মিন্টুর পাঠশালা

মিন্টুর পাঠশালা

  • লিডারশিপ ডেস্ক

অর্থের অভাবে নিজে ভালো কোনো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও সানি রহমান মিন্টু এলাকার হতদরিদ্র কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে ঝড়ে না পড়ে সেজন্যই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন “শিক্ষার আলো” নামের একটি পাঠশালা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মিন্টু। ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান বাবা মোতালেব হোসেন। ব্যতিক্রমী “শিক্ষার আলো” পাঠশালাই হচ্ছে এলাকার দরিদ্র  ছেলে-মেয়েদের শিক্ষালয়। যেখানে গিলন্ড, জয়নগর ও শৈলকুড়া গ্রামের অস্বচ্ছল কৃষক, দিনমজুর, রিকশা চালকের সন্তানদের বিনা পয়সায় পড়ানো হয়। আর কাজের জন্যই মিন্টু হয়ে উঠেছেন অনন্য সাধারণ। গ্রামের হতদরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাস্টার্সের শেষ বর্ষের  ছাত্র মিন্টু।

পাঠশালার তত্ত্বাবধায়ক সানি রহমান মিন্টু জানান, ২০১১ সালে তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে একটি পাঠশালা খোলেন। এক সময় বন্ধুরা সেই পাঠশালার হাল ছেড়ে দিলে কিছুদিন পাঠশালাটি বন্ধ থাকে। কিন্তু  হাল ছাড়েননি মিন্টু। ২০১৪ সালে নিজেই সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে শিক্ষার আলো নামের পাঠশালাটির কার্যক্রম নতুন করে শুরু করেন।

মিন্টু বলেন, আমি হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা ঝালমুড়ি বিক্রি করে অতি কষ্টে আমাদের সংসার চালান। অর্থাভাবে নিজে কখনো প্রাইভেট পড়তে পারিনি। সেই উপলব্ধি থেকেই আমি পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠা করেছি। যাতে এলাকার দরিদ্র ছেলে-মেয়েরা আমার পাঠশালা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে। তিনি আরও বলেন, অর্থের অভাবে যাতে কারো লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য আমি নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে যা রোজগার করি তার প্রায় সবটাই এই পাঠশালার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যয় করছি। আমার এখানে কোনো ছাত্রছাত্রীকে একটি পয়সাও দিতে হয় না বরং খাতা ও কলমসহ যার যা প্রয়োজন তার সবটুকুই আমি বহন করে আসছি সাধ্যমতো। শিক্ষাদানের পাশাপাশি আমি সামাজিকভাবে মাদক বিরোধী আলোচনা এবং বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করে যাচ্ছি।

জানা যায়, সূর্য উঠার পর পরই মিন্টুর পাঠশালায় চলে শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে সেখানে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভোর পৌনে ৬টা থেকে শুরু হয়ে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত এখানে চলে পাঠদান। এরপর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। মিন্টুর পাঠশালায় বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে যারা তাদের সন্তানদের শিক্ষক রেখে প্রাইভেট পড়াতে পারেন না তারাই এই পাঠশালার সদস্য।

মিন্টুর পাঠশালায় পড়তে আসা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার জানান, বাবা টেম্পো চালক তাই টাকার অভাবে বাইরের কোনো স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে পারি না। সেজন্য মিন্টু স্যারের পাঠশালায় পড়ে প্রতিদিন স্কুলে যাই। ৫ম শ্রেণীর ছাত্র রাজিব জানান, মিন্টু স্যার আমাগো খুব ভালোভাবে পড়ালেখা বুঝিয়ে দেন। এখান থেকে পড়া শিখে স্কুলের পড়া দিতে সহজ হয়। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রাজিব বলে, মিন্টু স্যারের কাছে শুধু টাকা ছাড়া পড়তে পারছি তাই নয়, স্যার আমাগো প্রতিমাসে খাতা ও কলম কিনে দেন।

মিন্টু আরো বলেন, একটি এনজিওর দোচালা ঘরের ভেতর বর্তমানে ৬৩ জন ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা দিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমার কোনো চাওয়া নেই শুধু সরকারের কাছে একটাই চাওয়া পাঠশালাটিকে টিকিয়ে রাখতে একটু জায়গা আর একটা ঘরের দরকার।

এলাকার সমাজসেবক উজ্জল খান বলেন, মিন্টুর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এলাকার অনেক গরিব ছেলে মেয়ে টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারে না। তাদের জন্য মিন্টুর শিক্ষার আলো পাঠশালাটি অনেক উপকারে আসছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাকিব  হোসেন ফরহাদ বলেন, মিন্টু যেভাবে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করে আসছে এটা প্রশংসনীয়। শুধু  চেয়ারম্যান হিসেবে নয় একজন সচেতন মানুষ হিসেবে মিন্টুর পাঠশালা চালাতে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় সেটা আমি করবো।

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment