সাক্ষাৎকার : দেশে যত চাকরি আছে তত লোক নেই

সাক্ষাৎকার : দেশে যত চাকরি আছে তত লোক নেই

  • লিডারশিপ ডেস্ক

অনলাইনে চাকরির যাবতীয় তথ্য সহায়তা নিয়ে ২০০০ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ব্যতিক্রমী ওয়েবসাইট বিডিজবস.কম। সাইটটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চাকরিপ্রার্থী লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর কাছে। অনলাইনে চাকরির যাবতীয় তথ্য সহায়তা দেয়া এ সাইটটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সফল ইন্টারনেট ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কিন্তু কীভাবে এত সফলতা লাভ করল এ সাইট? সফলতার পেছনের গল্পটাই বা কি? বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রতিষ্ঠাতা এ.কে.এম ফাহিম মাশরুরের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সেই সফলতার গল্প।

: বিডি জবস প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্প কি ছিল?
techtunes-tuneterview_fahim-mashrur_20131127_firstএ.কে.এম ফাহিম মাশরুর: আমার জন্ম ঢাকায় এবং ঢাকাতেই বড় হয়েছি। স্কুল ছিল মতিঝিল আইডিয়াল, কলেজ নটরডেম। তারপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স মাস্টার্স করি এবং আইবিএ থেকে এমবিএ করি। তারপর এক দেড় বছর চাকরি করি। প্রথম থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন কিছু করার। প্রচলিত কিছু আমাকে টানত না। তখন সারা বিশ্বেই ইন্টারনেটের একটা জাগরণ চলছিল। বাংলাদেশে তখন ইন্টারনেট শুধু তরুণরাই বেশি ব্যবহার করত। আমরা তিন-চার জন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম তরুণদের জন্য কিছু করার। তখন আমরা বিডিজবস (http://www.bdjobs.com) চালু করলাম। প্রথমে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট তেমন বেশি ছিল না এবং আমরা জানতাম যে এই কাজে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা ইনভেস্টমেন্টও সব একবারে না করে আস্তে আস্তে করি।

: প্রথম দিকে আপনাদের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করতেন?
ফাহিম মাশরুর: প্রথমে আমরা বিভিন্ন পেপার পত্রিকা থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে সাইটে দিতাম। পরে যখন সাইট অনেক জনপ্রিয় হয়ে যায় তখন আমরা কর্পোরেগুলোর কাছে গেলাম। প্রথমদিকে চাকরিদাতারা এখানে আসতে আগ্রহ দেখাতো না। কিন্তু ২/৩ বছরের মধ্যে সে সমস্যা দূর হয়ে গেল। এরপর আমরা ২০০৩-০৪ সালের দিকে তাদের কাছ থেকে রেভিনিউ চার্জ করতে শুরু করি। আমাদের পরিকল্পনাই ছিল ক্লাইন্টকে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দেব। এখনও ক্লাইন্ট আমাদের ভরসা করে। জব সাইট গুলোর মাঝে আমরাই এক নম্বরে আছি। আমরা যখন শুরু করি তখন ইন্টারনেট ইউজার মাত্র কয়েক লাখ ছিল। এখনতো কয়েক কোটি, মার্কেট এখন অনেক বড়। তাই এখন অনেক সুযোগ।

: বিডিজবসে প্রাথমিক বিনিয়োগ কেমন ছিল?
ফাহিম মাশরুর: ঘরের ড্রইংরুম থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছিল বিডিজবস ডটকমের। প্রথমে দু’তিনজন বন্ধু মিলে শুরু করেছিলাম। তখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছি। হাতে কোনো টাকা ছিল না। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তিনটি কম্পিউটার ধার করে শুরু করি বিডিজবসের যাত্রা। তবে মূল পুঁজি ছিল অফুরন্ত সময়। গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসা না করে সবচেয়ে মূল্যবান সময় ব্যয় করেছি এটি প্রতিষ্ঠার জন্য।

