আবার কেন ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত?

আবার কেন ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত?

  • ফিচার ডেস্ক

আসলে এই সমস্যার শুরু অনেক গভীরে। ইতিহাস বলবে সেই খ্রিস্টজন্মের আগের সময়কালের কথা। তবে মোটামুটি আধুনিক সময়ের হিসেবে তার সূচনা গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। ১৯৪৮ সালে গঠিত হয় ইসরাইল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশগুলি ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নেয়নি। অনেক দেনদরবারের পরে স্থির হয় পশ্চিম জেরুসালেম থাকবে ইসরাইলের অধীনে। আর পূর্ব জেরুজালেম থাকবে জর্ডনের অধীনে। কিন্তু তা ছিল একেবারেই অস্থায়ী ব্যাপার। দু’দশক যেতে না যেতেই লাগল যুদ্ধ। ১৯৬৭ সালে সিরিয়া, জর্ডন ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলীরা লড়াই করে পূর্ব জেরুসালেমও দখল করে নেয়। সেই সঙ্গে দখল করে আরেক উল্লেখযোগ্য স্থান ফিলিস্তিনের ওয়েস্ট ব্যাংক। এরপর থেকেই এই সব অঞ্চলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়।

এরই মধ্যে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাপন্থী সংগঠন হামাস। ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরু হওয়ার পরে তাদের জন্ম। এই সংগঠনের ঘোষিত লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে ফিলিস্তিনকে রক্ষা এবং বর্তমান ইসরাইল, গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংককে একসঙ্গে নিয়ে একটি ইসলামপ্রধান রাষ্ট্র তৈরি করা। এমনই স্বপ্ন দেখে তারা। প্রাথমিকভাবে সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডসের মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালানোর পরিকল্পনাই ছিল তাদের।

তবে ২০০৫ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেও অংশগ্রহণ করে হামাস। পরের বছর ফিলিস্তিনের আইন পরিষদের নির্বাচনে জিতেও যায়। কিন্তু এরপরই ২০০৭ সালে আরেক প্রবল শক্তিশালী সংগঠন ফাতাহ’র সঙ্গে তাদের লড়াই বেঁধে যায়। সেই যুদ্ধে জিতে যায় হামাসই। আর তারপর থেকে গাজা রয়েছে তাদের দখলে। আর সেই থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের সংঘর্ষ চলছে। ইসরাইল চেষ্টা করেছে গাজা দখল করে নিতে। আকাশপথে হানা দিয়েছে। আর হামাস বারবার রকেট ছুঁড়েছে ইসরাইলকে পালটা জবাব দিতে। কেবল ২০০৮ সালেই ইসরাইল সেনাবাহিনির আক্রমণে ১৩০০ ফিলিস্তিনি মারা যান। অন্যদিকে মৃত্যু হয় ১৩ জন ইসরাইলি সেনার। পরে আবার ২০১২ সালে ইসরাইলের বিমান হামলায় হামাসের কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার আহমেদ জাবারির মৃত্যু হলে শুরু হয় প্রবল সংঘর্ষ। সেবারও ১৭০ জন ফিলিস্তিনি ও ৬ জন ইজরায়েলির মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালে শুরু হয় আরেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। হামলা, পালটা হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয় গাজা। মারা যান ২১৪৩ ফিলিস্তিনি। আহত ১১ হাজার। ঘরছাড়া হতে হয় লক্ষাধিক মানুষকে।

সে সময় কাতার ও মিশরের তৎপরতায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ না বাঁধলেও সেই থেকেই কার্যত বারুদের স্তূপের উপরে রয়েছে গাজা ও আশপাশের অঞ্চল। তবে হামাসের পক্ষে ইইসরাইলের বড় ক্ষতিসাধন সম্ভব হয়নি ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য।

২০১৪ সাল থেকে ২০২১। আবার শুরু হয়েছে বড় ধরনের সংঘাত। আসলে ইসরাইল অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জারাহ এলাকায় কয়েক ঘর ফিলিস্তিনি পরিবারের ভিটেমাটিহারা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। অথচ ওই অঞ্চলে ওই পরিবারগুলি থাকতে পারবে কিনা সেই নিয়ে মামলা চলছে ১৯৭২ সাল থেকে। সেই থেকেই ইহুদিদের দাবি ওই জমি তাদের। আর ফিলিস্তিনিদের কাছে এ আসলে তাদের বাস্তুচ্যুত করার রাষ্ট্রীয় কৌশল। সেই থেকেই শুরু। প্রথমে ছোটখাটো সংঘর্ষ। ক্রমে বিষয়টা গত চার দিন ধরেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘোর করোনাকালে পুরনো শত্রুতাকে আঁকড়ে ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ। হামলা-পালটা হামলার এক অনর্গল বৃত্ত। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এবার বোধহয় আর পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ আটকানো যাবে না।

আর মানুষ? সাধারণ মানুষ? তাঁদের দিন কাটছে প্রার্থনায়। বিশেষ করে গাজায়। সাত বছর আগের সেই ধ্বংসলীলার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে সেখানে। হামাসের দাবি, এখনও পর্যন্ত এই ক’দিনে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এখানে। যার মধ্যে রয়েছে ৩৯জন শিশুও! আহতের সংখ্যা প্রায় পাঁচশো! ইসরাইলের অবশ্য দাবি, নিহতদের অধিকাংশই আসলে জঙ্গি।

বৃহত্তর দৃষ্টিতে সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধে মৃত্যু আসলে সংখ্যা মাত্র। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের বারুদগন্ধের ভিতর থেকে যে ক্রন্দনধ্বনি ঠিকরে বেরোয়, তা বুঝিয়ে দেয়, যুদ্ধে যেই জিতুক বা হারুক, আসলে পরাজিত হয় মানুষই।

Sharing is caring!

Leave a Comment