কেন চট্টগ্রাম হলো প্রাচ্যের রাণী?

কেন চট্টগ্রাম হলো প্রাচ্যের রাণী?

  • নিলয় ধর নীল

যদি ঢাকা শহর বাংলাদেশের সব শহরদের রাজা হয়ে থাকে তাহলে রাণী অবশ্যই চট্টগ্রাম৷ এই শহরকে রাণী কেন বলা হবে না বলুন তো? কি নেই রূপকথার রাণীর মতো চট্টগ্রামে? সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তি, শিক্ষা ও ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ এই চট্টগ্রাম৷

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে পর্তুগিজ দস্যুদের দ্বারা। তাদের দেখাদেখি এখানে ঘাঁটি গেড়েছে আফগান কাবুলিওয়ালারা। বারো আউলিয়ার দেশ খ্যাত এই চট্টগ্রাম থেকেই পরবর্তীতে পুরো দেশজুড়ে ইসলামের প্রচার শুরু হয়। আসুন জেনে নিই এই প্রাচ্যের রাণীর পরিপূর্ণ রাণী হয়ে ওঠার পেছনে আরো কিছু কারণ-

সৌন্দর্যঃ
চট্টগ্রাম শহরটি সাগর-নদী-পাহাড়-আকাশের সংমিশ্রণ, যা আপনি দেশের আর কোত্থাও পাবেন না। এর রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। সাথে রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁধার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির পাহাড়ী সৌন্দর্যের কারণে সারা বাংলাদেশেই পরিচিত, যেখানে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে হলেও পর্যটকেরা বারংবার ভিড় করে। এই শহরের চারিপাশ কর্ণফুলীর উপশাখা নদী দিয়ে আবৃত।

কাপ্তাই লেক

অর্থনীতিঃ
বাণিজ্যিক নগরী এই চট্টগ্রাম, বাংলাদেশের সকল ধরণের ব্যবসার মধ্যমণি হিসেবে পরিচিত, যেখানের ৭০% এর উপরে মানুষ জাতে ব্যবসায়ী এবং খাঁটি ধনী। বাংলাদেশের জিডিপিতে চট্টগ্রামের অবদান অভাবনীয়। ইতিহাস ঘাটলে আমরা আরো দেখবো যে প্রাচীন এশিয়ার সর্বপ্রাচীন, সর্ববৃহৎ, সর্বব্যস্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই পভারতে ব্যবসার প্রচলন শুরু হয়। পর্তুগিজ, আরাকান, আফগান সবাই এর মধ্য দিয়েই বাংলার মাটিতে ব্যবসা শুরু করে। দেশের অনেক বড় বড় কোম্পানির যাত্রা শুরুও এখান থেকেই। তাই চট্টগ্রামের মানুষ জাতে একদম খাঁটি ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম বন্দর

সংস্কৃতিঃ
চট্টগ্রামের মানুষ ভাষাই তাদের গর্বের প্রধাণ কারণ। কারন পৃথিবী জুড়ে বাংলা ভাষার পর চট্টগ্রামের ভাষাই সবচেয়ে বেশি বাঙালীর মুখের ভাষা। ইতিমধ্যে ফেসবুক তার আঞ্চলিক ভাষা কনভার্টার হিসেবে চাটগাঁইয়া ভাষাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এটি এমন একটি ভাষা যেটি খুব কম মানুষই বুঝতে পারে এবং জাতে চিটাইংগা বাদে খুব কম মানুষই তা বলতে পারে।

তারপর আসে খাবার। চট্টগ্রামের মানুষ প্রচন্ড রকমের ভোজনরসিক এবং খুব মসলাপাতি দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে ভালোবাসে। চট্টগ্রামের মেজ্জান, গণি বেকারীর বেলা বিস্কুট, শুটকি, বাকরখানি, আরো কত কত আঞ্চলিক খাবারের নাম যে অজানা রয়েছে তা ইয়ত্তার বাইরে৷ পুরো দেশই জানে চট্টগ্রামের মানুষের কতটা অতিথিপরায়ণ।

চট্টগ্রামের বিখ্যাত কালাভুনা

এই শহর একতারও বটে। এখানে রয়েছে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের সম্মিলিত স্থায়ী বসবাস, যা দেশের অন্যকোন অঞ্চলে খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিভাগের অন্যান্য পার্বত্য জেলাগুলোতে রয়েছে বেশিরভাগ উপজাতি জনগোষ্ঠী, যাদের রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। চট্টগ্রাম নগরী বারো আউলিয়ার দ্বারা সমৃদ্ধশালী এবং দোয়াপ্রাপ্ত শহর। তাইতো বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম বিভিন্ন দুর্যোগ, সমস্যা থেকেও রেহাই পেয়েছে।

সংস্কৃতির ঘাঁটি এই চট্টগ্রাম। বাংলাদেশী রক মিউজিকের জন্মও এখানে। আইয়ুব বাচ্চু, এলআরবি, কুমার বিশ্বজিৎ, শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর, পার্থ বড়ুয়া এই চট্টগ্রামেরই সন্তান। ক্রিকেটার তামিম ইকবাল খান, আফতাব হোসেন কিংবা মডেল নোবেল, অভিনেত্রী চিত্রলেখা গুহ, পূর্ণিমা, মেহজাবীনের মতন তারকারা চট্টগ্রামের আলো বাতাসেই হেসেখেলে বড় হয়েছেন৷ এই শহর বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতার। এই শহর আমার, আমাদের।

চট্টগ্রামের বিখ্যাত মানুষজন

প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Sharing is caring!

Leave a Comment