রাইসের চোখে স্টার্টআপ

রাইসের চোখে স্টার্টআপ

মো. সাইফ : এরিক রাইস পেশাগত দিক থেকে একজন লেখক। তার আরো একটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। ২০০৯ সালে তিনি বিজনেস উইকের দৃষ্টিতে নির্বাচিত অন্যতম সেরা তরুণ উদ্যোক্তা। আজকের আইকন এরিক রাইস।


প্রথম দিকে এরিক রাইস ছিলেন চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ। কমপক্ষে ১০টি স্টার্ট-আপ ব্যবসায়ে তিনি ছিলেন সক্রিয় এবং প্রায় সবকটিতেই আক্ষরিক অর্থেই তিনি ব্যর্থতার রেখা টেনে ইতি ঘটিয়েছেন।

sssএতগুলো ব্যর্থতা তাকে বোধহয় ক্ষ্যাপাটে করে তুলেছিল। হয়ত সাফল্যের মুখ দেখার আকাঙ্ক্ষাকে করেছিল তীব্র। তাই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে শুরু করতে চাইলেন নতুন কোনো পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা। তিনি জাপানী টয়োটা কোম্পানির লিন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। সেটাকেই তার নতুন পণ্যের উন্নতির কাজে প্রয়োগ করলেন। নতুন পদ্ধতিটিকে এতই কার্যকরী তিনি করেছিলেন যে, ২০১২ সালে তার কোম্পানির মুনাফা হয়েছিলো ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি!

তার পদ্ধতির নাম ছিলো লিন স্টার্টআপ। এই পদ্ধতি সম্পর্কে ধারনা দেওয়া শুরু করেন এরিক রাইস। বছর দুয়েকের মধ্যেই এরিকের ‘লিন স্টার্টাআপ’ পরিণত হয়েছে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্যে একটি অনুসরণীয় পদ্ধতিতে। লিন স্টার্টআপ পদ্ধতি মূলত একটি নতুন উদ্যোক্তার ব্যবসায়ের সমস্যাগুলো সম্পর্কে ধারনা নিয়ে সেগুলো সমাধান-প্রণালী সম্পর্কে আলোকপাত করে। এছাড়া, কীভাবে একটি নতুন স্টার্টআপ ব্যবসায় দ্রুত সাফল্য পেতে পারে এবং এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কী হবে সেসব সম্পর্কে ধারনা দেয় লিন স্টার্টআপ মেথড।

এরিক রাইস লিন স্টার্ট আপ নিয়ে একটি বই লিখেছেন যার নাম, ‘The Lean Startup: How Today’s Entrepreneurs Use Continuous Innovation to Create Radically Successful Business.’ নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বইটি। এটি প্রকাশ করেছে ‘ক্রাউন-বিজনেস’।

সংক্ষিপ্ত পরিসরে ধারনা দেওয়ার জন্যে ‘লিন স্টার্টআপ’ বইটি থেকে পাঁচটি মূলনীতি তুলে ধরা হলো।

১. উদ্যোক্তারা সব জায়গায় বিরাজমান : উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেকোনো আকারের প্রতিষ্ঠানে যেকোনো সময় যেকোনো পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করে দেওয়ার মানসিকতা থাকলেই তাকে উদ্যেক্তা বলা যাবে। কাজেই লিন স্টার্টআপ সব ধরনের উদ্যেক্তার জন্যেই প্রযোজ্য হবে।

lean_book.png.scaled500-227x300২. উদ্যেগই ব্যবস্থাপনা : স্টার্টআপ যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান তাই এর ব্যবস্থাপনা কৌশলও থাকতে হবে। অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি ও ব্যর্থতার হাতছানিকে জয় করে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবন করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৩. সঠিক শিক্ষণ-প্রক্রিয়া : স্টার্টআপ কোম্পানি মুনাফা অর্জন করলেই তাকে সফল বলা যাবে না। কীভাবে তারা এগিয়ে যাচ্ছে, প্রতিকুলতা জয় করে টিকে থাকছে সেটাই সাফল্য। তাদের এই বিষয়গুলোই বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচাই করতে হবে সঠিকভাবে।

৪. উদ্ভাবনীয় একাউন্টিং : প্রতিষ্ঠানকে উন্নত করতে কিছু ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে হয়। যেমন কেমন করে অগ্রগতি মাপা যাবে, কীভাবে মাইলস্টোন ঠিক করবো, কোনটিকে অগ্রাধিকার দেবো – সেই বিষয়গুলোতে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। কাজে, প্রচলিত একাউন্টিং যেখানে খালি টাকা পয়সার হিসাব রাখা হয়, তার বাইরে গিয়ে হিসাব পরিমাপ করতে হবে।

৫. বানাও মাপো শেখো : স্টার্টআপের মৌলিক কাজ নতুন কোনো ধারনাকে একটি পণ্য বা সেবাতে পরিণত করা, গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা। এরপর বুঝতে এবংশিখতে হবে ওই পণ্য বা সেবা উৎপাদনের কাজ কি লাভজনক হচ্ছে এবং সেটা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা। সকল স্টার্টআপকেই এই পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে হবে।

ericriesযারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কিংবা ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন নতুন ধারনা কিংবা কলাকৌশল পেতে এরিকের বইটি হতে পারে একটি চমৎকার মাধ্যম এবং অনুপ্রেরণার জন্যে উদাহরণ হতে পারে এরিকের ব্যর্থতা জয় করে সফল হওয়ার গল্পটি!

তথ্যসূত্র : লিন-স্টার্টআপ ওয়েবসাইট, নিউইয়র্ক টাইমস, লাইফহ্যাক ডটকম, উইকিপিডিয়া ও এরিক রাইসের লিংকডইন প্রোফাইল।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment