স্টেফানির গাগা হয়ে ওঠা

স্টেফানির গাগা হয়ে ওঠা

গান গেয়ে বিশ্বের লাখো শ্রোতার মন জয় করেছেন তিনি। মন জয় করেছেন সঙ্গীতবোদ্ধাদেরও। পেয়েছেন গ্যামি অ্যাওয়ার্ড। বেশ লম্বা এটা নাম তাঁর। স্টেফানি জোয়ান আঞ্জেলিনা জারমানাডা। কিন্তু এ নামে কেউ চেনে না তাঁকে। বিশ্ববাসী তাঁকে চেনে লেডি গাগা নামে। স্টেফানির লেডি গাগা হয়ে ওঠার গল্প শুনুন মারুফ ইসলামের বয়ানে।


gaga-julie-oscars-23feb15-16একটি গ্লোবাল পরিবারে জন্ম লেডি গাগার। তাঁর মা সিন্থিয়া ইতালিয়ান। বাবা জোসেফ ফ্রেঞ্চ কানাডিয়ান। আর লেডি গাগা মার্কিন; তাঁর জন্ম নিউইয়র্কে ১৯৮৬ সালে।

বাবা ছিলেন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। ফলে ছোটবেলা থেকেই মাইকেল জ্যাকসন, এল্টন জন আর কুইন ব্যান্ড তাঁর অনুপ্রেরণা। কুইন সত্তরের দশকে গেয়েছিলেন রেডিও গাগা গানটি। স্টেফানির খুব পছন্দের গান। হাঁটতে-চলতে প্রায়ই গাইতেন। সে থেকেই নিজের নাম নিয়েছেন—লেডি গাগা।

গাগার মা ছিলেন বেশ ফ্যাশন সচেতন। তিনিই গাগার ফ্যাশন আইকন। গাগা বলেছেন, ‘আমি আমার মায়ের ফ্যাশন সেন্স পেয়েছি’। এছাড়া গানের বিষয়েও তাঁর মা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ছোটবেলাতেই তিনি গাগাকে পিয়ানো কিনে দেন।

পড়ালেখাতেও ভালো ছিলেন গাগা। তবে বেশি দিন স্কুলে থাকেননি। কারণ স্কুলের বাধা-ধরা নিয়ম তাঁর ভালো লাগেনি। তাঁর স্কুল ছাড়ার কথা শুনে মা কেঁদে ফেলেছিলেন। আর বাবা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন এক বছর। এর মধ্যেই তাঁকে কিছু করে দেখাতে হবে। গাগা ১৫ বছর বয়স থেকেই রোজগার করতে শুরু করেছিলেন।

২০০৮ সালে আসে গাগার প্রথম অ্যালবাম। প্রথম দিকে অনেক সমস্যার মুখে পড়েছিলেন। তাঁর নাচ ছিল অন্যরকম। লোকজন সহজভাবে নিত না। তবে ফেইম অ্যালবামটি মুক্তি পাওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি এসেছিল। এই অ্যালবামের ‘জাস্ট ডান্স’ গানটি জনপ্রিয় হয় এবং গ্র্যামিতে তিনি মনোনয়ন পান। ওই অ্যালবামেরই পোকার ফেস গানটির জন্য গ্র্যামি জিতে নেন।

গাগা তাঁর নিজের গানের পরিবেশনার সব খুঁটিনাটি বিষয় নিজেই দেখেন। স্টেজ থেকে পোশাক এমনকি লাইটিং পর্যন্ত। তাঁর প্রত্যেকটি পরিবেশনাই হয় নতুন রকমের। এ কাজে সাহায্য করার জন্য তাঁর একটি বিশেষ দল আছে, নাম ‘দ্য হাউজ অব গাগা’।

মঞ্চের গাগা আর মঞ্চের বাইরের গাগার মধ্যে পার্থক্য খুব কম। মঞ্চের বাইরেও তিনি নেচে-খেলে বেড়ান। তাঁর ভক্ত যাদের তিনি ‘লিটল মনস্টারস’ নামে ডাকেন তাদের সঙ্গে গল্প করতে যান রেস্তোরায়। গাগা অনেক স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। তিনি হাইতিতে গিয়েছিলেন ভূমিকম্পের পর পরই, আর জাপানে সুনামি হয়ে যাওয়ার পর সেখানকার মানুষদের জন্য কেঁদেছিলেন। এইডস নিয়ে তিনি নিয়মিত কাজ করেন।

lady-gagaসব কিছুর ওপর গাগার পোশাক-আশাক সবার দৃষ্টি কাড়ে। তাঁর পোশাক বা মেকআপের পেছনে কারণ থাকে। কখনো তা হয় সমকামিতার পক্ষে, কখনো বা হয় সামাজিক সংকীর্ণতার বিপক্ষে। নিপীড়িত মানুষের কষ্টের গল্পও আছে তাঁর কোনো কোনো পোশাকে। একবার গাগার একটি পোশাক খুব আলোচনায় এসেছিল। পোশাকটির নাম বাবল পোশাক। পরিবেশনার আগে গাগা বলেছিলেন, ‘আমি বাবল ড্রেস পরে বাবলের তৈরি পিয়ানোতে বসে ভালোবাসা, শিল্প এবং ভবিষ্যত্ নিয়ে গান গাইব।’ তিনি চেয়েছিলেন, পোশাকটি দিয়ে তাঁকে সবাই মনে রাখুক। বলেছেন, ‘প্রচুর হিট গান বানাই। কিন্তু কদিন পরেই লোকে তা ভুলে যায়। তবে বাবল পোশাকটি লোকে অনেক দিন মনে রাখবে। আমি চেয়েছি, কয়েক মুহূর্তের জন্য দর্শককে বুদবুদে ডুবিয়ে রাখতে। কয়েক মুহূর্তের জন্য জীবনের সব বাজে অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিতে।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেয়েছে গাগার ‘টিল ইট হ্যাপেন্স টু ইউ’ গানটি। এখানে গাগা একটি স্কুলপড়ুয়া মেয়ের কথা বলেছেন, যে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। পরে গাগা বলেছেন, ‘ওই গানটি তাঁর নিজের জীবনেরই ঘটনা। আজকের গাগা সেদিন মুষড়ে পড়তে পারত কিন্তু ইচ্ছাশক্তি তাঁকে এতদূর নিয়ে এসেছে।’

তথ্যঋণ : বায়োগ্রাফি ডটকম, আইএমবিডি, পিপল ম্যাগাজিন, রোলিংস্টোন ও উইকিপিডিয়া।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment