ব্যাংকার থেকে প্রধানমন্ত্রী

ব্যাংকার থেকে প্রধানমন্ত্রী

  • লিডারশিপ ডেস্ক

হঠাৎই ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন। তখনই গুঞ্জন শুরু কে হবেন গ্রেট ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। যোগ্য উত্তরসূরিদের তালিকায় উঠে আসে ৬০ ছুঁই ছুঁই বয়সী রাজনৈতিক নেত্রীর নাম। তেরেসা মে, রাজনীতিতে প্রবেশের আগে ছিলেন একজন ব্যাংকার। লৌহমানবীখ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন তেরেসা মে। 


ব্রিটেনের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় তিনি জনসনের চেয়ে কোনো অংশে কম পিছিয়ে ছিলেন না। ৬০ ছুঁই ছুঁই প্রবীণ এই নারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন দীর্ঘকাল। এ মন্ত্রণালয়ের অগণিত সমস্যার সমাধানও করেছেন তিনি। তবে তাকে এখনো রাজনৈতিক দীক্ষায় অপরিপক্ব মনে করা হয়। তিনি আর কেউ নন, ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। জন্ম সাসেক্সের ইস্টবোর্নে। ছেলেবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পাশাপাশি কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রেখে যাচ্ছেন মেধার ছাপ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে ব্যাংকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে তেরেসা মে প্রবেশ করেন রাজনীতিতে।

ব্যক্তিগত জীবন

সাসেক্সের ইস্টবোর্নে জন্মগ্রহণকারী এই প্রমীলা ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের দুলালী। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০ সালে ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংকার ফিলিপ জন মে’র সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তেরেসা মে’র স্বামী ফিলিপ জন মে’কে বিয়ে করার এক বছরের মাথায় ১৯৮১ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় তার বাবা নিহত হন এবং পরের বছরই তার মা মারা যান। স্বাস্থ্যজনিত কারণে তিনি সন্তান ধারণে অক্ষমতার কারণে মে’ দম্পতি পুরো জীবন নিঃসন্তান থেকে গেছেন। পরিবারের কথা বলতে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তেরেসা মে বলেন, ‘পরিবারে আপনাকে সার্বক্ষণিক সময় দিতে হবে এবং সেখানে দেখবেন যে অনেক কিছুই রয়েছে যা আপনার নেই।’ এ কথা থেকেই বোঝা যায়, তিনি রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি পরিবারের প্রতিও যথেষ্ট যত্নশীল।

indexধর্মযাজক বাবার কন্যা

১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর জন্ম নেওয়া তেরেসা মে’র বাবা হাবার্ট ব্রাসিয়ার ছিলেন একজন ধর্মযাজক। তাই ধর্মীয় শিক্ষাটা শিশুকাল থেকেই ভালোভাবে আয়ত্ত করেন তেরেসা মে। শিশু তেরেসা পড়াশোনা শুরু করেন অক্সফোর্ডশায়ার প্রাইমারি ও গ্রামার স্কুলে। এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একটি ক্যাথলিক স্কুলে চলে যান। ১৩ বছর বয়সে হুইটলির সাবেক হোল্টন পার্ক গার্লস গ্রামার স্কুলে স্থান লাভে সক্ষম হন। ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টির বিলুপ্তি ঘটে ও ছাত্রাবস্থাতেই নিউ হুইটলি পার্ক কম্প্রিহেনসিভ স্কুলে একীভূত হয়। এরপর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

দ্ব্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর অনেকটা আকস্মিকভাবেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এরপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শেষ হয়েছে আগেই। ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এর আগে ১৯৯০ সালের ২২ নভেম্বর পদত্যাগ করেছিলেন ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। এরপর ২৫ বছর কেটে যায়। ২৬ বছরের মাথায় তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী পায় ব্রিটেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করায় ৫৯ বছর বয়সী কনজারভেটিভ নেতা তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এ বছর ২৩ জুন অনুষ্ঠিত গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় যাওয়ার পরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন ক্যামেরন। এরপরই সারা বিশ্বে লৌহমানবী হিসেবে পরিচিত মার্গারেট থ্যাচারের উত্তরসূরি দ্বিতীয় নারী সরকার প্রধান পেল ব্রিটিশরা।

ভূগোলের ছাত্রী থেকে রাজনীতিবিদ

তেরেসা মে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট হিউজেস কলেজে অধ্যায়ন করেন। ১৯৭৭ সালে সেখান থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ভূগোল বিষয়ে পড়া শেষ করে পেশা জীবনের শুরুতে ব্যাংকার হিসেবে যোগ দেন ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে’। ১৯৯৭ সালে পশ্চিম লন্ডনের মেইডেনহেডে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ফিন্যান্সিয়াল কনসালট্যান্ট। তেরেসার স্বামী ফিলিপ জন মে’ও একজন ব্যাংকার। ২০০২ সালে তেরেসা মে কানজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান হন। এরপর ২০১০ সালে পান ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। ১৯৯৭ সাল থেকে এমপি এবং ৬ বছর ধরে টানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন ৫৯ বছর বয়সী মে। তেরেসা ব্রেক্সিট প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকার পক্ষে ছিলেন। অথচ ৫৯ বছর বয়সী এই নারীকে ঠিক উল্টো কাজটিই করতে হচ্ছে। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছে তাকে। আর এখন এর পাশাপাশি ব্রিটেন জুড়ে বিভক্ত জাতির মাঝে একতা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ জয় করতে হবে এই প্রমীলা প্রধানমন্ত্রীকে।

বাকিংহাম প্যালেসের প্রস্তাব

ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগপত্র হস্তান্তরের পরপরই যখন ব্রিটেনের রাজনীতিতে হঠাৎ সংকট তৈরি হয়। এর ইতি টানতেই রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হিসেবে তেরেসা মে-কে ডেকে পাঠান এবং তাকে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেন। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তেরেসা মে। ক্ষমতা গ্রহণের পর তেরেসা মে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে এক জাতি গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

index2বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া

তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সারা বিশ্ব খেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। তবে পদত্যাগের আগে তেরেসা মে’র আগাম নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী’।

তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটেনের আগামী দিনগুলোতে যে নেতৃত্ব প্রয়োজন, তা তেরেসা দক্ষতার সঙ্গেই চালিয়ে নিতে পারবেন।

এরপর থেকেই প্রায় সব প্রতিক্রিয়ায় তেরেসা মে-কে স্বাগত জানানো হয় বিশ্বনেতাদের পক্ষ থেকে। ইইউ প্রেসিডেন্ট জাঁ ক্লদ জাঙ্কার ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে-কে আলোচনার আহ্বান জানান। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ইইউ সদর দফতর ব্রাসেলসে জাঙ্কার বলেন, এমন পরিবেশ তৈরি করুন যেন ব্রিটেন এবং ইইউ আলোচনার সুযোগ পায়। পাশাপাশি তিনি তেরেসা মে-র সাফল্য কামনা করেন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিনfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment