ম্যান্ডেলার মতো জীবন
মোস্তাফিজুর রহমান : ধরুন, আপনাকে ম্যান্ডেলার কোন এক স্বরণ স্বভায় তাঁর সমন্ধে কিছু বলতে বলা হলো, সম্পূর্ণ মন থেকে এবং সকল প্রকার ভয়ভীতি বা আপত্তির ঊর্ধে উঠে। আপনি কি বলবেন, তাঁর একটা চমৎকার জীবন ছিল? আমার বিশ্বাস, আমাদের বেশির ভাগ মানুষই তাই বলবেন।
এমনকি একটা জরিপের হিসাব মতে, যদি মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয়, একটা চমৎকার জীবনের উদাহরণ দিতে; তাহলেও ম্যান্ডেলা তালিকার শীর্ষে থাকবেন!
আমারা যাই বলি না কেন, কেমন জীবন অতিবাহিত করছি সেটা নিরুপনের জন্য “প্রশংসা জ্ঞাপন লক্ষ করা” একটা চমৎকার পদ্ধতি। যখন আপনার সমন্ধে অন্য কারো প্রশংসা করার সময় আসবে, তারা কি মন থেকে বলতে সমর্থ হবে যে আপনি একটি সুন্দর জীবন অতিবাহিত করছেন? আপনি বলতে পারেন, আপনার জীবনটা সুন্দর?
একটা সুন্দর জীবন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ স্বাভাবতই সবকিছুর পর সুখি হতে চায় এবং প্রকৃতপক্ষে একটা ভালো জীবনের জন্য সুখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যায় করুন না কেন, আপনি সব কিছুতে যতার্থ অধিকার পেতে চাইবেন।
ম্যান্ডেলার জীবনের জন্য প্রাসঙ্গিক যে, তিনি জীবনের ২৭ বছর পাশবিক কারাগারে কাটিয়েছেন এবং জীবনের ব্যর্থতা দেখেছেন। তার জীবন কি আরও সুন্দর হতো না যদি তিনি, এই দুঃখ কষ্ট ছেড়ে জীবন উদযাপনে মেতে উঠতেন?
আপনি যদি শেষ বিন্দু পর্যন্ত পৌছাতে চান, চুড়ান্ত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দেখতে চান, আপনার ভালোবাসার মানুষকে আরও একবার সুখি করতে চান! আপনি যদি আপনার লেনদেনে সৎ থেকে থাকেন, তবে আপনি নিশ্চয় সকল প্রকার বোঝা বা চাপমুক্ত থাকার বোধ করবেন! আপনি সততার সাথে বলতে বাধ্য হবেন, যে আপনি একটা চমৎকার জীবন পেয়েছেন এবং সত্যিই একটা অর্থপূর্ণ জীবন ছিল আপনার।
আপনি আপানর সন্তানের জন্য কেমন জীবন চান? সুখি হওয়ার জন্য শুধু একটা পরিপূর্ণ জীবন পেতে হবে এমন নয়। স্বাস্থ গুরুত্বপূর্ণ, তাই বলে দৌড়বীদের মত ছুটতে হবে না।
আবার যখন সময় ভালো যায় না, সবকিছু নিজের ইচ্ছার বিপরীতে চলে যায়, জীবন ধারণ অনেক কঠিন হয়ে পড়ে, তখন বেচে থাকাটাই অনেক বড় সাফল্য!
আমি জানি, বেশির ভাগ মানুষ প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারণে সুখি নয়। অথচ তাদের জীবন অনেক বেশি প্রাপ্তি, সমৃদ্ধি এবং সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ; এমনকি তাদের কেউ কেউ জীবনের জন্য গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন, জীবনকে সাজিয়েও তোলেন! কেবল লোভটা সামাল দিতে পারেন না!
জীবন বেশ ভয়ংকর, অন্তত ম্যান্ডেলার জীবন থেকে বোঝা যায় – ২৭ বছর আফ্রিকান কারাগারে কাটানোর পর – বিশেষ করে, জীবিত থাকই তার প্রমাণ। প্রকৃতপক্ষে বেচে থাকাই সাফল্য। যদি আপনি সম্মানের সাথে বেচে থাকেন সেটা আপনার জন্য সত্যিই বিশেষ কিছু। আপনি যদি সম্পূর্ণ সুখি নাও হয়ে থাকনে, তা হলেও ভাবুন একটা সুন্দর জীবনের ব্যাপ্তি পেয়েছেন।
সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে থাকাটাই আসল নয়, আামার বিশ্বাস এ ক্ষেত্রে ম্যান্ডেলা অণুকরণীয় একজন। আমার বিশ্বাস, তাঁর জীবন এত অনুকরনীয় হওয়ার প্রধান কারণ তিনি সাধাসিধা জীবন ধারণ করতেন এবং খুবই সুখি ছিলেন। দার্শনিকদের দাবি, তিনি অসম্ভব সৎ জীবন যাপন করতেন!
ভালো থাকা মানে শুধু মাত্র নৈতিক সৎ থাকা নয়। আমরা ম্যান্ডেলাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করি তার অসংখ্য নৈতিক চারিত্রিক গুণাবলির কারণে। বিশেষত: তার বলিষ্ঠতা, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং তার চমৎকার মেজাজের কারণে! ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ভালোবাসার জন্য তাঁর সুদীর্ঘ আত্মত্যাগ তার নৈতিক চরিত্রের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ম্যান্ডেলার মতো, আামদের জন্যও; যদি আমরা সুন্দর জীবন ধারণ করতে চাই, আমার যদি বাখান (প্রশংসা) পরীক্ষায় পাশ করতে চাই, তবে সঠিক এবং নৈতিক ভাবনার চেয়ে আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেউই মঞ্চে উঠে ব্যঙ্গ করে বলতে পারবে না যে, মাইকেল জ্যাকসন একজন বিশ্বাসঘাতক, সহিংস এবং একজন বুটের সাপুড়ে ছিলেন (তার বিশেষ মুন ওয়াক)। কারণ তার একটা সুন্দর জীবন ছিল এবং তিনি নিজেকে উপভোগ করেছেন, অন্যকে উৎসাহিত করেছেন।
বলা হয়, ম্যান্ডেলা একজন সুখি মানুষ হিসাবে মৃত্যু বরণ করেছেন এবং সেটা কেন, তা নিরূপণ করা খুব কঠিন কাজ নয়। জীবনে টিকে থাকতে হলে আপনাকে সকল ধরনের কষ্ট, হতাশা সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে এবং এসবই আপনাকে চুড়ান্তভাবে বিরতি দিবে আপনার শেষ হিসাব-নিকাশের সময়-যা কিনা আপনার বলিষ্ঠ জীবনের পরিচায়ক! তবে নৈতিক অক্ষমতা ভিন্ন ব্যাপার। জর্জ সাউন্ডারস্ তার গভীর র্পবেক্ষণ থেকে বলেন, ‘আমার অনুতাপ হল আামর উদারতার ব্যর্থতা।’
আপনি যদি শেষ বিন্দু পর্যন্ত পৌছাতে চান, চুড়ান্ত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দেখতে চান, আপনার ভালোবাসার মানুষকে আরও একবার সুখি করতে চান! আপনি যদি আপনার লেনদেনে সৎ থেকে থাকেন, তবে আপনি নিশ্চয় সকল প্রকার বোঝা বা চাপমুক্ত থাকার বোধ করবেন! আপনি সততার সাথে বলতে বাধ্য হবেন, যে আপনি একটা চমৎকার জীবন পেয়েছেন এবং সত্যিই একটা অর্থপূর্ণ জীবন ছিল আপনার।
ড্যানিয়েল এম. হেইব্রন,
সহকারী অধ্যাপক, দর্শন, সেন্ট লুই ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট
ঈষৎ সংক্ষেপিত এবং সম্পাদিত ভাষান্তর:
মোস্তাফিজুর রহমান, দি প্রমিনেন্ট সম্পাদক