ব্যবসা শুরু করাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ

ব্যবসা শুরু করাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ

  • লিডারশিপ ডেস্ক

গত প্রায় তিন দশকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে একটু একটু করে প্রাকৃতিক রঙের পুনরুত্থান ঘটে যাওয়ার যে গল্পটি রয়েছে, তার পেছনেই কিন্তু রয়েছে দূরদর্শী ও কৃতসংকল্প এক নারীর পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী জগতে পা দিয়ে বসার কাহিনী। বলা হচ্ছে অরণ্য ক্রাফটের রুবী গজনবীর কথা। আশির দশকের শুরুর দিকে দেশ-বিদেশের কোনো কুশলীই যখন ভাবতে পারছিলেন না এমন একটা বিলুপ্তপ্রায় শিল্প দিয়ে এ প্রতিযোগিতার বাজারে পা রাখার কথা, তখন এ নারীর দূরদর্শিতাই কিন্তু ভিন্ন পথে হাঁটার সূচনা করে।

অথচ একজন উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো স্বপ্ন ছিল না রুবী গজনবীর ছোটবেলায়। তার ছোটবেলা কেটেছিল কলকাতায়। তার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকে যান। শিক্ষকতা করেন উদয়ন ও ভিকারুন নিসা স্কুলে। একটি সুইশ এনজিওতেও কাটান চাকরি জীবনের অনেকগুলো বছর। নিজে এককভাবে যেকোনো একটা ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত হবেন, সেটা খুব একটা নিজেও ভাবেননি। এই না ভাবার পেছনে কোনো কারণ ছিল কি? কারণ ছিল বটে, তবে তা ব্যক্তিগত না বলে বরং গতানুগতিক ধ্যানধারণার ব্যাপ্তি থেকেই প্রকাশ করা যায়।

রুবী গজনবী বলেন, নিজের ছোটবেলার সময়টা তো বটেই, এখন পর্যন্ত তিনি যা দেখে আসছেন তা হলো, মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়া হয় না। সবসময় ব্যাপারটা এমনও না যে খুব ইচ্ছে করে এমনটা করা হয় তাদের সঙ্গে, আসলে পূর্বনির্ধারিত মানসিকতার কারণে অবচেতনভাবেই এমন চিন্তা থেকে বাদ পড়ে যায় তারা। তাদেরকে বৈষয়িক আলোচনাগুলোতেও সাধারণত যুক্ত করা হয় না। এমন মানসিকতার প্রতিফলন দেখা যায় পারিবারিক অঙ্গন থেকে শুরু করে চাকরি ক্ষেত্রেও। এর ফলে যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রায়ই একজন নারী কোনো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ স্থানগুলো পর্যন্ত দখল করতে পারছেন না। রুবি গজনবী মনে করেন, মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই যখন ব্যবসায়ে নামে, তখন অনেকটা শূন্য পুঁজি নিয়েই নামে।

base_1476019863-cftu

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে রুবী গজনবীর পথচলার শুরুটি হঠাত্ই ঘটেছিল। বলা যায়, তা খানিকটা শিল্পটির ওপর নিখাদ ভালোবাসা থেকেই। এর পর যখন কাজে নেমে পড়েন, রুবী গজনবীর চ্যালেঞ্জটি শুধু ব্যবসায়ের জগতে টিকে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এটি ছিল আরেকটু বৃহত্ কিছু। কারণ সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়া একটা শিল্পকেই আবার ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় সংকল্প ছিলেন তিনি। নিজের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী হয়েই এ ব্যবসায়ে নামেন। চলতে থাকে এক আত্মপ্রত্যয়ী নারীর এগিয়ে চলার গল্প।

নিজের সঞ্চয়ের টাকা থেকেই ১৯৯০ সালে যাত্রা রুবী গজনবীর। এ প্রসঙ্গে উঠে আসে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তার জীবনের আরেকটি প্রতিকূলতার গল্প। ব্যবসায় শুরুর জন্য চাই পুঁজি। এই পুঁজির সমস্যা অনেকটাই তত দিনে দূর করে দিতে শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু তা শুধুই পুরুষের জন্য। নারীদের লোন দেয়ার আগে প্রতিটি ব্যাংককেই নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে দেখেছেন এ উদ্যোক্তা। জামানত-সংক্রান্ত অনেক নিয়ম পুরুষদের জন্য বেশ শিথিল থাকলেও নারীদের জন্য তা করে তোলা হতো জটিলতর। ফলে ব্যবসা শুরু করতে পারাটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

নিজের জীবনে সব বাধা ডিঙিয়ে এসে আজ রুবী গজনবী ভবিষ্যত্ নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনেকটাই আশান্বিত। তিনি মনে করেন, যেভাবে এগিয়ে চলছে এ দেশ, সেভাবে এগিয়ে গেলেই সব ক্ষেত্রে তাদের সাফল্যগাথা তৈরি করে দেয়ার দিনটি খুব দূরে থাকবে না।

আর এখনো যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে মেয়েরা, সেগুলো বিশ্বজোড়া। সারা বিশ্বেই নিজেদের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে মেয়েরা। তাতে এ দেশের মেয়েদেরও অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানান রুবী গজনবী। কারণ, সুযোগ কেউ কাউকে তৈরি করে দেয় না, সেটা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। এ দেশের মেয়েদের তাই আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজেদের যোগ্যতাকে সবার সামনে মেলে ধরতে হবে।

‘আমাদের মেয়েদের ধারণক্ষমতার কোনো সীমা নাই, সবই ওরা পারে।’ এমনভাবেই এ দেশের নারীদের নিয়ে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন দৃঢ়প্রত্যয়ী এ নারী। favicon59-4

সূত্র : বণিক বার্তা

Sharing is caring!

Leave a Comment