তাহাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

তাহাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

  • রিক্তা রিচি

প্রতিটি মানুষকে তাদের জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ব্যার্থতার মুখোমুখী হতে হয়। এটা হতে পারে সাধারণ কিছু যেমন প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকুরী না পাওয়া, গাধার মত খাটুনির পরও কম নম্বর পাওয়া। কিন্তু যা আপনাকে সজ্ঞায়িত করে তা আপনার ব্যার্থতা নয়। তথাপি আঘাত পাওয়ার পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন তা উল্লেখযোগ্য।

এখানে কিছু ব্যার্থতা থেকে সফল হওয়ার গল্প আছে যারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত হয়েছেন। এই গল্পগুলো নিঃসন্দেহে আপনাকে অনুপ্রেরনা দিবে সেসব দিনগুলোর যখন আপনি আশা ছেড়ে দিয়েছেন।


glenn-cunninghamগ্লেন কানিংহাম

পূর্বে : একদা এক স্কুলের ছাত্র স্কুলেই অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছিল এবং ধারনা করা হয়েছিল সে বেঁচে থাকবে না। তার মা বলেছিলেন সে যদি বেঁচে থাকে তাহলে সারাজীবন তাকে বিকলাঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

কিন্তু এই সাহসী বালক চায়নি মরে যেতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার কোমরের নিচ থেকে পেশিচালনসংক্রান্ত ক্ষমতা ছিল না। তার চিকন পা প্রানহীনভাবে ঝুলে গিয়েছিল। শেষে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার হেঁটে যাওয়ার সংকল্প অদম্য ছিল। বাসায় যখন সে বিছানায় থাকত না, সে হুইলচেয়ারে অবরুদ্ধ ছিল। একদিন সে নিজেকে হুইলচেয়ার থেকে সরিয়ে ফেলে পিছনের পা টেনে ঘাসের উপরে পড়ে গেল। সে কখন সংকল্প করল অপ্রতিহতভাবে হেটে যাওয়ার। তারপর সে প্রতিদিন তাই করত, নিজের উপর বিশ্বাস রেখে যেন সহায়হীন পথে ভ্রমণ করতে সক্ষম হোন। তার অধ্যবশায় এবং অটল সংকল্পের সাথে সে দাঁড়ানোর ক্ষমতার উন্নতি করেছে, থেমে থেমে হেঁটেছে, নিজে নিজে হেটেছে এবং দৌড়িয়েছে।

পরে : তারপর সে স্কুলে হাটা শুরু করেছে, স্কুলে দৌড় দিয়েছে নিছক আনন্দের জন্য। পরবর্তীতে কলেজে তিনি ট্রাক টিম তৈরী করেছেন। ১৯৩৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে নিউয়র্কের বিখ্যাত মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে  এই তরুণ যুবক, যার নিশ্চিত হাঁটার কথা ছিল না, যিনি কখনোই দৌড়ানোর আশা ছাড়তে পারেন নি, এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বালক, ড. গ্লেন কানিংহাম, বিশ্বের দ্রুততম মেইল দৌড়েছিলেন।

.

chris-gardnerক্রিস্ট গার্ডনার

পূর্বে : তার ছিল যন্ত্রনাগ্রস্থ শৈশব। তার বাবা মা ছিল বিভক্ত। তার সৎ বাবা ছিলেন মায়ের প্রতি এবং ভাইবোনদের প্রতি ভীসণ নিষ্ঠুর। তার মা তার সৎ বাবার অভিযোগের কারণে মিথ্যাভাবে দোষী সাব্যস্থ হয়। যেহেতু  সে এবং তার ভাইবোনদের যত্ন নেয়ার মতো কেউ ছিল না, ৮ বছর বয়সে পালক থাকতে হয়েছে। তার প্রথম বিবাহ আংশিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে তার পছন্দের মেডিকেল কর্মজীবন অনির্বাচন থেকে এবং সহধর্মিনী দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। শুধু চিকিৎসার সরঞ্জাম বিক্রেতা হিসেবে শোচনীয়ভাবে ব্যার্থ হয়নি তার গার্লফ্রেন্ড ও তাকে পরিত্যাগ করেছে তার আর্থিক অবস্থার অবনতির কারনে। গৃহহীন এই ব্যক্তি তার ছেলেকে সাথে নিয়ে রাস্তা, পার্ক, এয়ারপোর্ট এমনকি পাবলিক টয়লেটে থেকেছেন।

পরে : ১৯৮২ সালে লাইসেন্সিং পরীক্ষায় পাশের পর তিনি ডিন রয়টারের পূর্ণকালীন কর্মী হয়ে যান। তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘ব্রোকারেজ ফার্ম গার্ডনার রিচ @ কোং  প্রতিষ্ঠা করেছেন যা থেকে তিনি শেয়ারের ৭৫ শতাংশ পান। ২০০৬ সালে গার্ডেনারের ছোট অংশ মাল্টি মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে বিক্রি করে দেন।

