দুই চাকার রাজকন্যা

দুই চাকার রাজকন্যা

  • লিডারশিপ ডেস্ক

‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে উইড়া-উইড়া…’- পুরনো দিনের বাংলা সিনেমার এ জনপ্রিয় গানের মতো সাইকেলে তুমুল গতি তুলে যারা সাইক্লিং খেলাটিতে এখন রাজত্ব করে বেড়াচ্ছেন, সুইস ক্রস কান্ট্রি সাইক্লিস্ট জোলান্ডা নেফের অবস্থান তাদের শীর্ষ সারিতে। ১৯৯৩ সালের ৫ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া, বর্তমানে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই সুন্দরীতমা ইতিমধ্যেই জিতে নিয়েছেন ‘ইউসিআই মাউন্টেন বাইক ওয়ার্ল্ড কাপ’-এর দুটি [২০১৪-২০১৫], ‘ইউসিআই মাউন্টেন বাইক অ্যান্ড ট্রায়ালস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপস’ অনূর্ধ্ব ২৩ বিভাগের তিনটি [২০১২-২০১৪] এবং ‘ইউসিআই মাউন্টেন বাইক ম্যারাথন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপস’-এর বর্তমান আসরের [২০১৬] শিরোপা। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালের ‘ইউরোপিয়ান গেমস’-এর ‘সাইক্লিং- উইমেনস ক্রস কান্ট্রি’ প্রতিযোগিতায় নিজ দেশের জন্য প্রথমবারের মতো জিতে এনেছেন স্বর্ণপদক। একই বছরে ‘সুইস ন্যাশনাল রোড রেস চ্যাম্পিয়নশিপস’-এরও সেরার মুকুট উঠেছে তার মাথায়।

শ্রেষ্ঠতমার বয়ান

75fccdfd32d9bf5e605ccc0af03592d8নিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে [www.jolandaneff.chতিনি লিখেছেন- ‘আমি এ খেলায় প্রথম পা রাখি ১৯৯৯ সালে, রিভেরায় [সুইজারল্যান্ডের উপশহর]। সেই প্রতিযোগিতায় জয়ের একটা চাপ আমার মধ্যে কাজ করছিল; আর তাতে সম্ভবত মস্তিষ্কের চেয়ে বরং ভাগ্যের ওপরই বেশি ভরসা করতে হয়েছে আমাকে।… খেলাটা বেশ ভালো লেগে যায় আমার। তারপর থেকে থামিনি আর। মূলধারার প্রতিযোগিতায় আসার পর বিষয়টি আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে আমার কাছে। প্রথমবার জাতীয় রাউন্ড কোর্স রেসে অংশ নিই, ২০০৪ সালে। রেইনাখ উপশহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেটি। আমার ফল অবশ্য সেসব প্রতিযোগিতায় খুব একটা খারাপ ছিল না। বাবা তখন আমার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। সে অঞ্চলের একটি ট্রেনিং গ্রুপে ভর্তি করে দেন আমাকে। এখানেই এই খেলাটির মৌলিক পাঠ বেশ দারুণভাবে রপ্ত করে নিই। কোনো স্পোর্টস স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করিনি আমি; বরং পড়াশোনা করেছি সাধারণ স্কুলে। তবু মাউন্টেন বাইকিং বরাবরই আমার প্রিয় শখ হিসেবে রয়ে গেছে।

২০১১ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর পড়াশোনা থেকে এক বছরের বিরতি নিয়ে এর মধ্যে মাস তিনেক কাটিয়েছি নিউজিল্যান্ডে। পরের বছরের সামার সেমিস্টারে ডিজাইনের ওপর পাঠ শুরু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেই মৌসুমটি আমার জন্য ছিল একেবারেই স্বপ্নের মতো। অনূর্ধ্ব ২৩ বিভাগে প্রথমবারের মতো সুইস, ইউরোপিয়ান ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতে নিই তখন- ভাবা যায়! এসব সাফল্য আমার সামনে চলার একটা নতুন পথ খুলে দেয়। ফলে পৃথিবীর সেরা টিম- ‘জায়ান্ট প্রো এক্সসি টিম’-এর সঙ্গে একটা পেশাদারি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার সৌভাগ্য লাভ করি। তাছাড়া সুইস আর্মির স্পোর্টস ফান্ডিং প্রোগ্রামে জায়গা করে নিই।

২০১৩ সালে পেশাদার মাউন্টেন বাইকার হিসেবে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় নামি আমি এবং বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করি। পরের বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিই আর জুনে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে নিজের নাম দেখি এক নম্বরে! এ পর্যন্ত দুটি বিশ্বকাপ জেতা হয়েছে। তবু আমার চোখ সামনের দিকে।

অবসর পেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে, শপিং করতে আর কফি খেতে ভালোবাসি সাইক্লিংয়ের এই রাজকন্যা দুর্দান্ত প্রতাপে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন নিশ্চয়ই! তার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment