার পেয়ে উই.ডি.সি.কেল.বিন টেকনো.টাচ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে রথ নির্মাণ করেন। ২০১০ সাল থেকেই ধামরাইয়ে পূর্বের আদলে নবনির্মিত রথেই উপমহাদেশের বিখ্যাত ঐতিহাসিক রথ উৎসব চলছে। ভারতীয় সরকারের প্রায় ১ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দে ২৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৭ ফুট প্রস্থের রথটি বর্তমানে কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
সাধারনত বাংলা আষাঢ় মাসে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে রথটান অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের সমারোহে প্রথমে ধামরাইয়ে মাধববাড়ি মন্দির থেকে গোপনগর মন্দিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শন চক্র মূর্তিসমূহ রথ টেনে নেয়া হয় এবং এক সপ্তাহ পরে উল্টো রথ টানের মাধ্যমে পুনরায় মাধববাড়ি মন্দিরে আনা হয়।
এই সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য আরো জাঁকজমকপূর্ণ রূপ লাভ করে প্রায় মাসব্যাপী মেলার মাধ্যমে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অজস্র ধর্মপ্রাণ হিন্দু ও দর্শনার্থীরা রথ দেখা ও মেলা উপভোগ করতে আসে।
বৃহৎ সুউচ্চ রথে চারিপাশ ও আদি অন্ত দেখে ও পরিদর্শন করে বিখ্যাত এক কবিতা লিখে রথের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। যার নাম “ধামরাই রথ”। কবি এই কবিতার এক চয়নে লিখেছেন

“ধামরাই রথ কোন অতীতের বৃদ্ধ সুত্র ধর,
কতকাল ধরে গড়েছিল এরে করি অতি মনোহর।
সুক্ষ হাতের বাটালী ধরিয়া কঠিন কাঠেরে কাটি,
কত পরি আর লতাপাতা ফুল গড়ে ছিল পরিপাটি।
রথের সামনে যুগল অশ্ব সেই কত কাল হতে
ছুটিয়া চলেছে আজিও তাহারা আসে নাই কোন।”

প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Sharing is caring!

Leave a Comment