: প্রথম দিকে সাইট চালাতে গিয়ে কি কি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন?
ফাহিম মাশরুর: শুরুতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের চাকরির বিজ্ঞাপন দিত না। আমরাই পত্রিকা থেকে তাদের বিজ্ঞপ্তিগুলো সংগ্রহ করে বিনামূল্যে আপলোড করে দিতাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রচারণা চালাতাম। যদি প্রথম কিছু দিনের প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন, তবে বলতে হবে প্রথম কয়েক বছরের প্রতিবন্ধকতা। কেননা প্রথম দু’তিন বছর আমরা কেবল সমস্যা জয় করেই এগিয়েছি। অবশ্য প্রথম দিন থেকেই আমরা জানতাম, আমাদের লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। সে সঙ্গে এটিও জানতাম সফলতা আসবেই। ফলে কখনও হতাশা কাজ করেনি। বলতে পারেন ধৈর্য ধরে কাজ করে যাওয়ার মানসিক একটা প্রস্তুতি ছিল।

: বিডিজবসের টার্গেট কাস্টমার কারা এবং কি কি সেবা দিচ্ছে?
ফাহিম মাশরুর: বিডিজবসের কাস্টমার প্রধানত দেশে ও বিদেশে বিদ্যমান কর্পোরেট হাউজগুলো। চাকরির তথ্য দেয়ার পাশাপাশি বিডিজবস নানা প্রশিক্ষনমূলক সেবা দিয়ে যাচ্ছে ভিজিটর ও কর্পোরেট হাউজগুলোকে। বিডিজবস বর্তমানে যে সকল সেবা দিচ্ছে তা হলো – অনলাইন জব পোস্টিং সার্ভিস, হট জব অ্যানাউন্সমেন্ট সার্ভিস, কর্পোরেট মেম্বারশিপ সার্ভিস, অনলাইন সিভি ব্যাংক অ্যাকসেস, এক্সিকিউটিভ সার্চ সার্ভিস ইত্যাদি।

mhsohag-article-fahim-bhai: গতানুগতিক চাকরির পরিবর্তে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে কোন বিষয়গুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
ফাহিম মাশরুর: আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। সবসময় তাই করতে চেয়েছি, যা অন্যদের থেকে আলাদা। সে ক্ষেত্রে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানোর ইচ্ছা আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছে। কেউ সেটি করছে রাজনীতির মাধ্যমে, কেউ সামাজিক কাজের মাধ্যমে আবার কেউবা চিকিৎসার মাধ্যমে। আমি ইতিবাচক কিছু করতে চাইলাম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে। যেমন-সাধারণ মানুষের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সহজতর করা এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সেটিকে কাজে লাগানো। দেখুন, ঢাবির আইবিএ থেকে এমবিএ করে চাকরি পাওয়া ঠিক বিশেষ কিছু নয়। তবে আমি সবসময় অর্থপূর্ণ ও দেশের প্রয়োজনে বিশেষ কিছু করার তাগিদ অনুভব করেছি। উদ্যোক্তা হিসেবে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন হচ্ছে, আপনি এ ক্ষেত্রে অন্য যে কোনো ক্ষেত্রের চেয়ে সমাজে অধিক গুরুত্ব ও মূল্য যোগ করতে পারবেন।

: অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, এমন সাফল্যের মূলমন্ত্র কী?
ফাহিম মাশরুর: চিন্তার অভিনবত্ব, প্রচুর ধৈর্য এবং ‘জয় করতেই হবে’-এমন মানসিকতাই মূলত আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এ সময়ের অধিকাংশ উদ্যোক্তারই প্রধান সমস্যা, তারা রাতারাতি বড় হতে চায়। এ কথা মনে রাখা জরুরি যে, সাফল্যের কোনো শটকার্ট রাস্তা নেই। অন্যদিকে বিডিজবসের বর্তমান অবস্থানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমরা শুরু থেকেই তথ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন ছিলাম। আমরা জানতাম, ভালো সার্ভিস দিতে না পারলে কেউ আমাদের সাইটে আসবে না। আমরা ভিজিটরদেরও ক্লায়েন্ট মনে করি। কেননা তারা মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমাদের সাইট ভিজিট করেন। ফলে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব ছিল ভিজিটরদের চাহিদা পূরণ ও সেবার মান বাড়ানোর ওপর।

: দেশে অন্যান্য জব সাইট সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
ফাহিম মাশরুর: নতুন নতুন জব সাইট তৈরি হওয়ার এ বিষয়টিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। বাংলাদেশে এ ধারা তৈরি হওয়াও আনন্দের। তবে অধিকাংশ সাইটই বিডিজবসকে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজস্বতা হারিয়েছে। অভিনবত্ব ছিল না বলে অনেকেই কিন্তু টিকে থাকতে পারেনি। হ্যাঁ, আমরাও বিদেশি সাইটগুলোকে অনুসরণ করেছি, তবে তা বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে ইমপ্রোভাইজ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা এখন জোর দিয়েছি বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের ওপর। আমরা বিশ্বাস করি, বিষয়ভিত্তিক কর্মদক্ষতা গড়ে উঠলে চাকরির বাজারে কাউকে বসে থাকতে হবে না। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠানই এখন আমাদের এক্সপার্টদের সাহায্য নিচ্ছে।

: দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পথচলায় আপনার অভিজ্ঞতা নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
ফাহিম মাশরুর: সত্যিই এটি ছিল কঠিন এক পথচলা। রাতারাতি বড় হওয়ার পরিকল্পনা আমার কখনোই ছিল না। আর এ স্বপ্ন স্থায়ীও হয় না। কিছু লোক হয়তো এই শটকার্ট রাস্তায় বড় হয়ে ওঠে, তবে সুদূরপ্রসারী ফলাফল তাদের কখনই ভালো হয় না। অন্যদিকে জীবনে ব্যর্থতা ঠেকাতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে-সততা ও একনিষ্ঠতা। যারা বলেন, বাংলাদেশে সৎভাবে কিছু করা যায় না, আমি তাদের বিপক্ষে। অভিনবত্ব ও যোগ্যতা থাকলে দেশেই ভালো কিছু করা সম্ভব। তবে এ কথা সত্যি, বাংলাদেশে তরুণ উদ্যোক্তাদের খুব একটা উৎসাহ প্রদান করা হয় না। এমনকি পরিবারও তাদের সন্তানদের গতানুগতিক চাকরির বাইরে কিছু করতে দিতে চায় না। এমন অবস্থায় তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ, কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা, ধৈর্য, সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং হাল না ছাড়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা ধরা দেবেই।

: অনেকেই জবসাইটগুলোর উপর ইমেইল এড্রেস সেল করার অভিযোগ করে। তাছাড়া এখন ই-কমার্স আসার পর নিরাপত্তা আরেকটা চিন্তার বিষয় হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে আপনার মত?
Fahim-Mashroor_0ফাহিম মাশরুর: ইমেইল এড্রেস সেল করার কোনো অপশন আমাদের এখানে নাই। আমরা শুধু নিজেররাই আমাদের ডাটাবেস ব্যাবহার করি। আর পৃথিবীর সব জায়গায়ই ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতির ঘটনা আছে। কিন্তু আমাদের এখানে ট্রানজেকশনগুলো হয় গেটওয়ের মাধ্যমে। ই-কমার্স কোম্পানিগুলো কিন্তু সরাসরি কার্ডের ডাটা নিয়ে কাজ করে না, ব্রাক ব্যাংক বা ডাচ বাংলা ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়। ক্রেডিটকার্ড নিয়ে অন্যজন ব্যবহার করতে পারে বা অন্য কোনভাবে জালিয়াতি করতে পারে। এর জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত বিশ্বে ক্রেডিটকার্ড ইনসিওরেন্সের মতো জিনিস আছে। বাংলাদেশেও এরকম জিনিস আনা উচিৎ। যেকোনো জিনিস শুরু করলে রিস্ক আসবেই, সেগুলা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।