তিনি আর কেউ নন; তিনি হলেন ক্রিস্ট গার্ডনার । ক্রিস্টোফার গার্ডনার ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। হলিডে ফিল্ম এ তার জীবন চিত্রিত হয়েছে- সুখসাধনা, যা শুধু ব্লকবাস্টারই হয়নি সারা বিশ্বব্যাপী দর্শকদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছিল।

.

actonবিরান অ্যাকশন

পূর্বে : ২০০৯ এর মধ্যদিকে, তিনি এমন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন যাকে কেউ মজুরি দিতে চাইতেন না। ইয়াহু এবং অ্যাপলের এক ডজন অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও, তিনি দুই ধাপ নিচে নেমে গিয়েছিলেন সে সময়ে আসন্ন ইন্টারনেট কোম্পানির কারণে। প্রথমত টুইটার, দ্বিতীয়ত ফেইসবুক।

পরে : যখন তিনি অন্য কোনো কোম্পানি খুঁজে পাচ্ছিলেন না যা তাকে ভাড়া করবে, তিনি অন্য ইয়াহু অয়ালবাম, জেন কউম এর সাথে জোট বাধেন এবং অ্যাপলিকেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন যা শুধুমাত্র ক্লাউড ভিত্তিক মেসেজিংকে অধীনস্থ করেনি বরং সারা বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। হ্যা, তিনি বিরান অ্যাকশন ছাড়া অন্য কেউ নন যিনি হোয়াটস অ্যাপের এর উন্নতি করেছেন। হোয়াটস অ্যাপ ফেইসবুক কিনে নেয় ২০১৪ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে এবং উপার্জন হয়েছিল প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার।

.

amitabhঅমিতাভ বচ্চন

পূর্বে : এই সুপারস্টার প্রথমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ১৯৭০ এর প্রথমদিকে। বলা চলে, ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর মুভিগুলোতে তার অধিপত্য ছিল যার কারণে ফ্রান্সের ডিরেক্টর ফ্রাঙ্কুইস ট্রুফট তাকে ডাকতেন ‘একজন মানুষ ইন্ডাস্ট্রি’ বলে। কিন্তু এক সময়ে এসে অনেকগুলো মুভি যা ক্রমাগত রিলিজ হয়েছিল তা বক্স অফিসে অনুত্তীর্ন ছিল। কয়েক বছর পর তার প্রোডাকশন হাউজ পতনের শীর্ষে গিয়েছিল, অবশেষে ১৯৯৭ সালে তার আর্থিক এবং কর্মক্ষমতার পতন হয়।

পরে : যাহোক, তিনি শীঘ্রই একটি প্রত্যাবর্তন তৈরী করেন এবং ২০১৫ এর হিসাবে তিনি এখন পর্যন্ত  সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশী সফল এবং শ্রদ্ধেয় তারকা। এই ব্যক্তি আর কেউ নয়, বিগ বি অমিতাভ বচ্চন।

.

kj rowlingজেকে রাউলিং

পূর্বে : এই রমণীর কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। সারা বিশ্বে তার বই ৪০০ মিলিয়নের বেশী বিক্রি হয়। কিন্তু তার জীবনে এমন এক সময় ছিল যখন তিনি বিষন্নতায় ভুগতেন এবং সদা আত্মহত্যার ঘোরে থাকতেন। তার বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল এবং তিনি কর্মক্ষম সন্তান নিয়েও কর্মহীন ছিলেন। তিনি সরকারী সাহায্যের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন কারণ তিনি খুবই দরিদ্র ছিলেন এবং নিজের ও তার কন্যা সন্তানের ব্যয়ভার বহন করতে পারতেন না।

১৯৯৫ সালে তিনি তার প্রথম বই পুরাতন ম্যানুয়াল টাইপরাইটারে পান্ডুলিপিটি শেষ করেন। ১২টি প্রকাশনা সংস্থায় এটি জমা দেন এবং প্রতিটি প্রকাশনা থেকে তা ফিরিয়ে দেয়। ব্লুমসব্যারির সম্পাদক বেরি কানিংহাম তাকে উপদেশ দিয়েছেন একটি দিনের চাকুরী নিতে যেহেতু বাচ্চাদের বই লেখা থেকে অর্থ উপার্জনের সামান্য সুযোগ ছিল।

পরে : আজ তিনি যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের লেখক। তার সম্পদ ৫৬০ মিলিয়ন যা তাকে যুক্তরাজ্যের সেরা ধনীদের মধ্যে ১২তম স্থানে ভূষিত করেছে। তিনি আর কেউ নন তিনি জেকে রাউলিং- হ্যারি পটার সিরিজের জন্মদাত্রী।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment