একটু একটু করে একতা কাপুর

একটু একটু করে একতা কাপুর

নিজের প্রচেষ্টায় যেসব ভারতীয় নারী উদ্যেক্তা সফল হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একতা কাপুর। তিনি বালাজি টেলিফিলমসের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৩২ কোটি রুপি। কিন্তু একদিনেই তিনি একতা কাপুর হয়ে ওঠেননি। একটু একটু করে নানা সংগ্রামের পথ পেরিয়ে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে তাঁকে। বাবা ও ভাই-দুজনেই জনপ্রিয় অভিনেতা; তাদের প্রভাব এড়িয়ে কীভাবে একতা কাপুর হয়ে উঠলেন প্রমিনেন্ট নারী সেই গল্প শোনাচ্ছেন মারুফ ইসলাম


Ekta-Kapoor-Hairstyles-6একতা কাপুর নানাভাবে পরিচিত হতে পারতেন। তাঁর বাবা ষাটের দশকের সুপার স্টার জিতেন্দ্র। তিনি চাইলে বাবার পরিচয়ে পরিচিত হতে পারতেন। কিংবা তাঁর ভাই আরেক বলিউড স্টার তুষার কাপুর, চাইলে তাঁর পরিচয়েও পরিচিত হতে পারতেন। কিন্তু এসব পরিচয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একতা কাপুর স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছেন। এখন গোটা বিশ্ব একতা কাপুরকে চেনে বালাজি টেলিফিলমসের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। এর বাইরে একজন সফল প্রযোজক হিসেবে, একজন সফল চিত্রনাট্যকার হিসেবেও রয়েছে তাঁর বিপুল খ্যাতি।

বয়স মাত্র চল্লিশ। চল্লিশে চালসে নয়, তা প্রমাণ করেছেন এই মেধাবী নারী। ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে বালাজি টেলিফিলমস একটি সফল প্রতিষ্ঠানের নাম। সেই প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ অধিকার করেছেন একতা কাপুর। তাঁর ত্ত্বাবধানে একের পর এক বক্স অফিস হিট করা সিনেমা ও টেলিভিশন ধারাবাহিক তৈরি করে চলেছে বালাজি টেলিফিলমস। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে লাভ, সেক্স ঔর ধোকা, ওয়ানস আপন অ্যা টাইম ইন মুম্বাই, রাগিনি এমএমএস, দ্য ডার্টি পিকচার, লুটেরা, বিশ্বরূপ-২, সাস ভি কাভি বহুথি, কাহানি ঘর ঘর কি, কিতনে মোহাব্বত হ্যায়, তেরে লিয়ে ইত্যাদি।

পেশাজীবনে সফল এই নারীর মোট সম্পদ ১ দশমিক ৩২ কোটি রুপি। বালাজি টেলিফিলমস থেকে তিনি প্রতি মাসে বেতন নেন ৬৬ লাখ ৩০ হাজার রুপি। গত বছর নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি তাকে আমন্ত্রন জানিয়েছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য। কীভাবে একজন সফল ব্যবস্থাপক হয়ে উঠলেন একতা সেই গল্প শুনিয়েছেন তিনি। একতা বলেছেন, ‘গ্যালারির দর্শকের কথা মাথায় রেখে আমি কখনো খেলি না। দর্শকরা আমার কাছে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করতে পারে, কিন্তু সবার প্রত্যাশা পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তাই নিজের ইচ্ছামতো খেলি। আর খেলায় জেতার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। আমি আসলে খেলা বলতে জীবনকেই বোঝাচ্ছি, আর দর্শক মানে আমার চারপাশ।’

একতা কাপুরের জন্ম ১৯৭৫ সালের ৭ জুন, ভারতের মুম্বাই শহরে। পড়ালেখার শুরু মুম্বাই স্কটিশ স্কুলে। এরপর মিঠিবাই কলেজ থেকে বানিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। পেশা জীবন শুরু করেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। তখন বিজ্ঞাপন নির্মাতা কৈলাস সুরেন্দ্রনাথের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন একতা। কিন্তু খুব একটা সফল হতে পারেননি সে যাত্রায়। এরপর ১৯৯৪ সালে স্নাতক শেষ করে নিজেই একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন, নাম দেন বালাজি টেলিফিলমস!

কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না একতা কাপুরের। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রথম তিনটি ছবিই ব্যবসায়িকভাবে দারুণ ব্যর্থ হয়। তাকে কি? ‘পরাজয়ে ডরে না বীর’ কিংবা ‘ফেলিউর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস’-এসব আপ্তবাক্য তো তাঁর জানাই আছে। তাই হাল ছাড়েননি একতা। দাঁতে দাঁত কামড়ে শুধু দুঃসময় পাড়ি দিয়েছেন। শেষে ঠিকই সাফল্যের পাল উড়িয়েছেন জীবনের তরীতে। তার জন্য বছর ছয়েক ভীষণ ধৈর্য্য আর অধ্যবসায়ের পরিচয় দিতে হয়েছে তাঁকে। একের পর এক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এঁটেছেন আর তা বাস্তবায়নের জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করেছেন।

অবশেষে ২০০০ সালে সাফল্যের মুখ দেখে বালাজি টেলিফিলমস। বলা চলে, ভারতীয় স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ইতিহাসে একটি বিপ্লব করে বসেন একতা কাপুর। এ বছরই তিনি শুরু করেন সাস ভি কাভি বাহু থি এবং কাহানি ঘর ঘর কি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি একতা কাপুরকে। পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বালাজি টেলিফিলমসকে।

তথ্যঋণ : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, আইএমবিডি ও উইকিপিডিয়া।

Sharing is caring!

Leave a Comment