:
দীর্ঘ ১৫ বছরে অনেক জব সাইট আসলেও বিডিজবস এখনও সবার শীর্ষে থাকার রহস্য কি?
ফাহিম মাশরুর: আমরা প্রথম থেকেই কোয়ালিটি অব সার্ভিসের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কাস্টমার সন্তুষ্টি আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল। নানান সময় তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছি। ফলে এখানে বিশ্বাসযোগ্যতার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। দেশে আরও অনেক সাইট আছে কিন্তু তারা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আইডিয়া কপি করে। আমরাও করেছি কিন্তু তা স্থানীয়ভাবে কাস্টমাইজ করেছি। ফলে বাংলাদেশের মানুষের চাকরি সংক্রান্ত চাহিদা পূরণে সফল হয়েছে বিডিজবস। ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের সেরাটা সবসময় ধরে রাখতে পেরেছি।

: দীর্ঘ সময় সবচেয়ে বেশি কোন বিষয়ে জব পোস্ট হয়েছে এবং বেশি চাকরি হয়েছে কোন ক্ষেত্রে?
ফাহিম মাশরুর: এটা আসলে ডিপেন্ড করে ইন্ড্রাস্টির ওপর। গত ৮/১০ বছরে ব্যাংকিং, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং সরকারি চাকরিতে মানুষের বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। কিন্তু সেখানে বেশি চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু গার্মেন্টস এবং আইটি সেক্টরে চাকরির সুযোগ বেশি থাকলেও এখানে বেশি মানুষের আগ্রহ দেখা যায় না।

: যেখানে চাকরির চাহিদা বেশি সেখানে মানুষ যাচ্ছে না কেন?
ফাহিম মাশরুর: সচেতনতা ও স্কিলের অভাবে মানুষ সঠিক চাকরির ক্ষেত্রে যেতে পারছে না। সত্যিকথা বলতে কি, দেশে যত চাকরি আছে তত লোক নেই। বাংলাদেশে চাকরির লোকের অভাব বলে এখন বিদেশ থেকে অনেকেই লোক নিয়ে আসছেন। শুধু ভারত থেকেই ৫ লক্ষ মানুষ হায়ার করে আনা হয়েছে। এছাড়া শ্রীলংকাসহ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের মানুষের কর্মস্থল এখন বাংলাদেশে। লোকাল প্রফেশনালদের দক্ষ করার প্রধান দায়িত্ব একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। ইন্ড্রাস্টি যা চায় তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিতে পারছে না। ফলে আমাদের নিজস্ব জব মার্কেট অন্যদের দখলে চলে যাচ্ছে।

: বিডিজবসে প্রতিমাসে কি পরিমাণ জব পোস্ট হয় এবং সাকসেস রেটিং কত?
ফাহিম মাশরুর: বিডিজবসে এখন প্রতিমাসে প্রায় ১০ হাজার নতুন জব পোস্ট হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোট প্রায় ৭/৮ লাখ জব পোস্ট হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ জবের নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশের সকল মূলধারার প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯০ শতাংশই নিয়োগ হচ্ছে বিডিজবসের মাধ্যমে। আমরা দেশের নিয়োগ পদ্ধতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পেরেছি। আগে একটি নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২/৩ মাস লাগতো আর এখন তা ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাচ্ছে। ১০ বছর আগে নিয়োগ পদ্ধতি ছিল পেপার বেজ। আর এখন তা অটোমেশন হয়েছে। জব অ্যাপ্লাই এখন অনলাইনে হচ্ছে। বিজ্ঞাপন খরচ কমেছে।

bdjobs: বিডিজবসের ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল সম্পর্কে বলুন।
ফাহিম মাশরুর: আমরা প্রতি বছর ১০/১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি সেমিনার করে থাকি। এ বছরেও ৮টি ক্যাম্পাসে ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রার্থীরা যাদের চাকরির অভিজ্ঞতা নেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। চাকরির প্রস্তুতি সম্পর্কে তাদের ধারণা দিচ্ছি। এছাড়া গত ৬ বছর ধরে বিভিন্ন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যালে নিয়ে যাচ্ছি। তারা তাৎক্ষণিক পছন্দ অনুযায়ী সেখান থেকে চাকরি দিচ্ছেন।

: আজকের ডিল সম্পর্কে বলুন।
ফাহিম মাশরুর: আজকের ডিল.কম নামের ই-কমার্স সাইট আমরা বিডিজবসের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা করেছি। যদিও এটি এখন আলাদা ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। আগামী দিনে অতি দ্রুত মানুষ ই-কমার্স ও শপিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। সে লক্ষ্যে আমাদের সাইটে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ভ্রমণ, ইন্টারনেট সেবা, কম্পিউটার ল্যাপটপ, ফ্যাশন সামগ্রীসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ আকর্ষণীয় অফার ও ডিল প্রতিনিয়ত সংযোজিত করা হয়। ওয়েবসাইটটিতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর আকর্ষণীয় সব অফারের তথ্য পাওয়া যায়। ক্রেতারা নিয়মিত এই সাইটের মাধ্যমে ক্যাটাগরি অনুযায়ী তাদের চাহিদামাফিক পণ্যের ওপর বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার বা ডিসকাউন্টের তথ্য পাচ্ছেন এবং খুব সহজেই হ্রাসকৃত মূল্যে সেসব পণ্য ক্রয় এবং সেবা গ্রহণ করতেও পারছেন।

: স্বস্তি সম্পর্কে বলুন।
ফাহিম মাশরুর: দেশের সব মানুষের ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার হওয়ার সুযোগ নেই। তাই বিডিজবস প্রধানত দেশের অল্প আয়ের মানুষদের জন্য স্বস্তি নামে একটি সেবা চালু করেছে। এর মাধ্যমে বস্তির একজন সাধারণ মানুষ যখন তখন টাকার প্রয়োজনে আমাদের কাছে রিকুয়েস্ট পাঠাতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিক টাকা পেয়ে যাবেন। এ জন্য যে কোন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট থাকলেই হবে। এটি আমরা একটি লোকাল এনজিও-এর মাধ্যমে পরিচালনা করছি। সম্প্রতি আজকের ডিলের মতো এটাকেও আলাদা ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।

: বিডিজবসে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানির বিনিয়োগ সম্পর্কে বলুন।
ফাহিম মাশরুর: অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি সিক গত বছর এপ্রিলে বিডিজবস ডটকমের ২৫% শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে, যার মূল্যমান ২০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। চাকরিদাতা এবং চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিডিজবসের সেবার পরিসর বাড়াতে সিক সাহায্য করবে। সিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জব পোর্টালগুলোর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। চীনে তারা এক নম্বর জব প্ল্যাটফর্ম। ইতোমধ্যে সিকের বিভিন্ন দেশের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশে কাজে লাগানো হচ্ছে।

: বিডিজবসের সবচেয়ে বড় সাফল্য কোনটি?
ফাহিম মাশরুর: নতুন কোন লোকের সাথে পরিচয় হওয়ার পর যখন বলে সে বিডিজবসের মাধ্যমে প্রথম চাকরিটি পেয়েছে তখন আমার ভেতরে অন্যরকম অনুভূতি হয়। এটাই আমার কাছে মনে সবচেয়ে বড় অর্জন।

: বাংলাদেশে জব মার্কেটের অবস্থা কি?
ফাহিম মাশরুর: বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ লক্ষ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী শ্রম বাজারে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ২ দুই থেকে আড়াই লাখ গ্রাজুয়েড ঢুকছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ গ্রাজুয়েড বের হচ্ছে তার ৫০ শতাংশ মানুষের চাকরি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিৎ। কিন্তু তা হচ্ছে না।

: কর্মসংস্থানের সরকার কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে?
ফাহিম মাশরুর: সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো রাখা। প্রাইভেট কোম্পানির ব্যবসা ভালো হলে সেখানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সবাইকে যদি সরকার এ প্লাস দেওয়ার পলিসি করে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে না। এই পলিসি পরিবর্তন না করলে মানুষের মূল ভিত মজবুত হবে না। তেল এবং জল একসাথে মেশানো যাবে না। এসব বিষয়ে সরকার সচেতন হলে চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করা সহজ হবে।

সূত্র: প্রিয় ডটকমfavicon59

Sharing is caring!

1 Comment on this Post

  1. Awesome! Amazing article, I am going to share this blog immediately, it’s really useful, Thank you.

    Reply

Leave a Comment