সানজিদার সফলতার গল্প

সানজিদার সফলতার গল্প

  • রিক্তা রিচি

চট্রগ্রামের মেয়ে লুতফা সানজিদা। যিনি একজন সফল উদ্যোক্তা, সফল ব্যবসায়ী। যাকে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনোর আগেই বসতে হয়েছে বিয়ের পিড়িতে। তাই পড়াশোনা করে বড় হওয়ার সব স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় তার। তবে থেমে থাকেননি তিনি। দুর্গম পথ এবং ব্যার্থতার গ্লানি উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠা করেন বুটিক হাউস এবং বিউটি পার্লার। যেখানে নারীদের বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীদের কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা করেন তিনি। আজ এই সফল উদ্যোক্তা লুতফা সানজিদার গল্প শোনাচ্ছেন রিক্তা রিচি।

মাত্র ১৫ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা, পরবর্তিতে মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়ে তিনি শুরু করেন ব্যবসা। সূচনা করেন অনন্দ্য বুটিক হাউস এবং অনিন্দ্য বিউটি পার্লারের। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি অদম্য সানজিদাকে। হাটি হাটি পা পা করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে তিনি হয়ে উঠেন চট্টগ্রামের সফল নারী উদ্যক্তা।

তবে এই সানজিদার প্রথম জীবন কাটে নিদারুন আর্থিক কষ্টে। যে বয়সে পড়াশুনা করে বেড়ে উঠার কথা, যে বয়সে প্রজাপতির পিছু পিছু ছোটা আর খেলাধুলায় মত্ত থাকার কথা সেই বয়সেই সানজিদাকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। সংসারের অভাব অনটন, স্বামীর দ্বায়িত্বহীনতা এবং শ্বাশুড়ির অত্যাচার সহ্য করেও নিজের বড় হওয়ার স্বপ্ন মনে লালন করেন তিনি। সংসারের হাল ধরতে পার্টটাইম চাকরীও করতে হয় তাকে। তবে পার্টটাইম চাকরী করেও যখন সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়, ঠিক তখনই হাতে তুলে নেন সুই এবং সুতা। শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন তার হাতের তৈরি পোষাক। এরপর নিজের বুটিক হাউজ এবং বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেখান শুরু হয় তার সফলতার পর্ব।

তিনি জানান, ১৯৮৯ সালে মাত্র ৫ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু হয় তার দৌড়। পরবর্তীতে কাজের সুযোগ পায় আরো অনেক কর্মী। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে প্রতিবন্ধী নারী, ডিভোর্সড নারী, নির্যাতিত নারীদের বিনামূল্যে বুটিক ও পার্লারের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি বাড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের হাতকে।

এই সফল নারীর গল্প ছাপা হয়েছে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রকাশিত নবম-দশম শ্রেনীর “ব্যবসায় উদ্যেগ” বইয়ের দ্বাদশ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে সানজিদার সফলতার গল্প। সারাদেশের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা পড়ছে গৃহবধু থেকে সফল উদ্যক্তা হয়ে ওঠা সানজিদার গল্প। অনুপ্রেরণা পাচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। বইটির সর্বশেষ মুদ্রণ হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

চট্টগ্রামের সফল নারী উদ্যোক্তা সানজিদা জানান “বাণিজ্য বিভাগের নবম-দশম শ্রেনীর লাখ লাখ শিক্ষার্থী আমার সাফল্যের গল্প পড়বে, দেশের মানুষ জানবেন এটা আমি কখনো কল্পনা করিনি। পাঠ্যবইয়ে আমার সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরায় এটিকে জীবনের অনেক বড় পাওয়া মনে করছি। কারন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে ব্যবসা শুরু করলে সফল হতে এ সংগ্রাম এর কাহিনী তাদের মানসিক শক্তি ও সাহস যোগাবে। কিশোর শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রাণিত হবে। আজ নিজেকে কিছুটা সফল মনে হচ্ছে।” favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment