একই ক্লাসে পড়ছেন বাবা-মা-ছেলে !
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই-কথাটা প্রমাণ করলেন ভারতের নদিয়া জেলার মামজোয়ান গ্রামের এক পরিবার। এই গ্রামের বাবা, মা এবং ছেলে একসঙ্গে একাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করছেন। প্রতিদিন গ্রামের পিচ রাস্তা ধরে পাশাপাশি তিনটি সাইকেল নিয়ে তারা কলেজে যান ক্লাস করতে। সংবাদ : আনন্দবাজার পত্রিকা।
ছেলেবেলায় রুজির টানে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিলেন বলরাম মণ্ডল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনায় ইতি টেনে দিয়েছিলেন স্ত্রী কল্যাণীও। মাধ্যমিক পাশ করা হয়নি। পড়াশোনার ইচ্ছেটা তবুও কোথায় যেন ‘ঘুন পোতার মতো’ তাড়া করত তাঁদের। মধ্য চল্লিশে পৌছে মণ্ডল দম্পতি তাই রবীন্দ্রমুক্ত বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে মাধ্যমিক পাশ করেন বছর দুয়েক আগে। এ বছর ছেলে বিপ্লবের সঙ্গে তাঁরা তিন জনেই ভর্তি হয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিকে।
ছেলের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতিযোগিতাও রয়েছে বেশ। পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে থাকলেও বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরে ছেলেকে পিছনে ফেলতে চান বলরামবাবু।
নদিয়ার ধানতলার আড়ংঘাটা হাজরাপুর হাইস্কুলে কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন তাঁরা।স্কুল খুব কাছে নয়, বাড়ি থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে। চাষের কাজ মিটিয়ে স্কুলের পথ ধরেন তিনি। কল্যাণীদেবীও সংসারের পাঁচটা কাজ সামলে, হেঁশেল টেনে তার পর পা রাখেন সাইকেলের প্যাডেলে। বলছেন, ‘সংসারে তিনটি মাত্র মানুষ। তিন জনেই স্কুলে থাকি। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে তবে খাওয়া। তবু কী যে তৃপ্তি বলে বোঝাতে পারব না!’
বাবা-মার সঙ্গে স্কুলে যেতে কেমন লাগে? বিপ্লব জানাচ্ছে, ‘একই ক্লাসে পড়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনও বিষয় আলোচনা করে পড়লে সহজে পড়া বোঝা যায়।’
আড়ংঘাটা স্টেশন থেকে সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে চূর্নী নদীর কাছে হাজরাপুর হাইস্কুল। এখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আটশো। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিতকুমার হোতা বলছেন, ‘ওই দম্পতি ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন। কিন্তু, ওঁদের পড়ার আগ্রহ দেখে ভর্তি করে নিয়েছি। এখন দেখছি সে দিনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না।’
স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ছেলের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতিযোগিতাও রয়েছে বেশ। পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে থাকলেও বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরে ছেলেকে পিছনে ফেলতে চান বলরামবাবু। তাঁরা জানাচ্ছেন, পড়া ধরলে এক সঙ্গেই হাত তোলেন ওঁরা। যা শুনে কল্যাণীদেবী বলছেন, ‘দেখি না, কে বেশি নম্বর পায়, বাবা ছেলে নাকি আমি!’